• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:১০ অপরাহ্ন

এলাকা গোছাতে সময় মাত্র ১৯ দিন

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোতে যারা নিজ সংসদীয় আসনে যাতায়াত করেননি, নিজ দল বা জোট সংগঠিত করেননি, দল-জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থক ও সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা তৈরী করেননি- তাদের জন্য এবারের ভোট বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে, যারা দলের রাজনীতিতেও সম্পৃক্ত ছিলেন না, কিন্তু কোনো কারণে অনেকটা হঠাত্ দল-জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন তাদের জন্য নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া এবার দুষ্কর হতে পারে। কারণ, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত সিডিউল অনুযায়ী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্ধ দেওয়া হবে আগামী ১০ ডিসেম্বর। সেইদিন থেকে ৩০ ডিসেম্বর ভোট গ্রহণের আগে ২৮ ডিসেম্বর রাত ১২টা পর্যন্ত তারা নির্বাচনী প্রচারণার সুযোগ পাবেন। কার্যত এই ১৯দিনের মধ্যেই নতুন প্রার্থীদের এলাকা গোছাতে হবে। এই স্বল্প সময়ে এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী, ভোটার ও স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে পরিচিত হওয়া এবং দল-জোট গুছিয়ে ভোটের ফল নিজ ঘরে নেওয়া কতটা সম্ভব- এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক দল-জোটগুলোতে।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২৫০টির বেশি আসনে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে। এই তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাদের মধ্যে অন্তত ৫৩ জনই জাতীয় নির্বাচনের মাঠে নতুন মুখ। বিএনপি ২৮০টির অধিক আসনে প্রায় ৮০০ জনকে দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছে, এরমধ্যে তিন শতাধিকই প্রায় নতুন মুখ। এদের অতীতে কখনও সংসদ নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা নেই। এইচএম এরশাদের জাতীয় পার্টি প্রায় ২০০ আসনে দলীয় মনোনয়ন দিলেও এর অর্ধেকেরও বেশি জনের কোনো নির্বাচনেরই অভিজ্ঞতা নেই। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, বিকল্পধারার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক বাম জোটের বেশিরভাগ শরিক দল থেকে যাদের দলীয় বা জোটগত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া বাকিরা গত পাঁচ বছরে কতবার নিজ এলাকায় যাতায়াত করেছেন সেটির হিসাব সহজেই হাতের কর গুনে বের করা সম্ভব।

জাতীয় নির্বাচনে একাধিকবার সরাসরি অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দীর্ঘসময় রাজনীতিতে যুক্ত এমন অনেকের মতে, রাজনীতিতে নিয়মিত সক্রিয় থাকা এবং বারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে যারা বছরজুড়ে এলাকায় যাতায়াত করেন, সুখে-দুঃখে এলাকাবাসীর পাশে থাকার চেষ্টা করেন এবং নানা কাঠখড় পুড়িয়ে এলাকায় রাজনীতিতে টিকে থাকেন তাদেরই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোটে পার হয়ে আসতে হিমশিম খেতে হয়। সেখানে যারা এলাকায় যাননি, ভোটের রসায়ণ জানেন না, ভোটার ও এলাকাবাসীর সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই- তারা কোন যাদুকরী কায়দায় বৈতরণী পার হবেন এটা কোটি টাকার প্রশ্ন। যেখানে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্য রেখে পাঁচ বছরেও এলাকা গোছাতে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে, সেখানে একেবারে নতুন প্রার্থীরা মাত্র ১৯দিনে কীভাবে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন? তাছাড়া যারা রাজনীতিতেই সম্পৃক্ত ছিলেন না, নির্বাচন করবেন বলে এলাকার মানুষও কখনও আগে থেকে জানতেন না তারা মনোনয়নই পেয়েছেন কোন মানদ্লে সেই প্রশ্নও উঠতে পারে।

শুধু নতুন বা হঠাত্ প্রার্থীই নয়, আওয়ামী লীগ অন্তত ১৭টি আসনে দুইজনকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে কয়েকটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপি তো কয়েকটি ছাড়া প্রায় প্রতিটি আসনেই অন্তত দুই জন, কোনো আসনে তিনজন, কোনো কোনো আসনে চারজনকেও দলীয় মনোনয়নের চিঠি দিয়েছে। এসব আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় মনোনয়নের প্রত্যয়নপত্র-প্রাপ্তরা পড়েছেন ধন্দে। কে মূল প্রার্থী, কে বিকল্প প্রার্থী বোঝা দায়। তাছাড়া স্থানীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা পড়েছেন দোটানায়। তারা কোন প্রার্থীর পক্ষে থাকবেন এনিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকতে পারে, কেউ দ্লিত থাকার কারণে নির্বাচন করতে পারবেন না, কেউ ঋণ বা বিলখেলাপি হতে পারেন। এই আশঙ্কা থেকে একাধিকজনকে দলীয় মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে। দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র নির্বাচন কমিশন ২ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাই করার পর আসনগুলোতে মূল প্রার্থী নির্ধারণ করা হবে। আর যেহেতু প্রায় প্রত্যেকের কাছ থেকেই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পত্রেও স্বাক্ষর নিয়ে রাখা হয়েছে সেজন্য যারা চূড়ান্তভাবে দলীয় মনোনয়ন বা প্রতীক পাবেন না, তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। ২ ডিসেম্বরের পর এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এনিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি কেটে যাবে বলে মনে করছে প্রধান দুই দল।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page