• শনিবার, ০৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০:১৬ অপরাহ্ন

ভোলায় বাল্যবিয়ে বন্ধ ও জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি

আপডেটঃ : শুক্রবার, ১ জুন, ২০১৮

ভোলা প্রতিনিধি॥
বাল্য বিবাহ আমাদের দেশের দীর্ঘ দিনের একটি সামাজিক অভিশাপ। বাল্য বিবাহের অভিশাপে একজন নারীকে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিকশিত হতে দেয় না। একটি সুস্থ জাতি পেতে হলে দরকার একজন শিক্ষিত মা। শিক্ষিত মায়ের দ্বারাই সম্ভব একটি সুস্থ জাতি এবং একটি সুস্থ সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তোলা। কিন্তু বাল্য বিবাহের কারণে আমাদের এই সমাজের বেশির ভাগ মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আগামী প্রজন্মও সুস্থ ভাবে বেড়ে উঠা ও সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্য বিবাহ বড় একটি বাধা। বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি। আমাদের জীবনে আধুনিকতা ও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও বাল্য বিবাহের প্রবনতা কমেনি। বাল্য বিবাহ বন্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও সমাজের সাধারণ মানুষের জনসচেতনতা না থাকার কারণে এর কার্যকরতা তেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ লক্ষে বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধে এবং সচেতনতা বাড়াতে ২০১৫ সালে দ্বীপজেলা ভোলায় এ্যাডভোকেট, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় “বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি। এই সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের পর থেকে বাল্য বিয়ে বন্ধে ও সচেতনতা বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ গ্রহন করেছেন। “ছেলের একুশ মেয়ের আঠার, এর আগে নয় বিয়ে কারো” এই শ্লোগানে সংগঠনটি দ্বীপজেলা ভোলার প্রত্যেকটি ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধে জন সচেতনতা বাড়াতে অটোরিকশা, বাস সহ বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনে লিফলেট, স্টিকার লাগানো ও প্রচার-প্রচারণা চালানো শুরু করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালে “বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির আত্মপ্রকাশের পর থেকে তারা বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন বন্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একদল দক্ষ ও মেধাবী যুবকদের নিয়ে বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় বাল্য বিবাহ বন্ধে নিরলসভাবে কাজ করছে। যেখানে বাল্য বিবাহের খবর পান সেখানেই ছুটে যান এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। জেলার কোথাও বাল্যবিয়ের কোন সংবাদ পেলে তাৎক্ষনিক বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ঘটনাস্থলে ছুটে যান সংগঠনের কর্মীরা। তারা প্রাথমিক ভাবে বিয়ে বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কাজী সাহেব সহ বর কনের পিতা মাতার সাথে আলাপ করে বিয়ে বন্ধের অনুরোধ করে থাকে। যদি তাতে কাজ না হয় সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের সর্বোচ্চস্তরে ম্যাসেজটি পাঠানো হয়। এরপর মোবাইলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট ইউএনও এবং ওসিকে জানিয়ে বিয়ে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা হয়। বর্তমান জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ভোলা সদরের এসিল্যান্ড, বোরহানউদ্দিনের ইউএনও, লালমোহনের ইউএনও সহ অধিকাংশ কর্মকর্তাই বিয়ে বন্ধে এগিয়ে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের সহযোগিতায় বাল্য বিয়ে বন্ধ করা সম্ভব হয়।
বিয়ে বন্ধের পর ওইসব পরিবার তাদের ভূল বুঝতে পেরে বাল্য বিবাহের মতো একটি অভিশাপ থেকে তাদের সন্তানদেরকে মুক্ত করে দিয়ে লেখাপড়া করার অঙ্গীকার করেন। এভাবেই বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটি তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সমাজের সুশীলদেরকে নিয়ে ও গ্রাম পর্যায়ে আলোচনা সভা, মতবিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিশেষ ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেন। এ সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট সাহাদাত শাহিন, সহসভাপতি সাংবাদিক আদিল হোসেন তপু ও সম্পাদক এম শাহরিয়ার জিলনের নেতৃত্বে এ সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সক্রিয়তায় এ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বাল্য বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। এই কমিটি ভোলার ধনিয়া ইউনিয়নের ফারজানা ও ইলিশার রেশামা বেগম এর বিবাহ বন্ধ করে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও একাধিক শিশু নির্যাতনের ঘটনায় সংগঠনের ভূমিকা ছিলো অপরিসীম। সংগঠনের আত্মপ্রকাশের পর থেকেই এই জেলাকে বাল্য বিবাহ মুক্ত করার ঘোষণা করেন। বাল্য বিবাহ বন্ধে এবং এ সংক্রান্ত জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছেন। এ লক্ষ্যে ইতি মধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, শিক্ষক- শিক্ষিকা, অবিভাবক, মসজিদের ইমাম ও কাজীদের সাথে নিয়মিত সভা-সমাবেশ কাজ হাতে নিয়েছেন।
বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এ্যাডভোকেট সাহাদাত হোসেন শাহিন বলেন, বাল্য বিবাহ বন্ধে শুধু আইন নয়, দরকার জনসচেতনতা বৃদ্ধি। আর এ জন্যই আমরা দ্বীপজেলা ভোলার প্রত্যেকটি উপজেলায় বাল্য বিবাহ বন্ধে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ ক্যাম্পেইন, লিফলেট, স্টিকার বিতরন সহ বিভিন্ন সচেতনতা মুলক কর্মসুচীর মাধ্যেমে সমাজের সাধারণ মানুষের মাঝে বাল্য বিয়ের কুফল সংক্রান্ত ম্যাসেজ আমরা পৌঁছে দিচ্ছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ