• বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০২:৫৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম:
দেশের শ্রম আইনকে আইএলওর মানদণ্ডে উন্নীত করতে সংস্কার হচ্ছে: ড. ইউনূস আখেরি মোনাজাতে শেষ হলো প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সিরিয়ার অন্তবর্তী প্রেসিডেন্টের আঙ্কারায় বৈঠক বাংলাদেশ ব্যাংকে যে কোনো সময় অভিযান, খালাস পেলেন শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় সাজাপাপ্ত সব আসামি গাজাবসীকে ‘অন্য কোথাও’ সরিয়ে উপত্যকা দখল করবে যুক্তরাষ্ট্র মেসি, ম্যারেডোনা কিংবা পেলে নন, তিনি নিজেই সর্বকালের সেরা বাড়তি সুবিধা সহ মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে বাংলাদেশি শ্রমিক নেওয়ার সুখবর কোটা বহালের দাবিতে জাবিতে লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা তক্ষীরায় নিরাপদ খাদ্য বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

কালিয়াকৈরে পানির নিচে তলিয়ে গেছে বোরো ধান॥হতাশায় দিন কাটছে কৃষকের

আপডেটঃ : সোমবার, ৭ মে, ২০১৮

কালিয়াকৈর(গাজীপুর)প্রতিনিধি॥
চলতি মৌসুমে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে লক্ষ্যমাত্রা হারে। বাম্পার ফলনের আশা আলো ব্যক্ত করেছে উপজেলা কৃষি অফিস ও কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিলের পানির নিচে প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান, হতাশায় দিন কাটছে কৃষকের। বোরো ধান ঘরে তোলো নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। ঘরে তোলতে না পারার ভয়ে পানির নিচ থেকে ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধান কাটছে কৃষক। এতে লক্ষ্যমাত্রা উৎপাদন অর্জন নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। আবার ধান পানির নিচে থাকায় ব্যপক হারে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় মোট ২৩ হাজার ৯৫৪ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। এর মধ্যে ১০ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। যা উপজেলা কৃষি অফিসের মোট লক্ষ্যমাত্রা হারে চাষ করা সম্ভব হয়েছে। বোরো ধানের মধ্যে ব্রি ধান-২৯ সবচেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্রি ধান-২৮, ব্রি ধান-৫৮, হাইবিডসহ প্রায় ১০ ধরণের বোরো ধান রোপন করা হয়েছে। এসব ধানের লক্ষ্যমাত্রা হারে চাষ করায় এ বছর মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৬২ হাজার ২৬৮ মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হবে। এতে বাম্পার ফলনের আশা ব্যক্ত করেছে উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি কাজ করেই এখনো এদেশের প্রায় ৮০ ভাগ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায় কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া, চাপাইর, বোয়ালী, মধ্যপাড়া, মৌচাক, আটাবহ, শ্রীফলতলী, ঢালজোড়া, সুত্রাপুর ইউনিয়ন এবং কালিয়াকৈর পৌরসভার হরতকিতলা, ডাইনকিনি, গোয়ালবাথান, কালামপুরসহ এলাকার বিভিন্ন বিলে বা চকে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এখানে ইউনিয়ন, ওয়ার্ড ও গ্রামের বিল বা চকে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য সরকারিভাবে খাল বা নালা খনন করা হয়েছে বহু বছর আগেই। কিন্তু খাল বা নালাগুলো ভরাট এবং জবর-দখলের কারণে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এসব জবর-দখল ও ভরাটকৃত খালগুলো উচ্ছেদ বা খননের কোনো প্রদক্ষেপ নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। যার কারণে হেক্টর হেক্টর ফসলি জমি পতিতও পড়ে আছে। এছাড়া বাকী জমিগুলো বোরো ধান চাষ করা হয়। কিন্তু অল্প বৃষ্টি হলেই প্রতি বছর এসব বিল বা চকের অধিকাংশ ধান ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে তলিয়ে যায় কৃষকের সোনার ধান ঘরে তোলার স্বপ্নও। নানা প্রতিকুলতার পরও চলতি বছর এখানে লক্ষ্যমাত্রায় বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। বাম্পার ফলনের সম্ভবনার আশা ব্যক্ত করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকরা। কিন্তু বৃষ্টির পানি বিল থেকে পর্যাপ্ত পরিমানে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রায় চার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বোরো ধান ঘরে তোলো নিয়েও শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা। ঘরে তোলতে না পারার ভয়ে পানির নিচ থেকে ধান ডুবিয়ে ডুবিয়ে কাটছে কৃষক। তবে খালগুলো দখলমুক্ত ও খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য এখানকার কৃষকরা দাবী জানিয়েছেন। এ উপজেলায় কতগুলো খাল বা নালা রয়েছে তারও কোনো পরিসংখ্যান নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
এব্যাপারে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি সেচ) গাজীপুরের উপসহকারী প্রকৌশলী সাইদুল ইসলাম জানান, খাল বা নালার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে কিছু খালের তালিকা করা হয়েছে, সেগুলি আগামী বছর খনন করা হবে। এছাড়া দখলমুক্ত করা আমাদের দপ্তরের বিষয় নয় বলে জানান তিনি।
বড়ইবাড়ী এলাকার কৃষক সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, ধান ক্ষেতে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল, নালা আছে, সেগুলো দখলের কারণে চিকন হয়ে আসছে। এছাড়া দীর্ঘদিন খননের অভাবে সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই বিল বা চকে পানি জমে ধান ক্ষেত তলিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়ে কাচা ধান কাটতে হইতেছে। এভাবে কাচা ধান কাটার ফলে যেমন, ধান কম পাওয়া যাবে। আবার এই ধানের অগ্রভাগ কাটার ফলে ‘খর’ পাওয়া যাচ্ছে না। এতে এবার গরুর খাদ্য সংকট হবে। বড় গোবিন্দপুর এলাকার কৃষক কাইয়ুম আলী বলেন, যে ভাবে কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টি শুরু হচ্ছে, তাতে সোনার ধান ঘরে তোলা যায় কিনা সন্দেহ। গত কয়েক দিনের বৃষ্টির পানি আলুয়া বিলে আটকে থাকায় ধান তলিয়ে যাইতেছে। তাই বাধ্য হয়েই কাচা ধান কেটে ফেলছি। কি আর করব? ধান পানিতে তলিয়ে পঁচে গেলেতো লাভ নেই। অর্ধেক ধান পেলেওতো পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে বাঁচতে পারব। বাঁশতলী এলাকার কৃষক মো. হারেজ মিয়া বলেন, আমি কালিয়াদহ বিলে ৮০ শতাংশ জমিতে ব্রি ধান-২৯ আবাদ করেছি। কিন্তু সামান্য বৃষ্টির পানি আটকে থাকার কারনে আমার সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ধান কাটার শ্রমিক এনে ছিলাম কিন্তু তারা পানিতে ধান কাটবে না বলে চলে গেছে। এখন ডুবিয়ে ডুবিয়ে ধান কাটতে হইতেছে। কালিয়াদহ ও মকশ বিলেই হারেজ মিয়ার মতো আব্দুল হামিদ মিয়া ও সূনীল চন্দ্রসহ কয়েক হাজার কৃষকের ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। শুধু সারোয়ার মোর্শেদ, কাইয়ুম আলী, হারেজ মিয়া ও আব্দুল করিম নয় এসব খাল বা নালা দখলমুক্ত ও খননের দাবী এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার কৃষকের। তাহলে অল্প বৃষ্টিতে ধান ক্ষেত তলিয়ে যাবে না। ফলে আগামী বছর বোরো আবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে।
কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম খান জানান, গত বছর ধানের দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রা হারে কৃষি আবাদ করেছেন। যদি বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগের কবলে না পড়ে মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে। এছাড়া খালগুলো ভরাট ও দখলের কারনে বৃষ্টির পানি আটকে থাকায় আলুয়া বিল, মকশ বিল, কালিয়াদহ ও উজানবিলসহ কয়েকটি বিলের তলার ধান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে বোরো ধান আবাদ করা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। তবে অতি তাড়াতাড়ি খালগুলো দখল মুক্ত ও খনন করা দরকার বলে তিনি জানান।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ