• সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৪৮ অপরাহ্ন

অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত টাঙ্গাইলের শিশু ফাহাদ দীর্ঘ ১৫ মাসেও চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি

আপডেটঃ : শনিবার, ১০ মার্চ, ২০১৮

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি॥
১৭ মাসের শিশু ফাহাদ, ১৫ মাস যাবত ভুগছে অজানা অসুখে। ফাহাদের মাথা, মুখ, হাত, পা, গলা, কান, বুক তথা পুরো শরীর জুড়ে কালোজিরার মতো দেখতে ছোট ছোট অজ¯্র গোটা। বিশেষ করে শরীরের নিচের অংশ তথা পা দুটো ছোট ছোট গোটায় ঢেকে গেছে। ফাহাদের বয়স যখন দুই মাস তখন থেকে এই অসুখ দেখা দেয়। প্রচন্ড ব্যাথা ও যন্ত্রণা নিয়ে চিৎকার করলেও বাবা-মায়ের কিছুই করার নেই। চিকিৎসকরা দীর্ঘ ১৫ মাসেও শিশু ফাহাদের শরীরের এ রোগ কি ধরণের তা নির্ণয় করতে পারেননি, কার্যকর কোন ব্যবস্থাপত্রও দিতে পারেননি। ফলে অসহায় বাবা-মায়ের মুখের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে চিৎকার-চেঁচামেচি ছাড়া কিছুই করতে পারছেনা ফাহাদ। শিশু ফাহাদ টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার আইসড়া গ্রামের শাহীন মিয়া ও মেরিনা খাতুনের একমাত্র সন্তান। বর্তমানে টাঙ্গাইল শহরের কোদালিয়া এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন।
শিশু ফাহাদের বাবা শাহীন মিয়া জানান, ওর বয়স যখন দুই মাস, তখন থেকেই শরীরে দেখা দেয় এ  রোগের উপসর্গ। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েও কোন প্রকার উন্নতি হয়নি- চিকিৎসকরা এটি কোন ধরণের রোগ তা-ই নির্ণয় করতে পারেননি। তিনি জানান, টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার সাজ্জাত হোসেনের কাছে ৪-৫ মাস, তারপর চর্ম ও যৌন বিশেষজ্ঞ ডা. নুরুল ইসলামের কাছে প্রায় ৫-৬ মাস চিকিৎসা করান। কিন্তু তারা শুধু ব্যাথা নাশক ওষুধ দিয়েছেন, কি ধরণের রোগ তা নির্ণয় করতে পারেননি। তারপর টাঙ্গাইলের মধুপুর জলছত্র খ্রিস্টান মিশনারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসকরা শিশু ফাহাদকে দ্রুত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এরপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চর্ম ও যৌন বিভাগের চিকিৎসক ডা. জামাল উদ্দিন শিশু ফাহাদকে দেখেন। সেখানে অনেকগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানানো হয়, মাংসের ৩ সে.মি. নিচ থেকে কালোজিরার মতো দেখতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র এই দানাগুলো জন্ম নিচ্ছে। কিন্তু তারা এ  রোগের কোন নাম বলতে পারেননি। সেখানে দুইবার মেডিকেল বোর্ড বসিয়েও এটা কি ধরণের অসুখ বা রোগটির নাম নির্ণয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। সর্বশেষ শুধু বলে দিয়েছেন, এটা জন্মগত।
শিশু ফাহাদের বাবা শাহীন মিয়া আরো জানান, তিনি অটো-রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। খুবই অল্প আয়ের মানুষ। একমাত্র ছেলের চিকিৎসার জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাঁচ শতাংশ জমিও বিক্রি করে দিয়েছেন। জমি বিক্রির ছয় লাখ টাকাও ছেলের চিকিৎসার জন্য ব্যয় করেছেন। কোন উন্নতি হয়নি।
ফাহাদের মা মেরিনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি। কেউ আমার ফাহাদকে ভাল করতে পারেনি। ফাহাদকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার কথা বলেছেন। আমার স্বামী অটোরিকশা চালক। আমাদের পক্ষে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ নেই। একমাত্র সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে শেষ সম্বল পাঁচ শতাংশ জমিও বিক্রি করে দিয়েছি। এখন আমরা নিঃস্ব। আমরা ফাহাদকে চিকিৎসা করাতে পারছিনা। তাই চোখে জল আর বুকে যন্ত্রণা নিয়ে একমাত্র সন্তানের নির্মম কষ্ট ও যন্ত্রণাময় কান্না সহ্য করতে হচ্ছে। এসময় তিনি ফাহাদের চিকিৎসার জন্য সমাজের দয়ালু ও বিত্তবানদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের চর্ম ও যৌন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডা. খন্দকার সাজ্জাত হোসেন বলেন, আমাদের কাছে এ রোগটি নতুন। এটি ক্রণিক ননস্পেসিফিক ডার্মাটাইটিস টাইপের কোন এক রোগ। উপসর্গ অনুযায়ী এ রোগের দীর্ঘদিন চিকিৎসা করতে হয়। তবে উন্নততর পদ্ধতিতে বায়োপরি করালে হয়তো রোগটি ঠিক কোন ধরণের তা চিহ্নিত করা যেতে পারে। যা আমাদের দেশে নেই, উন্নত দেশগুলোতে এ রোগ নির্ণয় করা সম্ভব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ