• সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ অপরাহ্ন

মানবদেহে লুকিয়ে ক্যান্সার প্রতিরোধের অস্ত্র!

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৩

ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শরীরকে সাহায্য করতে পারে এমন একটি প্রাচীন ভাইরাসের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সেটি আবার লুকিয়ে রয়েছে মানবদেহেরই ডিএনএতে।

ফ্রান্সিক ক্রিক ইন্সটিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে শরীরে ক্যান্সার কোষগুলো যখন ছড়িয়ে পড়ছে তখন পুরোনো এই ভাইরাসের সুপ্ত থাকা অবশিষ্টাংশ জেগে উঠছে। এটা অবচেতনেই টিউমারকে টার্গেট বানিয়ে আক্রমণ করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে।

এ বিষয়টিকেই ক্যান্সারের ভ্যাকসিন তৈরিতে কাজে লাগাতে চান বিজ্ঞানীরা।

ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের এসোসিয়েট রিসার্চ ডিরেক্টর প্রফেসর জুলিয়ান ডাউনওয়ার্ড বলছেন, অ্যান্টিবডি যেসব ভাইরাসকে শনাক্ত করছে সেগুলোর মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করছে সুপ্ত থাকা রেট্রোভাইরাস।

রেট্রোভাইরাসের তাদের ভেতরেই তাদের নিজস্ব জেনেটিক নির্দেশনার কপি রেখে দেয়ার এক ধরনের কৌশল আছে। এর ৮ শতাংশের বেশি যাকে আমরা হিউম্যান ডিএনএ মনে করি, সেটি আসলে এ ধরনের ভাইরাসের উৎস।

 

কিছু রেট্রোভাইরাস কোটি বছর আগে জেনেটিক কোডের ফিক্সচারে পরিণত হয়েছিল এবং আমাদের বিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো ধারণ করেছে। অন্য রেট্রোভাইরাসগুলো হয়তো কয়েক হাজার বছর আগে আমাদের ডিএনএতে প্রবেশ করেছে।

সময়ের আবর্তে বাইরের নির্দেশনাগুলো কো-অপ্ট হয়েছে এবং শরীরের কোষের মধ্যে কাজ করেছে। কিন্তু অন্যগুলো সেটি ছড়াতে শক্তভাবে বাধা দিয়েছে।

বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের রেট্রোভাইরাল ইমিওনলিজির প্রধান প্রফেসর জর্জ ক্যাসিওটিস বলছেন, রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াটি একটি কৌশল যা বিশ্বাস করে যে টিউমার কোষগুলো আক্রান্ত হয়েছে এবং এটা চেষ্টা করে ভাইরাসকে দূর করতে। সুতরাং এটা হলো একটা সতর্কীকরণ প্রক্রিয়া।

অ্যান্টিবডিগুলো রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ার অন্য অংশগুলোকে সক্রিয় করে আক্রান্ত কোষকে মেরে ফেলার জন্য। আর রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া ভাইরাসটিকে ঠেকাতে চেষ্টা করে।

প্রফেসর জর্জ ক্যাসিওটিস বলছেন রেট্রোভাইরাসের ভূমিকার এমন পরিবর্তন গুরুত্বপূর্ণ । কারণ একটা সময় হয়তো এই ভাইরাসই ক্যান্সারের জন্য দায়ী ছিল কিন্তু সেটিই এখন ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দিচ্ছে।

নেচার জার্নালে এই গবেষণা সম্পর্কিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে কিভাবে শরীরে এটা স্বাভাবিকভাবে ঘটে। কিন্তু গবেষকরা এটাকে আরও এগিয়ে নিতে চান ভ্যাকসিন তৈরির মাধ্যমে।

প্রফেসর ক্যাসিওটিস বলছেন, এটা যদি আমরা করতে পারি তাহলে হয়তো চিকিৎসার জন্যই ভ্যাকসিন নয় বরং আগেই প্রতিরোধের জন্যও ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারব।

আশা করা হচ্ছে এটি গবেষকদের ক্যান্সার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাচ্ছেন সেগুলোতেও সহায়তা করবে।

যুক্তরাজ্যের ক্যান্সার গবেষক ড. ক্লেয়ার ব্রমলে বলছেন, আমাদের সবার জিনের মধ্যে প্রাচীন ভাইরাসের ডিএনএ আছে, এই চমৎকার গবেষণায় সেটিই উঠে এসেছে যে কীভাবে রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়া সেটিকে চিহ্নিত করে এবং ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে সহায়তা করে।

তিনি বলেন ভ্যাকসিনের জন্য হয়তো আরও গবেষণার প্রয়োজন কিন্তু এই গবেষণা শরীর ভিত্তিক গবেষণা এক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে যার মাধ্যমে হয়তো একদিন ক্যান্সার চিকিৎসা বাস্তবতায় পরিণত হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ