সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় যোগদানের পর ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব অর্থনৈতিক বিষয়ক জোট ব্রিকসের সদস্য পদ লাভ করে। প্রথম উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, চীন ও ভারত ব্রিক’ গ্রুপ গঠনের প্রস্তাব করেছিল। অবশেষে, ২০০৯ সালের ১৬ জুন ‘ব্রিক’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ২০১০ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে এর নাম ‘ব্রিক’ থেকে ‘ব্রিকস’ পরিবর্তিত হয়।
দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে পরিচিত স্যান্ডটন শহরে ১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসি ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে গত বৃহস্পতিবার সকালে সেদেশে পৌঁছেছেন। এই সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট ইরান, আর্জেন্টিনা, সৌদি আরব, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইথিওপিয়ার এই গ্রুপে যোগদানের কথা ঘোষণা করেন।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ব্রিকস গ্রুপে ইরানের যোগদানের ঘটনা দেশটির পররাষ্ট্রনীতিতে ইরানের ১৩তম সরকারের জন্য তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সাংহাই সহযোগিতা সংস্থায় যোগদান এবং সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপন ছিল পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে ইরান সরকারের আরো দুটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। ব্রিকস একটি আন্তঃমহাদেশীয় জোট এবং এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপ মহাদেশের দেশগুলো যার প্রত্যেকটি বিশ্ব অর্থনীতির উদীয়মান শক্তি। এর পাশাপাশি এই জোটের দুটি সদস্য দেশ অর্থাৎ রাশিয়া ও চীন হচ্ছে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং তাদের ভেটো ক্ষমতা রয়েছে। এ কারণে ব্রিক্সে এই দুটি দেশের উপস্থিতিকে গুরুপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ইরানের সাংহাই ও ব্রিকস-এ যোগদানের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হলো যে- বিশ্বব্যবস্থায় ইরানকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা যে ব্যর্থ হয়েছে তাই নয় একইসাথে ইরানের সাথে সম্পর্ক জোরদার করাকে স্বাগত জানিয়েছে উদীয়মান এ শক্তিগুলো।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ইরান ব্রিকসে যোগ দেয়ার ফলে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে উঠে বিশ্বের দেশগুলোর সাথে রাজনৈতিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক বিস্তারের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, ৩০০ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার ব্রিকস দেশগুলো যা বিশ্বের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ এবং পৃথিবীর এক তৃতীয়াংশের সমান এলাকা রয়েছে যা ইরানের সাথে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এ দেশগুলোর রয়েছে ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-কৌশলগত অবস্থান, বিপুল সম্পদ, বিশেষজ্ঞ ও দক্ষ জনশক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যা ব্রিক্সকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। ব্রিক্সে ইরানের আনুষ্ঠানিক সদস্য পদ লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে করে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় নিষেধাজ্ঞার ধকল কাটিয়ে উঠতে ইরান সক্ষম হবে।
রাশিয়ায় নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি ব্রিকস গ্রুপে ইরানের সদস্যপদ সম্পর্কে বলেছেন, এটা ইরানের পররাষ্ট্রনীতিতে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নতুন সুযোগ এনে দেবে।
ব্রিক্স-এর অন্যতম লক্ষ্য হলো- আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের একক আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসা। তাই এতে ইরান উপকৃত হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।
সূত্র : পার্সটুডে