আজ ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের গণহত্যার একবছর।আত্মরক্ষার নামে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষদের নির্বিচারে গণহত্যাকে বৈধতা দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া-খ্যাত দখলদার বাহিনী ইসরাইল।গাজা উপত্যকার বাসিন্দাদের ওপর নির্যাতন, নিপীড়ন আর নিষ্পেষণের মাত্রা যেন সমস্ত সীমা অতিক্রম করেছে।ইসরাইলি হামলায় মৃত্যুর মিছিল থামছে না,বিশেষ করে নারী ও অবুঝ শিশু হত্যা ইসরাইলিদের নিকট সকল উৎসবের ন্যায়!প্রতিদিন চলছে নির্মম ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট আর বোমা হামলা।
ইসরাইলি বাহিনী এতটাই নির্মম ও অমানবিক যে শরণার্থী শিবির এবং হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দিতে পারে! বাদ যায় নি মসজিদ, স্কুল। নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে গ্রাম থেকে শহর।ইসরাইলের ভয়ংকর আগ্রাসনে দৃশ্য না দেখলে বোঝা দায়।
গাজায় হামাস নিধনের নামে তথাকথিত সামরিক অভিযান চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৪২ হাজার নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে নেতানিয়াহু সরকার। ঘরছাড়া হয়েছেন গাজার প্রায় সব মানুষ।
ইসরাইলের এ ন্যক্কারজনক হামলার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ফিলিস্তিন-পন্থি মানুষ। রাস্তায় নেমেছেন গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে। হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা আর মুখে মুক্তির স্লোগান। মুক্তি চায় ইসরাইলের শেকল থেকে।
সারা বিশ্বের মানুষ ফুসে উঠেছে,ইসরাইলে অস্ত্র পাঠানো বন্ধের দাবিতে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মার্কিন দূতাবাসের বাইরে জড়ো হয়েছেন এক হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিন-পন্থি বিক্ষোভকারী।দক্ষিণ আফ্রিকায় “ইসরাইল একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্র” এবং “আমরা সবাই ফিলিস্তিনি হতে চাই” স্লোগানে মুখরিত হয়ে শতশত নাগরিক রাস্তায় নেমেছে।বিক্ষোভকারীরা বলেন, আমরা বিশ্বের সব নেতাকে জেগে ওঠার এবং ইসরাইলের নিপীড়ন থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এই আগ্রাসন এখন আর ধর্মীয় ইস্যু নয়, সত্যিকার অর্থে একটি মানবিক ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে ইউরোপীয় দেশসমূহে। ইতালির রাজধানী রোমে ফিলিস্তিন-পন্থি বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও জল কামান ব্যবহার করেছে। ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি লেবানন’ স্লোগান দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করেছেন শহরটিতে।তবে সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অন্তত ৩০ সদস্য ও তিন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
ফ্রান্সের প্যারিস,লিয়ন,তুলুজ ও স্ট্রাসবুর্গে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ নিয়ে রাস্তায় নেমেছে।তারা ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়েছে।বিক্ষোভকারীদের অনেকেই আঞ্চলিক যুদ্ধের আশংকা করছে।কারন এ মুহূর্তে সম্ভবত ইরাক ও ইয়েমেনের সাথে উত্তেজনা বিরাজ করছে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই হামলা বন্ধে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা বন্ধে গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমাবেশ হয়েছে লন্ডনে। প্রায় ৪০ হাজার ফিলিস্তিন-পন্থি বিক্ষোভকারী সেন্ট্রাল লন্ডনে মিছিল করেছেন।লন্ডনে বিক্ষোভকারী অ্যাগনেস কোরি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের সদিচ্ছা সত্ত্বেও ইসরাইলি সরকার থামছে না। তারা গাজায় নৃশংসতা অব্যাহত রেখেছে। এখন লেবানন, ইয়েমেন এবং সম্ভবত ইরানের দিকেও এগোবে তারা।আর আমাদের সরকার, আমাদের ব্রিটিশ সরকার দুর্ভাগ্যজনকভাবে শুধু মুখের কথা বলছে এবং ইসরাইলকে অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে যা মোটেও শোভনীয় নয়। সত্যিই যুদ্ধ বন্ধ করা দরকার। কারণ এটি এখন অসহনীয় হয়ে উঠেছে।
স্পেনের শহর মাদ্রিদে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন। এ সময় তারা ‘ইসরাইলকে বয়কট কর’ লেখা সম্বলিত প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
খোদ ইসরাইলকে সহায়তাকারী দেশ আমেরিকাতে বিক্ষোভ ছড়িয়েছে। ইসরাইলি অস্ত্র ও সহায়তা সরবরাহ বন্ধের দাবিতে শনিবার হোয়াইট হাউসের বাইরে এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন।
গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে ফিলিপাইনের ম্যানিলায় বেশ কয়েক ডজন বামপন্থি কর্মী মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করেছেন। তবে এ বিক্ষোভে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ।এছাড়া ভেনিজুয়েলার কারাকাসে প্রচুর মানুষ “গণহত্যা” বন্ধের আহবান জানিয়ে বিক্ষোভ করেছে এবং জাতিসংঘের বরারর একটি পিটিশন দায়ের করেছে।
জার্মানির উত্তরাঞ্চলের শহর হামবুর্গে অন্তত এক হাজার মানুষ ফিলিস্তিনে হামলার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে, ‘’ গণহত্যা বন্ধ কর’ বলে স্লোগান দেয়।
ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছেন বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা কিস্টোন-এটিএস নিউজ এজেন্সি।
এশিয়া,ইউরোপ, আফ্রিকা , অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকা সহ বিভিন্ন দেশে শহর গুলোতে আরও সমাবেশ ও মোমবাতি মিছিলের পরিকল্পনা করা হয়েছে