• বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বসবাস:প্রাণহানির আশঙ্কা

আপডেটঃ : শনিবার, ৫ মে, ২০১৮

রংপুর অফিস॥
রংপুর নগরীতে অর্ধশত ঝুঁকিপর্ণ ভবনে এখনো অসংখ্য মানুষ বসবাস করছে। পাশাপাশি চলছে দাপ্তরিক কর্মকান্ড।
এর মধ্যে ১৭টি রয়েছে সরকারি ও ৩০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবন। ১৮৬৪ থেকে ১৯৮২ সালের মধ্যে নির্মিত এসব ভবনে বড় ধরনের ভূমিকম্পে প্রাণহানির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গতকাল শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো ভবনগুলোতে সিটি করপোরেশন থেকে এমন সাইনবোর্ড সাঁটানো হলেও ঝুঁকি নিয়েই লোকজনের বসবাসসহ দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। সিটি করপোরেশন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে তাতে সাইবোর্ড দিয়ে এসব ভবন ব্যবহার না করার জন্য নাগরিকদের সতর্ক করা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোজাম্মেল হক তাঁর চাকরিজীবন শেষ করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে থেকে। প্রথমে সিভিল সার্জন থাকাকালীনও তিনি ওই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ছিলেন। এ ছাড়া সাবেক সদর হাসপাতালের ঝুঁকিপূর্ণ কোয়ার্টারগুলোতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্ন শ্রেণির সরকারি কর্মচারীরা এখনো বাস করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, রংপুর সিটি করপোরেশন ও গণপূর্ত বিভাগ থেকে নগরে ৪৭টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৭টি সরকারি ও ৩০টি ব্যক্তিমালিকানাধীন। ভবনগুলোতে আবাসিক ছাড়াও বিভিন্ন অফিসের কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জেলা জজ আদালত, জেলা ও দায়রা জজের বাসভবন, সার্কিট হাউস, জোনাল সেটলমেন্ট রেকর্ড রুম, রংপুর সদর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট, জেলা প্রশাসকের বাসভবন, পুলিশ গার্ড শেড, ট্রেজারি পুরনো ভবন, এডিএম কোর্ট ভবন ও তার রেকর্ড রুম, রেড ক্রিসেন্ট ভবন, সিভিল সার্জনের বাসভবন। রংপুর সরকারি কলেজের অন্যতম ও প্রাচীন ছাত্রাবাস হলো মোসলেম উদ্দিন ছাত্রাবাস। নগরের সেন্ট্রাল রোডে অবস্থিত এই ছাত্রাবাসের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এখনো অর্ধশতাধিক ছাত্র অবস্থান করছে। সেখানে থাকা আরমান হক, সিরাজুল ইসলাম, তপন কুমারসহ অনেকে বলেন, এখানে থাকা নিরাপদ নয়। তবে এই ছাত্রাবাসের বাইরে প্রাইভেট মেসে থাকার সামর্থ্য নেই আমাদের। এক প্রকার বাধ্য হয়েই এই ঝুঁকিতে থাকতে হচ্ছে। নগরের জুম্মাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আহমেদ কবির বলেন, রংপুরের অন্যতম শপিং কমপ্লেক্স জেলা পরিষদ সুপারমার্কেট ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটির ছাদ, পিলার এবং দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। রংপুর আবহাওয়া অফিসে অবস্থিত ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, মূলত যেসব কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয় এর মধ্যে মাটির ফল্ট (ফাটল) অন্যতম। বাংলাদেশে দুটি ফল্টের অস্তিত্ব আছে। এর মধ্যে একটি রংপুর, ময়মনসিংহ এবং সিলেট ফল্ট, অন্যটি হচ্ছে ভারতের ত্রিপুরা হয়ে খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি হয়ে মিয়ানমার। ফলে রংপুর জেলা সরাসরি প্রথম ফল্টের আওতায়। তাই এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের সময় সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলা উচিত। পাশাপাশি শতবর্ষী ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস অনাকাঙ্ক্ষিত প্রাণহানি ঘটাতে পারে। রংপুর সিটি করপোরেশনের নগর পরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলাসহ সেখানে বসবাস না করার জন্য লোকজনকে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। বেশ কিছু ভবন চিহ্নিত করে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে বসবাস বন্ধে সচেতন করতে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। রংপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী লতিফুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছরে গণপূর্ত বিভাগ থেকে শতবর্ষী ভবনগুলো কী পর্যায়ে আছে, তা পরীক্ষা করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তা অবগত করা হয়। রংপুরের বেশ কয়েকটি ভবন সম্পর্কেও অবহিত করা হয়েছে। তবে এর বেশি করণীয় আমাদের নেই। কারণ ভবনগুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণে নয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ