• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ১১:৫১ অপরাহ্ন

সোনাগাজীতে ফসলি জমির মাটি যাচ্ছে ইট ভাটায়

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০১৯

সোনাগাজী(ফেনী) প্রতিনিধি॥
সোনাগাজীর বিভিন্নস্থানে ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এতে জমির উর্বরতা লোপ পাওয়াসহ জমি হারিয়ে ফেলছে তার স্বাভাবিক উৎপাদন ক্ষমতা।কৃষকদের অভাবের সুযোগে ইটভাটা মালিকদের সৃষ্ট একটি চক্র এসব মাটি কিনে নিয়ে ইট তৈরিতে ব্যাবহার করছে।কৃষি উপজেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, মাটির উপরিভাগের ১০-১৫ ইঞ্চির মধ্যে উর্বরতা শক্তি থাকে। তাই এসব মাটি খুঁড়ে বিক্রি করার ফলে পুনরায় শক্তি ফিরে আসতে ১০-১৫ বছর সময় লাগে। আর বারবার তা খোঁড়া হলে এসব জমি ফসল উৎপাদনে স্থায়ীভাবে একেবারে অক্ষম হয়ে পড়তে পারে।
কৃষি জমি থেকে এভাবে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য যে পুষ্টির প্রয়োজন তা সাধারণত মাটির উপরিভাগে থাকে। যা উদ্ভিদ বা ফসলের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। কিন্তু জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়ার ফলে জমি থেকে এসব পদার্থ চলে যাচ্ছে ইট ভাটায়। যা ফসলের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের বিভিন্নস্থানে আবাদি জমি ভাড়া অথবা ক্রয় করে গড়ে উঠেছে ৫টি ইটভাটা। আর এসব ইটভাটার জন্য পার্শ্ববর্তী জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। জমির মালিকরা তাদের জমির মাটির গুণাগুণ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও অধিক মুনাফা লাভের আশায় ভাটা মালিকদের কাছে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন।মাটি বিক্রি করেছেন এমন চার-পাঁচজন কৃষক জানান, ইটভাটায় মাটি সরবরাহের জন্য একশ্রেণির দালাল চক্র গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষকদের মাটি বিক্রি করতে উৎসাহ জোগায় এবং স্বল্পমূল্যে উপরিভাগের এসব মাটি কেটে কিনে নেয়। দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির কথা না জেনে সহজ-সরল কৃষকেরা নগদ লাভের আশায় জমির মাটি বিক্রি করেন।
সরজমিনে সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়নের স¦রাজপুর,মিয়াবাজার,চর ছান্দিয়া ইউনিয়নের পুরাতন সওদাগরহাট,জমাদার বাজার,রসুলপুর,আমিরাবাদ ইউনিয়নের মুহুরি প্রজেক্ট, , চরদরবেশ ইউনয়নের আদর্শগ্রাম,৮নং স্লুইজ গেট,বগাদানা ইউপির কাজিরহাট,নবাবপুর ইউপির মজুপুর,সদর ইউপির চরখন্দকার,সুজাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে ইটের ভাটায় ব্যবহারের জন্য এক্সেলেটর মেশিন দিয়ে দেদারছে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি।ফসলি জমির মাটিকাটার এক শ্রমিক জানান, আমরা ভাড়ায় মাটি কাটি।এ মাটি ইটের ভাটার জন্য নেয়া হবে।ফসলি জমির মাটি বিক্রি বন্ধ করতে সোনাগাজী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার অভিযান চালিয়েও প্রভাবশালী চক্রের কারনে মাটি বিক্রি বন্ধ করতে পারছেনা।গত মঙ্গলবার(৮ জানুয়ারি) চরছান্দিয়া ইউপির রসুলপুরে মাটি বিক্রির সাথে জড়িত ১৮টি ট্রাক্টর আটক করে প্রশাসনের নিকট হস্তান্তর করে স্থানীয় চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন।একইদিন সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশ সদর ইউপির সুজাপুর গ্রাম থেকে ফসলি জমির মাটি ইটভাটায় নেওয়ার সময় একটি ট্রাক্টর আটক করে।বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসন আমিরাবাদ ইউপর মুহুরি প্রজেক্ট এলাকায় ফসলি জমির মাটির কাটার খবর পেয়ে অভিযান চালালে শ্রমিকরা পালিয়ে যায়।
সোনাগাজীর সচেতন মহলের দাবি, ফসলি জমিতে ইট ভাটা তৈরি বন্ধ বা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় না এনে এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে উপজেলার কোনো জমিতে ফসল উৎপাদন তো দূরের কথা এ অঞ্চল বিরান ভূমিতে পরিণত হবে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ উৎকোচ ও রাজনৈতিক প্রভাবে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইটভাটা গড়া হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের ক্ষতি করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিকার করা হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার জানান, কৃষি জমি থেকে এভাবে ইট তৈরির মাটি সংগ্রহ ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।অচিরেই এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো সোহেল পারভেজ জানান, কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি করা আইনগত দন্ডনীয় অপরাধ।মাটি বিক্রি বন্ধ করতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে।মাটি বহন করায় বেশ কয়েকটি ট্রাক্টর জব্দ করা হয়েছে।কৃষি জমির মাটি যেন বিক্রি করতে না পারে তার জন্য অভিযান অব্যহত থাকবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page