ভারতীয় হাইকমিশনার মি. হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আজ রবিবার দুপুরে পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া পৌরসভায় ১১টি সুপেয় পানি শোধনাগার নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেছেন। এসময় পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু উপস্থিত ছিলেন। ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ভারতের অনুদানে ওই শোধনাগারগুলো নির্মাণ হচ্ছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে এদেশে ভারতীয় অনুদানে যেসব উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর করেন তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এ শোধনাগার নির্মাণ। রবিবার দুপুরে ঢাকা থেকে ভারতীয় হাই কমিশনার হেলিকপ্টারযোগে ভাণ্ডারিয়ায় আসেন এবং এ নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর স্থানীয় মজিদা বেগম মহিলা কলেজ প্রাঙ্গণে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে শ্রিংলা বলেন, ভারত-বাংলাদেশে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে যা আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে মূল্যবান ও উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর একটি। গত ৫ বছরে ভারত সরকার বাংলাদেশে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ২৪টি প্রকল্প সম্পন্ন করেছে। আমি আন্তরিকভাবে আশা করছি যে এই ক্ষুদ্র অবদান বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুদের জীবনে একটি গুণগত পরিবর্তন আনবে। এর প্রেক্ষিতে আজ আমরা ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ১১টি জল শোধনাগার স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করছি। আমরা খুবই গর্বিত যে এই জল পরিশোধন প্রকল্পগুলো ভাণ্ডারিয়া এবং এর নিকটবর্তী পৌরসভার দেড় লাখ মানুষকে বিশুদ্ধ ও মিষ্টি পানীয় জল সরবরাহ করবে।
‘প্রকল্পটির কাজ দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভাণ্ডারিয়া পৌরসভাকে আগাম ২ কোটি ২০ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছিলো’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ প্রকল্পের আওতায় আনুমানিক ৬শ’ ফুট গভীরতা সম্পন্ন ১১টি নলকূপ স্থাপন করা হবে। পরিশোধিত জল ১১টি এলাকার প্রতিটিতে ৪০ হাজার লিটার করে বৃহৎ ট্যাংকে সংরক্ষণের জন্য তোলা হবে। পান উপযোগী করার জন্য প্রতিটি জল শোধনাগারে জল থেকে ভারী ধাতু, আর্সেনিক ও লবণাক্ততা অপসারণ করা হবে। প্রকল্পের কাজ আগামী ৯ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, যদিও ভারত সরকার জল শোধনাগারগুলি স্থাপনে সহযোগিতা করছে তবে তার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর। যার উদ্যোগে প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়েছে ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। মাননীয় মন্ত্রী ভারত ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক দৃঢ় সমর্থক। মাননীয় মন্ত্রীকে তার প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান হাইকমিশনার।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘আমাদের বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারত ভাণ্ডারিয়ায় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য আজ যে প্রকল্পের সূচনা করলো তার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে আমি মাননীয় হাই কমিশনার শ্রিংলাকে ধন্যবাদ জানাই। এ এলাকার মানুষ এই প্রকল্পের সুফল হিসেবে লবণাক্ত ও আর্সেনিক মুক্ত সুপেয় পানি পানের সুফল পাবে। যা এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের জন্য কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে। ভাণ্ডারিয়াবাসী সবসময় শান্তি-শৃঙ্খলার মধ্যে বসবাস করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানকার জনগণ ঔপনিবেশিক ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। ক্ষুদ্র স্বার্থ, গতানুগতিক মানসিকতা এবং বিভাজনের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে গত ৩২ বছরে আমরা এখানে একটি সুস্থ ধারার সমাজ ব্যবস্থা স্থাপনে সচেষ্ট। সকল সরকারের সময়ই ভাণ্ডারিয়ার মানুষ উন্নয়ন সহযোগিতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। এখানে নিরাপত্তা ক্ষেত্রে কোনো শঙ্কার কারণ নেই। আগামী নির্বাচনে ভাণ্ডারিয়া-কাউখালী-ইন্দুরকানী সংসদীয় এলাকার জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে যোগ্য প্রতিনিধি নির্বাচিত করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।’
পিরোজপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন মহারাজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক মো. খায়রুল আলম শেখ, পুলিশ সুপার মো. সালাম কবির, উপজেলা চেয়ারম্যান আতিকুল ইসলাম উজ্জল তালুকদার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভাণ্ডারিয়া পৌর প্রশাসক শাহীন আক্তার সুমী, উপজেলা জেপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর গোলাম সরওয়ার জমাদ্দার, জেপি’র উপজেলা সদস্য সচিব ও ধাওয়া ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু, আওয়ামী লীগ নেতা হাফিজুর রশিদ তারেক ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কিরন চন্দ্র বসু।
এসময় মঞ্চে ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ইত্তেফাকের প্রকাশক তারিন হোসেন, ভারতীয় দূতাবাসের ফার্স্ট সেক্রেটারি নবনিতা চক্রবর্তী, প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান আয়ন এক্সচেঞ্জের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমজে শেখ, উপজেলা জেপি’র আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনি জমাদ্দার প্রমুখ।