• শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:১৯ অপরাহ্ন

মেঘনা কূলে মূর্তিমান এক আতঙ্কের নাম ‘কানা জহির’

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
মোঃ জহির ইসলাম ওরফে ‘কানা জহির’

প্রকৃত নাম মো. জহির ইসলাম হলেও ‘কানা জহির’ নামে পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে তার। মুন্সীগঞ্জে তাকে এ নামটিতে একডাকে চেনেন সবাই। মেঘনা কূলের বাসিন্দাদের কাছে ‘কানা জহির’ হচ্ছেন মূর্তিমান আতঙ্ক, বলছে স্থানীয় প্রশাসন।

জানা যায়, জহির মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের মাহমুদ মিয়ার ছেলে। মেঘনা নদীতে বাল্কহেড থেকে বিট তোলার মধ্য দিয়ে উত্থান হলেও এখন নদী পথে প্রত্যেকটি অপকর্মের সাথে জড়িত এই কানা জহিরের নাম।

মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম সাইফুল আলম বলেন, “কানা জহির একজন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সরদার। তার বিরুদ্ধে গজারিয়া, ষাটনল, মতলব উত্তর, চাঁদপুর ও লৌহজংয়ে ১৫টি মামলা রয়েছে। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ায় তাকে গ্রেপ্তার করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা যে কোনো উপায়ে তাকে গ্রেপ্তার করব।”

কথিত আছে, রাতে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন জহির। তিনি একা নন, তার একটি বাহিনী রয়েছে। জহির ও তার ছোট ভাই এবং বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরা নদীপথে সকল ধরনের অপকর্ম পরিচালনা করে। রাতের বেলা মাদক, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, চলন্ত নৌযানে ডাকাতি করে। এছাড়া বিভিন্ন চরে গরু চুরি, ডাকাতি থেকে শুরু করে নানা রকমের অন্যায়-অত্যাচার চালায় এরা।

জহিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে তার আপন ভাই আঙ্গুল কাটা শাহিন। সশস্ত্র শাহিন ও জহির ডাকাত দিনের বেলা অবস্থান করে কালিরচর আশপাশের কয়েকটি চরে। বকচর থেকে কালিরচর পর্যন্ত শাহিনের ও কালিরচর থেকে নাসিরাচর ও মোহনপুর জহিরের নিয়ন্ত্রনে।

গত ১৯ ডিসেম্বর রাতে কানা জহির চাঁদপুরের মেঘনা নদীর মোহনপুর এলাকায় তার দলবল দিয়ে ডাকাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে খবর পেয়ে চাঁদপুরের নৌ পুলিশ ও কোস্টগার্ড অভিযান চালায় ওই এলাকায়। এ সময় ডাকাত জহিরের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলি বিনিময় হয়। একপর্যায়ে জহির অস্ত্র, স্পিডবোট এবং গোলা বারুদ রেখে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পলায়ন করে। পরে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

এ ঘটনার রেশ না কাটতেই পরের দিন সকালে জহির তার দলবল নিয়ে মুন্সীগঞ্জ সদরের বাংলাবাজার ঘাট থেকে জনৈক এক ব্যবসায়ীর স্পিডবোট ছিনতাই করে নিয়ে যায়। বিষয়টি অবগত করার পরও পুলিশ এখন পর্যন্ত ওই ব্যবসায়ীর স্পিডবোট উদ্ধার করতে পারেনি।

অভিযোগ রয়েছে, গত ২১ ডিসেম্বর সকালে বকচর এলাকায় ইজারাকৃত বালুমহালে এসে চাঁদা দাবি করে কানা জহির। মাটি কাটার ড্রেজারে থাকা লোকজন চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে জহির নদীতে থাকা তিনটি ড্রেজারে আগুন ধরিয়ে দেয়।

স্থানীয়রা জানায়, কানা জহির এক সময় বাবলা ডাকাত ও পুলিশের জন্য কাজ করতো। কিন্তু পরবর্তীতে জহির ও তার ভাই শাহিন নিজেরাই তৈরি করেন একটি সশস্ত্র আন্তঃজেলা ডাকাত দল। তারা চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ডাকাতির বখরা আদায় করা তাদের মূল কাজ। জহিরসহ একাধিক বাহিনীর সদস্যদের অত্যাচারে সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। চরাঞ্চলের ওই জায়গাগুলো দুর্গম হওয়ার সুযোগে ওইসব এলাকা এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর ও সিরাজদিখান সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন (পিপিএম) বলেন, “কানা জহিরকে গ্রেপ্তারে আমরা সব সময় সোচ্চার। কয়েকদিন আগেও ডিবি পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেছে। জহির নদী পথে থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করতে পারিনি। তবে তার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছি।”


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ