• শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

উ. কোরিয়ায় পালানো মার্কিন সেনার বিষয়ে নতুন করে যা জানা গেল

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বুধবার, ১৯ জুলাই, ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক কোনো অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করায় তাকে আটক করা হয়েছে
উত্তর কোরিয়ায় পালিয়ে গেছেন এক মার্কিন সেনা। তার বিষয়ে নতুন করে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ বিষয়ে জাতিসংঘ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এক নাগরিক কোনো অনুমতি ছাড়াই দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করে উত্তর কোরিয়ায় অনুপ্রবেশ করায় তাকে আটক করা হয়েছে।

কোরীয় উপদ্বীপে নিয়োজিত মার্কিন সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে ২৩ বছর বয়সী ওই ব্যক্তি একজন প্রাইভেট সেকেন্ড ক্লাস পদমর্যাদার মার্কিন সেনা সদস্য। তার নাম ট্র্যাভিস কিং।

টুইটারে পোস্ট করা এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, “আমরা ধারণা করছি তিনি বর্তমানে উত্তর কোরিয়ার হেফাজতে আছেন এবং এই ঘটনার সমাধানে আমরা কোরিয়ান পিপলস আর্মির (কেপিএ) সঙ্গে কাজ করছি।”

মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে যে তারা তাদের সেনা আটকের ঘটনায় বেশ উদ্বিগ্ন এবং তারা এই “পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদন্ত করছে”।

মার্কিন কর্মকর্তারা সিবিএস নিউজকে জানিয়েছেন, কিং সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি কারাগারে আটক ছিলেন। শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল।

এজন্য এক সপ্তাহ আগে তাকে দক্ষিণ কোরিয়ার সেনা ঘাঁটি ক্যাম্প হামফ্রেস থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

কিন্তু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার বিমানে আর ওঠেননি। দক্ষিণ কোরিয়ার ইনচেন বিমানবন্দরের কাস্টমস থেকেই হঠাৎ গায়েব হয়ে যান।

তিনি কোনোভাবে টার্মিনাল থেকে বেরিয়ে উত্তর কোরিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়ায়র (জেএসএ) সীমান্ত সফরে যোগ দেন। যা বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরে।

ওই সফরের সময়ই সীমান্ত অতিক্রম করেন তিনি। এরপর থেকে তার সঙ্গে কারও কোনো যোগাযোগ হয়নি।

কোরিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন বাহিনী ঘটনাটি তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন, একজন সিনিয়র আমেরিকান কমান্ডার। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যেই এই সীমান্ত অতিক্রমের বিষয়টি সামনে এলো।

কোরীয় উপদ্বীপে সাম্প্রতিক উত্তেজনা বাড়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য এই ঘটনা নতুন সমস্যা তৈরি করতে পারে।

উত্তর কোরিয়ার কারাগারে সাধারণত মার্কিন বন্দীদের সঙ্গে নৃশংস আচরণ করা হয়। ২০১৮ সালে, উত্তর কোরিয়া একজন আমেরিকান কলেজ ছাত্রকে মুক্তি দেয়, যিনি একটি হোটেল থেকে ব্যানার চুরির জন্য বন্দী হয়েছিলেন। তিনি কোমায় থাকা অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসেন এবং পরে মারা যান।

১৯৯৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া বেশ কয়েকবার মার্কিন নাগরিকদের আটক করেছে। তাদের মধ্যে পর্যটক, বিশেষজ্ঞ এবং সাংবাদিক ছিলেন।

২০১৭ সালের জুলাইয়ে, মার্কিন সরকার তাদের নাগরিকদের উত্তর কোরিয়ায় যাওয়া নিষিদ্ধ করেছিল।

মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা পরে সিবিএসকে বলেন যে ওই সেনা কর্মকর্তা ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’ সীমান্ত অতিক্রম করেছে। এর পেছনের কারণ সম্পর্কে এখনও জানা যায়নি।

এক প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসির মার্কিন পার্টনার সিবিএস নিউজকে ওই মার্কিন নাগরিকের সীমান্ত অতিক্রমের ঘটনাটি জানিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ওই ব্যক্তি তাদের ৪৩ জনের ট্যুর গ্রুপের একজন সদস্য ছিলেন। সীমান্তে পৌঁছাতেই তিনি কিছু ভবনের মধ্যে দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সীমান্তের দিকে দৌড়ে যান এবং “জোরে ‘হা হা হা’ করে হাসতে থাকেন”।

“আমি প্রথমে ভেবেছিলাম তিনি হয়তো রসিকতা করছেন, কিন্তু যখন তিনি আর ফিরে আসেননি, আমি বুঝতে পারলাম এটি নিছক কোনো রসিকতা ছিল না এবং তারপরে সবাই এই ঘটনায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে।”

তবে তিনি যখন সীমান্ত পার হচ্ছিলেন তখন ওইপারে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের দৃশ্যমান দেখা যায়নি বলে তিনি জানান।

১৯৫৩ সালের যুদ্ধবিরতি চুক্তির মাধ্যমে কোরিয়ান যুদ্ধের অবসান হয়েছিল। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও দক্ষিণ কোরিয়ায় তাদের সেনা মোতায়েন রেখেছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮ হাজার আমেরিকান সেনা মোতায়েন রয়েছে- এটা বিদেশি অঞ্চলে বিশেষ করে জাপান ও জার্মানির পরে আমেরিকার তৃতীয় বৃহত্তম সামরিক উপস্থিতি। দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তম সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।

সেখানে মার্কিন সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে, এটি একটি নিরাপত্তা জোটের অংশ যা ৫০-এর দশকে কোরিয়ান যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তৈরি হয়েছিল।

৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের অংশীদারিত্ব অব্যাহত রেখেছে। কারণ, যুদ্ধবিরতি যুদ্ধ বন্ধ করলেও কোরিয়ান যুদ্ধ আসলে শেষ হয়নি।

উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাদের মিত্রদের মধ্যে বিরোধের অবসানে এখনও কোনো চুক্তি হয়নি।

উত্তর কোরিয়া নামের দেশটি যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়া উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ এটি ঘন ঘন তার ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা পরীক্ষা করে এবং তার পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বিকাশের জন্য কাজ করছে।

 

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ