আনিসুর রহমান:- মুন্সীগঞ্জ জেলা টঙ্গীবাড়ী উপজেলার ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর নড়বড়ে বেহাল দশা। জনবলের অভাব, ঔষধ সরবরাহ সংকট, বিপাকে স্বল্প আয়, দিনমজুর ও নিম্ন শ্রেণীর লোকজন। পরিবার পরিকল্পনা বলতে আমরা কি বুঝি। কেনইবা পরিবার পরিকল্পনা।সাধারণ অর্থে পরিবার পরিকল্পনা বলতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বুঝানো হয়ে থাকে । প্রকৃত অর্থে পরিবার পরিকল্পনার সংজ্ঞা অনেক ব্যাপক । একটি পরিবারের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতির লক্ষ্যে একটি দম্পতি ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা সচেতনভাবে চিন্তা-ভাবনা করে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাকেই বলা যায় ‘পরিবার পরিকল্পনা’ । যে কোনো পরিকল্পনার লক্ষ্য হলো সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠন করা । সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিবারের সার্বিক মঙ্গল ও উন্নতিসাধন করাই পরিবার পরিকল্পনার লক্ষ্য । স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে পরিকল্পিতভাবে পরিবার গঠনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাই পরিবার পরিকল্পনা ।
পরিবার পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি দম্পতি সর্বমোট কয়টি সন্তান নেবেন, কতদিনের বিরতি নেবেন ইত্যাদি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন, পরিকল্পনা করে থাকেন এবং জন্ম-নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেন ।পরিকল্পনার ভিত্তিতে গঠিত পরিবারকে পরিকল্পিত পরিবার বলে। নিজেদের সামর্থ্য ও স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে পরিকল্পিতভাবে সন্তান গ্রহণ করাই হলো পরিবার পরিকল্পনা। পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার মাধ্যমে স্বামী স্ত্রী তাদের সন্তান সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারে। এর ফলে পরিবারের সদস্য সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি ? স্বাস্থ্যকর প্রজননের জন্য নারীদের পরিবার পরিকল্পনা তথ্য, পরামর্শ এবং সেবা। মা ও শিশুর নিরাপদ প্রসব ও প্রসব পরবর্তী শিক্ষা এবং গর্ভধারণের আগে মহিলাদের চিকিৎসা।
প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিরুদ্ধে শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা।পরিবার পরিকল্পনা হল সঠিক সময় সন্তান নেবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য পদ্ধতির যথাযত প্রয়োগ নিশ্চিতকরন। অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে যৌন শিক্ষা, যৌন সংক্রামকসমুহের নির্গমন প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা। পরিবার পরিকল্পনাকে অনেক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণের সমার্থক হিসেবে চিহ্ণিত করা হয় যদিও পরিবার পরিকল্পনার পরিধি আরও বিশদ। উপরোক্ত বিষয় বস্তুগুলো একটু পর্যালোচনা করে দেখা যায় পরিবার পরিকল্পনার স্বাস্থ্যকর প্রজননের জন্য নারীদের পরিবার পরিকল্পনা তথ্য, পরামর্শ এবং সেবা।
মা ও শিশুর নিরাপদ প্রসব ও প্রসব পরবর্তী শিক্ষা এবং গর্ভধারণের আগে মহিলাদের চিকিৎসা।
প্রতিরোধযোগ্য রোগের বিরুদ্ধে শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যসেবা জন্য পর্যাপ্ত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা ও পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক প্রয়োজন। কিন্তু সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়। টঙ্গীবাড়ী উপজেলার মোট আয়তন ১৪৯.৯৬ কিলোমিটার, উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের সংখ্যা ১২ টি, গ্রাম আছে ১৫৩ টি, মোট জনসংখ্যা ২২৫১৯০জন (পরিবার কল্যাণ রেজি অনুযায়ী) পুরুষ ১১৬৩১৭ জন, নারী ১০৮৮৭৩ জন, মোট সক্ষম দম্পত্তি ৩৯৯১৯ জন, মোট গর্ববতী নারীর সংখ্যা ১১৯৭ জন, উপজেলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১০ টি, ইউনিয়ন ক্লিনিক ১ টি, মান উন্নতি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৪ টি, সদর ক্লিনিক ১ টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১ টি কমিউনিটি ক্লিনিক ১০টি। এতগুলো সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কেন সাধারণ মানুষ সেবা ও ঔষধ থেকে বঞ্চিত ? উপজেলা খাবার বড়ি সেবন কারীর সংখ্যা ১১৫ জন, কনডম ব্যবহারকারী সংখ্যা ৫৭ জন,ইনজেকটেবলস ব্যবহারকারী ৬৮ জন, আই ইউ ডি ব্যবহারকারী ১৫ জন, ইমপ্লান্ট ব্যবহারকারী ১৮ জন।
টঙ্গীবাড়ি উপজেলার জনবলের অভাবে জনশূন্য সেবামান (১) মেডিকেল অফিসার (এমসি এইচএফপি) অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২ জন, কর্মরত একজনও নেই জনশূন্য ২ জন, (২) সহকারি পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১ কর্তরত পদ শূন্য, (৩) অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার অপারেটর অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১জন, কর্মরত পদের সংখ্যা শূন্য, (৪) উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১১ জন, কর্মরত ১জন, শূন্য পদের সংখ্যা ১০ জন, (৫) ফার্মাসিস্ট অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৭ জন, কর্মরত ১জন, শূন্য পদের সংখ্যা ৬ জন, (৬) পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩ জন, কর্মরত ৫ জন, শূন্য পদের সংখ্যা ৮ জন, (৭) পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক অনুমোদিত সংখ্যা ১২ জন কর্মরত ৯ জন, শূন্য পদের সংখ্যা ৩ জন, (৮) পরিবার কল্যাণ সহকারি অনুমোদিত পদের সংখ্যা ৫৯ জন, কর্মরত ৩০ জন, শূন্য পদের সংখ্যা ২৯ জন, (৯) এম এল এস এস (অফিস সহায়তা) অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ জন, কর্মরত ৫ জন, পদের সংখ্যা শূন্য ৫ জন, (১০) পরিচ্ছন্নতা কর্মী আয়া অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩ জন, কর্মরত ৬ জন, শূন্য পদের সংখ্যা ৭ জন।
একটি উপজেলায় অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৩৪ জন, অথচ সেখানে কর্মরত ৬২ জন, শূন্য পদের সংখ্যা ৭২ জন, কর্মরতের চেয়ে শূন্য পদের সংখ্যাই বেশি। একদিকে জনবলের সংকট অপরদিকে ওষুধের সংকট এজন্যই জনসাধারণ দিনের পর দিন স্বাস্থ্য সেবা ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত। তাহলে পরিবার পরিকল্পনার সার্থকতা কি? আজ আপনাদের মাঝে আড়িয়াল বালিগাঁও ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার বেহাল দশা চিত্র তুলে ধরলাম। সেখানে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (SA CMO) রুমটি তালাবদ্ধ। ঔষধের সংকট সাধারণ জনগণ চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র টি চতুর্দিকের আবর্জনা ময়লা স্তব্ধ পরিবেশটি। ভুক্তভোগী ও সাধারণ জনগনের দাবি। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন এখনই যদি এই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র দিকে নজরদারি না করা হয় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই সেবা স্বাস্থ্য খাত ধ্বংসের দিকে দাবী তো হবে । সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হবে।