• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৬:৪৪ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামের সীমান্ত ঘেষা নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ী ধংসের পথে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৮

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি॥
কুড়িগ্রাম জেলার  ফুলবাড়ী উপজেলায় সীমান্ত ঘেষা  নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ী । অবিভক্ত ভারত বর্ষে অনেক আগে নাওডাঙ্গা পরগনার জমিদার বাহুদুর শ্রী যুক্ত বাবু প্রমদা রঞ্জন বকসী এটি নির্মাণ করেন। তার শাসন আমলে এই পরগণার অধিন বিদ্যাবাগি ,শিমুলবাড়ী, তালুকশিমুলবাড়ী, রসুন শিমুলবাড়ী, কবিরমামুদ প্রভৃতি জায়গায় শান্তির সুবাতাস ছিল। রাজারহাটে পাঙ্গা এলাকায় বাবু প্রমদা রঞ্জন বকসীর আর একটি জোত ছিল । এটি দেখাশুনারসহ পূর্ন পরিচালনার ভার ন্যস্ত ছিল যুক্ত বাবু বসীর উপর। কুমার বাহাদুর বীরেশ্বর প্রসাদ বসী, বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ও বিপুলেম্বর প্রসাদন বকসী এ ৩ জন জমিদার ছেলেন। মেয়ে ছিল পুটু। বিয়ে হয় রংপুর মীরবাগের জমিদারের সাথে। তার প্রথম পুত্র বীরেশ্বর প্রসাদ বকসী পাশ্চত্যে পড়ালেখা করে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে কলকাতায় আইন পেশায় কর্মময় জীবন আরাম্ভ করেন। সে একজন ন্যয় বিচারক ছিলেন। তৃতীয় পুত্র বিপুলেম্বর প্রসাদন বকসী ছিলেন প্রকৌশলী। দ্বিতীয় পুত্র বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসীর হাতে জমিদারী ভার ন্যস্ত করে জমিদার প্রমদা রঞ্জন অবসর নেন। কথিত আছে, পরবর্তী জমিদার জমিদারী ভার গ্রহণ করার আগে তৎকালীণ সময়ে পর পর তিন বার প্রবেশিকা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন। তার পিতা জমিদার প্রমদা রঞ্জন বকসী তার পুত্রকে বলেন, তোমার ভাগ্য ভাল তাই। অনেক ভাগ্য গুনে তুমি আমার সন্তান হিসেবে জন্ম নিয়েছ। বাকিরা যেহেতু পড়ালেখা শিখে অন্য কিছু হতে চায় সেহেতু তোমাকেই আমি আমার জমিদারী ভার দিতে চাই। পরে তাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সে আমলে সেখানে তিনি একটি মাইনর স্কুল গড়ে দেন। সেটি এখন নাওডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিতি। পাশে রয়েছে নাওডাঙ্গা স্কুল এন্ড কলেজ। শিক্ষার পাশাপাশি শিল্প সংস্কৃতির প্রতি জমিদার বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ছিলেন অনুরাগী। ভগোবান কৃষেœর পূর্ণ জন্ম তিথি প্রতি দোল পূর্ণিমায় বাড়ীর সামনে বিস্তৃর্ন ফাকা মাঠে দোলের মেলা বসত। দোলসওয়ারীরা বাহারি সাজে সজ্জিত হয়ে সিংহাসন নিয়ে এই দোলের মেলায় অংশগ্রহণ করত। যা এখনও বর্তমান। ১৩০৪ খ্রিঃ সনের ভূমিকম্পের পরে অন্য দুই ভাই কুচবিহারে স্থায়ী বসবাসের জন্য একটি বাড়ী ক্রয় করেন। জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ার পর সব কিছু ছেড়ে ভারতে চলে যান। জমিদার বাড়ির গোমস্থাগঙ্গাধর বর্মন এর নাতি রমেশ চন্দ্র বর্মন (৮৬) বলেন এসব কথা। তিনি বলে ঠাকুরদার নিকট থেকে শুনেছি এসব কথা। সূত্র অনুযায়ী তার পিতার মৃত্যুর পর জমিদার বিশ্বেস্বর প্রসাদ বকসী ও তার বংশধররা শ্রদ্ধানুষ্ঠা উপলক্ষ্যে সর্বশেষ এসেছিলেন নিজের বাড়ীটাকে শেষ দেখা দেখতে। সেই শেষ। আর কেউ কখনও নাওডাঙ্গায় আসেন নি। আট দেয়াল বিশিষ্ট শিবমন্দিরটির উচ্চতা ৩০ফুট ব্যাস ২০ ফুট ও মন্দিরের ভিতরের ব্যাস ১২ফুট । জমিদারের আমলে শিব মন্দিরে পূজা হত খুবেই জাকজমকপূর্ণ ভাবে। শিব মন্দির সংলগ্ন একটি দিঘি। পশ্চিমে রয়েছে আরও একটি দিঘি।বর্তমান ভারত সীমান্তের কোল ঘেষা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা সদর থেকে পশ্চিম উত্তর কোণে প্রায় ৭ কি.মি দুরে প্রকৃতির অবয়ব নিয়ে কালের স্বাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ী। জমিদার, জমিদারী শসন, প্রজা, গোমস্থা বিহীন সেটি এখন অরক্ষিত। বেহাত হয়ে গেছে অনেক সম্পদ। ইট, চুন সুড়কির নিপুন গাথুনির বিল্ডিং গুলো এখনও আমাদের মনে করিয়ে দেয়। জমিদার চলে যাওয়ার পর কতিপয় অসাধু ব্যক্তিরা দেয়াল গুলো ভেঙ্গে ইট, লোহার বিম, খুলে নিয়ে গেছে। এগুলোকে আশ্রয় করে বেড়ে উঠেছে কিছু অপ্রয়োজনীয় উদ্ভিদ।  স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাজার বসিয়েছেন জমিদার বাড়ীর সামনের দোলের মেলার জন্য নির্ধারিত স্থানে। স্থানীয়রা চাঁদা তুলে জমিদার বাড়ীর ভিতরে এক কোনায় দুর্গা মন্দির নির্মাণ করে পূজা অর্চনা করেন। সব মিলিয়ে নাওডাঙ্গা জমিদার বাড়ীর ঐতিহ্য এখন বিলুপ্তির পথে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page