ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে নিয়মিত আসছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য। চোরাকারবারি চক্র আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে বিক্রি করছে এসব পণ্য। গত কয়েক মাসে অন্তত ১৫ কোটি টাকার পণ্যসামগ্রী জব্দ করেছে বিজিবি। আটক করা হয়েছে ১২ চোরাকারবারিকে। বিজিবি সতর্ক অবস্থানে থাকলেও সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান থামছে না।
জানা যায়, বিজিবি-৩৯ ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ময়মনসিংহ ও শেরপুর সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান রোধে দায়িত্বপালন করেন। এ দুই জেলার সীমান্তকে টার্গেট করে চোরাকারবারি চক্রগুলো অধিক সক্রিয়। তারা অভিনব উপায়ে ভারতীয় পণ্যসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র নিয়ে আসেন।
বিজিবি-৩৯ ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়ন কার্যালয় থেকে পাওয়া গত তিন মাসের তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, এ সময়ের মধ্যে সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫ কোটি ২৯ লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার ভারতীয় খাদ্যপণ্য, পোশাক ও প্রসাধনী জব্দ করা হয়েছে। এছাড়াও গবাদি পশু, যানবাহন ও মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। এগুলো জব্দকালে ১২ জনকে আটক করা হয়েছে। চোরাচালানের মালামালের সঙ্গে কাভার্ডভ্যান, পিকআপভ্যন, মোটরসাইকেলসহ বেশ কিছু যানবাহন জব্দ করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে নিয়মিত আসছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য
বিজিবির একটি সূত্র জানায়, চোরাকারবারি চক্র ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে সরবরাহ করতে অভিনব পন্থা অবলম্বন করছে। বিভিন্ন সময় তারা বস্তায় পণ্য ভরে নিরিবিলি জঙ্গল ব্যবহার করতে চেষ্টা করে। অনেক চোরাকারবারি ভারত থেকে নিয়ে আসা পণ্যগুলো ঠিকভাবে বিক্রি করতে সড়কের নির্ধারিত স্থানে যানবাহন প্রস্তুত রাখে। এছাড়া বাসাবাড়িতে মজুদ করে পরে সুযোগমতো বিক্রির চেষ্টা করা হয়। অবৈধ পণ্যগুলো নির্ধারিত জায়গায় বিক্রির জন্য বিভিন্ন যানবাহন চালকদের বেশি টাকায় ভাড়া করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। তবে সীমান্তে বিজিবি সদস্যের হাতে পণ্য জব্দের পর চোরাকারবারিদের অনেক পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, ঈদ উপলক্ষে চোরাকারবারিরা বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসতে তৎপর রয়েছে। তাদের পণ্য জব্দসহ জড়িতদের আটক করতে বিজিবি সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখছে। সীমান্ত এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন পণ্য নিয়মিত দেশে আসছে। সঙ্গে আসছে মাদকও। সীমান্তে বিজিবির আরও সতর্ক দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন।
ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার বাসিন্দা তরিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভারতীয় পণ্যসামগ্রীর মধ্যে সম্প্রতি চিনির চোরাচালান বেড়েছে। এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চোরাকারবারি চক্র বাসা কিংবা গোডাউনে চিনি মজুদ করে রেখেছেন। বিভিন্ন দোকানে ভারতীয় চিনি বাংলাদেশি বস্তায় ভরে প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, সীমান্ত দিয়ে নিয়মিত চিনি আসছে। খুচরা বিক্রির সময় দাম কম রাখা হচ্ছে না।
ময়মনসিংহের সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে নিয়মিত আসছে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় পণ্য
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, সীমান্তে বিজিবির টহল সর্বোচ্চ জোরদার থাকলে চোরাচালান কমে আসবে। তাদের চোখ ফাঁকি দেওয়ার কারণেই চোরাকারবারি চক্র পণ্যগুলো বিভিন্ন বাজার পর্যন্ত নিয়ে আসতে পারছে। সড়কে চেকপোস্ট চালিয়ে বিভিন্ন সময় পণ্য জব্দ করলেও অনেকগুলো নির্ধারিত জায়গায় চলে যাচ্ছে। অবৈধপথে এসব পণ্য আসায় সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।
ময়মনসিংহ জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন কালাম বলেন, সবচেয়ে আতঙ্কের কারণ হচ্ছে, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে দেশে মাদক চলে আসছে। এতে হুমকির মুখে পড়ছে যুবসমাজ। পরিবারের সদস্যরাও এ নিয়ে চিন্তিত। আমরা চাই, সব ধরনের চোরাচালান সম্পূর্ণ বন্ধ হোক।
এ বিষয়ে বিজিবি-৩৯ ময়মনসিংহ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মাদ সানবীর হাসান মজুমদার বলেন, সীমান্তে সব ধরনের চোরাচালান বন্ধ করতে বিজিবি সদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করছেন। তারা ২৪ ঘণ্টা সজাগ দৃষ্টি রাখছে।
তিনি বলেন, গত তিন মাসে ১৫ কোটি ২৯ লাখ টাকার বেশি ভারতীয় পণ্যসামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। বিজিবি সদস্যদের সর্বোচ্চ চেষ্টার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। সীমান্তে দ্বায়িত্বে থাকা বিজিবি সদস্যদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অবৈধভাবে নিয়ে আসার সময় ভারতীয় সব পণ্য ও মাদক জব্দ করাসহ চোরাকারবারিদের আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।