• রবিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন

আগে বিচার, তারপর অন্য কাজ

আমরা দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না, ডা. শফিকুর

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
ডা. শফিকুর রহমান-ছবি সংবাদ সংযোগ

ফরিদুল আলম শাহীন, কক্সবাজার:- আগে বিচার তারপর অন্য কাজ, ধর্ম যার যার, বাংলাদেশ সবার মন্তব্য করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা আমাদের এ দেশে মেজরিটি মাইনরিটি একেবারেই মানিনা। বাংলাদেশে যারাই জন্মগ্রহণ করেছে তারা এদেশের মর্যাদাবান গর্বিত নাগরিক। ইসলাম কারো উপর জোর খাটানোর কোন অধিকার রাখে না। অন্য ধর্মও কোনো ধর্মের উপর জোর খাটাতে পারবে না যদি সেটি ধর্ম হয়ে থাকে।

গতকাল শনিবার দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর পর কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান এসব কথা বলেন।

শফিকুর রহমান আরো বলেন, সমাজের মধ্যে সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু বলে যুদ্ধ লাগিয়ে রাখা হয়েছিলো। এখানে মেজরিটি মাইনরিটি বলে যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন ধরমের ভাই বোনদের নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের সম্পদ গ্রাস করা হয়েছে, জায়গা জমি দখল করা হয়েছে, ইজ্জতের উপর হাত দেয়া হয়েছিলো, ক্ষেত্র বিশেষে তাদের ঘর বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর দোষ দেয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর উপর।

ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে কোথায় কোথায় জামায়াতের কর্মীরা এসব অপকর্ম করেছে, তা সুস্পষ্ট করে নাম ঠিকানা দিয়ে আমাদের সাহায্য করুন। আপনাদেরকে কথা দিচ্ছি, ন্যায় বিচার আমরা আপনাদের হাতে তুলে দেবো। আমরা নিশ্চিত এই অপকর্মের সাথে আমাদের সহকর্মীরা জড়িত নয়।

২৪ এর অভ্যুত্থানকারী প্রজন্মকে সম্মান জানিয়ে আমির বলেন, তোমাদের নেতৃত্বে আমরা ছিলাম। সাড়ে ১৫ বছর আমরা আমাদের নেতৃত্বে আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বৈরাচারের পতন ঘটাতে পারিনি। এটাই সত্য কথা। কিন্তু সাড়ে ১৫ বছরের ধারাবাহিকতায় তোমাদের নেতৃত্বে জাতি শেষ আঘাতটা ফ্যাসিজমের উপর দিয়েছিলো এবং জাতি সফল হয়েছিলো।

আন্দোলনের মাস্টারমাইন্ড প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, অনেকে আবার নিজেরা কৃতিত্ব দাবী করে। মহা পরিকল্পনাকারী মহান রাব্বুল আলামিনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়েছে। এখানে কোনো মাস্টারমাইন্ড আমরা বিশ্বাস করি না।

উপস্থিত জনতার উদ্ধেশ্য বক্তব্য রাখছেন ড. সফিকুল ইসলাম

ডা. শফিক আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। আমরাও সেভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবো, সেটা ছিলো আমাদের আশা। কিন্তু বাস্তবে সে আশা পূরণ হয়নি। যদি বলি একেবারেই পূরণ হয়নি, তাহলে কথাটা সত্য হবেনা। কিন্তু পূরণ হবার বিশাল প্রত্যাশা মানুষের ছিলো। একটা স্বাধীন বিচার ব্যাবস্থা আমরা এখনো পেলাম না।

নিজ দলের প্রতি অবিচারের প্রসঙ্গ টেনে জামায়াতের আমির বলেন, আইনের অঙ্গনে এসে যারা বেআইনী কর্মকাণ্ড করেছেন, প্রধান বিচারপতির দরজায় এসে লাথি দিয়েছিলো, আওয়ামীলীগ তাদের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বানিয়েছিলেন। এদের কাছ থেকে বিচার পাওয়া যাবেনা এটাই স্বাভাবিক। তাই অবিচারের শিকার হয়ে আমাদের ১১ জন কলিজার টুকরা শীর্ষ নেতা দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাদেরকে ঠান্ডা মাথায় বিচারের নামে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রতিশোধে বিশ্বাস করিনা, তবে আমরা অবশ্যই অপকর্মের বিচার চাই। আমাদের কথা স্পষ্ট। সবগুলো খুনের বিচার হতে হবে। বিশেষ করে ২৪ এর গণহত্যার বিচার অবশ্যই হতে হবে। আগে বিচার তারপর অন্য কাজ। এ বিচার না হলে শহীদের আত্মা কষ্ট পাবে। তিনি ছাত্র জনতাকে স্যালুট জানান। দীর্ঘদিন ধরে আটক জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তি দাবি করেন।

এছাড়া সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনেজির আহমেদের বক্তব্য প্রসঙ্গে পুলিশ বাহিনীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ”পুলিশ ভাইদের বলছি বেনেজিরের ফাঁদে পা দিবেন না।” তিনি কক্সবাজারে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা তুলে ধরেন।

তিনি আরাে বলেন, গত আওয়ামী আমলে সারাদেশে জামায়াতের সমস্ত অফিস বন্ধ, নিবন্ধন বাতিল, প্রতীক বাতিল করে সর্বশেষ দলকে নিষিদ্ধ করেছিল আল্লাহর অসীম রহমতে ৫ আগষ্ট তারাই নিষিদ্ধ হয়ে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে হয়েছে। এটাই আল্লাহর বিচার।

আরো পড়ুন       ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না সরকারকে: রিজভী

শনিবার সকাল ৮ টায় কক্সবাজার সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কক্সবাজার জেলা শাখার আয়োজনে এ সম্মেলন শুরু হয়। গতরাত থেকে কুতুবদিয়া ও টেকনাফ থেকে প্রচুর নেতাকর্মি চলে আসে। এ জনস্রোত লাখ ছাড়িয়ে যায়।

সম্মেলনে কক্সবাজার জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ নুর মোহাম্মদ আনোয়ারী সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন-কেন্দ্রীয় এ্যাস্টিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল মুহাম্মদ শাহজাহান, চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের আমীর ও সাবেক এমপি আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহ ও ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি এনামুল হক মন্জু।

আরো পড়ুন      গাজীপুর সহ সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুর

জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী জাহিদুর রহমানের পরিচালনায় সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন-হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি পরিমল কান্তি শীল, জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মুফতি হাবিবুল্লাহ, এডভোকেট ফরিদ উদ্দিন ফারুকী, জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারী ও কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট শাহ জালাল চৌধুরী, এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু তাহের চৌধুরী, শামসুল আলম বাহাদুর, কক্সবাজার শহর জামায়াতের আমির আব্দুল্লাহ আল ফারুক, কক্সবাজার জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আব্দুর রহিম নুরী।

দীর্ঘদিন পর বিশাল কর্মী সম্মেলনে একত্রিত হয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছেন জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা। কর্মী সম্মেলন ঘিরে রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণে সেজেছিল পুরো শহর। এ কর্মী সম্মেলনে জেলার ৪ সংসদীয় আসনে জামায়াতের মনোনিত প্রার্থীদের জয়ী করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করা হয়।

চধমব ১১ ড়ভ ১১


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ