• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

এমপি রহমত উল্লাহ বনাম কাইয়ুমের ফের ভোটযুদ্ধ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন জাপার ফয়সল চিশতীও

আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৮

নির্বাচনী হাওয়া বইছে ঢাকা-১১ আসনে। পোস্টার-ব্যানারে নেতাদের দোয়া চাওয়া, শুভেচ্ছা প্রদান ও নানান অঙ্গীকার জানান দিচ্ছে নির্বাচনের দেরি নেই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও চলছে প্রচারণা। আসনটিতে প্রার্থীর ছড়াছড়ি নেই। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার তিন সভাপতি এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অন্তর্গত বাড্ডা থানা ও ভাটারা থানার বেরাইদ ইউনিয়ন, ভাটারা ইউনিয়ন ও সাঁতারকুল ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২১, ২২ ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত ঢাকা-১১ আসন।

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার কে এম রহমত উল্লাহর

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে একজনের নামই শোনা যাচ্ছে। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তরের আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। আসন পুনর্বিন্যাসের পর ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১১ আসনে              বিএনপির প্রার্থী ছিলেন এম এ কাইয়ুম। তাকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে এম রহমত উল্লাহ। রাজধানীর অন্যান্য আসনের মতো ঢাকা-১১ আসনেও জয়ের ধারাবাহিকতা চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ কারণে এ কে এম রহমত উল্লাহর ওপর আবারো আস্থা রাখতে চাচ্ছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী এলাকার নেতা-কর্মীদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। একইসঙ্গে তিনি বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী। তিনি অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য ছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

চার বারের সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহ ১৯৮৬ সালে প্রথম ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হন জাতীয় পার্টির (জাপা) টিকিটে। এরপর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি তত্কালীন ঢাকা-৫ আসনে (১১টি থানা নিয়ে গঠিত) দেশের সর্বোচ্চ ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। ২০০১ সালে তত্কালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী কামরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হন।

আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হলে একজন অভিজ্ঞ ও দক্ষ রাজনীতিবিদের প্রয়োজন। সেই হিসেবে এ আসনে রহমত উল্লাহর বিকল্প কোনো প্রার্থী গড়ে ওঠেনি। ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব পাওয়ার পর দলকে আরও সুসংগঠিত করছেন তিনি। প্রতিটি ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিটে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া এলাকার নেতাকর্মী ও জনগণের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। নির্বাচনী এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়নেও তিনি সব সময় সক্রিয়। তাই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার বিকল্প দেখছেন না স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

জানতে চাইলে এ কে এম রহমত উল্লাহ বলেন, আমি এখানে বাইরে থেকে আসিনি। আমি এই এলাকারই লোক। আমার নানা ছিলেন এখানকার চেয়ারম্যান। এটা আমাদের বাপ-দাদার এলাকা। আমিও ২৬ বছর বয়সে গুলশান এলাকার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই। আমার পরিবার এই এলাকার মানুষের সেবা করে আসছে যুগ যুগ ধরে। তিনি বলেন, আমি মানুষের সেবক। যত দিন বেঁচে থাকব তাদের সেবা করে যাব। আমি তাদের কাছ থেকে নিতে নয়, দিতে এসেছি।

পলাতক কাইয়ুমই বিএনপির প্রার্থী

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সভাপতি এম এ কাইয়ুম একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও দলের সম্ভাব্য প্রার্থী। তবে আলোচিত তাভেল্লা সিজার হত্যাসহ একাধিক মামলার খড়্গ মাথায় নিয়ে তিনি দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কোনো কারণে তিনি নির্বাচন না করতে পারলে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী বদল হতে পারে।

ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে ধীরে ধীরে মহানগর উত্তরের সভাপতি হয়ে ওঠা বিএনপির নেতা এম এ কাইয়ুম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচিত হচ্ছেন। তার ওপরই ভরসা বিএনপির। নেতা-কর্মীদের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে তার ভূমিকায় বিএনপির হাইকমান্ডও খুশি। এবারো তিনি মনোনয়ন চাইবেন এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী আবদুস সালাম তালুকদারের করণিক ছিলেন কাইয়ুম। ১৯৯১ সালে বিএনপি থেকে তিনি ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গুলশানে ইতালীয় নাগরিক তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলায় নাম আসার আগে থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন এম এ কাইয়ুম। তিনি মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। সেখান থেকে দলের উত্তরের আন্দোলন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

এদিকে তাভেল্লা সিজার হত্যা মামলায় গত বছরের জুনে এম এ কাইয়ুম ও তার ভাই এম এ মতিনসহ সাতজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। মামলাসংক্রান্ত কিংবা অন্য কোনো কারণে নির্বাচন করতে না পারলে তার সহধর্মিণী শামীম আরা বেগম দলের মনোনয়ন চাইতে পারেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতাউর রহমানও মনোনয়নপ্রত্যাশী। এলাকায় তিনি কাইয়ুম সমর্থিত বলে পরিচিত। এম এ কাইয়ুমের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মামলা-মোকদ্দমা মোকাবিলা করেই আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন তিনি।

কাইয়ুমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়া থেকে তিনি বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। মামলা ও জেল-জুলুম নির্বাচনের পথে কোনো সমস্যা হবে না। আর দল যাকে যোগ্য মনে করবে, তাকে মনোনয়ন দেবে-এতে সমস্যার কিছু নেই। নেতা-কর্মীরা আমার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল। আমার কনভিকশন হয়নি। এখনো আইনগতভাবে কোনো সমস্যা নেই।

জাপার প্রার্থী ফয়সল চিশতী

ঢাকা-১১ আসনে মাঠে রয়েছেন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম ফয়সল চিশতী। তিনি আগামী নির্বাচন সামনে রেখে ইতোমধ্যে সাংগঠনিক তত্পরতা জোরদার করেছেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ