আলু নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। এখনো হচ্ছে। তারপরও আলু আবাদের কৃষক বসে নেই। তারা আগাম জাতের আলু বীজ বপন শুরু করেছে। বগুড়া অঞ্চলে আলুর আগাম আবাদকে বলা হয় ‘আগুর’। একইসঙ্গে কৃষক সবজি আবাদের ফলন বাড়িয়েছে। ফলছে ভর বছর।
বর্তমানে শীতের অনেকটা আগেই সকল ধরনের সবজি বাজারে নেমেছে। যারা আলু সংরক্ষণ করেন তাদের আলু বাজারে এসেছে। তবে দাম কমছে না। বগুড়া অঞ্চলে বীজ আলু (স্থানীয় কথায় বেছন) বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪২ টাকা।
মাঠের কৃষক বলছেন, আলুর আগাম আবাদের পর প্রকৃত আলুর চাষ শুরু হবে অগ্রহায়নে আমন মাড়াই কাটাইয়ের পর। অতীতে আলুর আবাদ প্রধান এলাকা ছিল বৃহত্তর বগুড়া (বগুড়া জয়পুরহাট)। বর্তমানে উত্তরাঞ্চলের প্রতিটি জেলায় আলু ফলছে। উত্তরাঞ্চলের চারটি (বগুড়া, রাজশাহী, রংপুর ও দিনাজপুর) আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ৩ লাখ ৫০ হেক্টরে আলু আবাদের টার্গেট করে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৯০ লাখ মেট্রিক টন। আলু উৎপাদন প্রধান বগুড়া অঞ্চলে গত মৌসুমে আলুর চাষ হয় ৫৩ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে।
উৎপাদন হয় ১২ লাখ ২৫ হাজার ১৮০ টন। জয়পুরহাটে গত মৌসুমে আলুর আবাদ হয় ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে। উৎপাদিত হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ টন। আলুর উল্লেখযোগ্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্টেরিকা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, লাল পাকড়ি ইত্যাদি। বগুড়া অঞ্চলে লাল আঠালো ছোট এক ধরনের আলু উৎপাদন হয় নাম ‘হাগরাই’। দামও বেশি। চাহিদাও অনেক। ছানাভর্তার জন্য এই আলু খুবই স্বাদের। বিদেশ গমন যাত্রীরা হাগরাই আলু লাগেজে নিয়ে যান।
আলু রপ্তানি সমিতির এক সূত্র জানান, বিএডিসি রপ্তানি উপযোগী দশটি উন্নতজাত উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে আলু-১ সানসাইন, আলু-৭ টুইনএ্যানি, আলু-৮ লবেলো আলু-৯ সান্তনা রপ্তানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। উদ্ভাবিত জাতের আলু উৎপাদনে খরচ বেশি। রপ্তানি হয় বেশি। দেশে আলু উৎপাদন প্রতিবছর বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলুর আবাদ হয় ৪ দশমিক ৬০ লাখ জমিতে। উৎপাদিত হয় ১ কোটি ১৯ লাখ টন। কৃষি বিভাগ সূত্র জানায় আলুর উৎপাদন গড়ে প্রতি হেক্টরে ২৫ দশমিক ৭৭ টন। উন্নতজাতের আলুর ফলন বেশি।
বগুড়ার শিবগঞ্জের গুজিয়া গ্রামের কৃষক সোলায়মান জানালেন গতবছর তিন বিঘা জমিতে আলু আবাদ করে লাভ করেছিলেন। কিছু আলু হিমাগারে রেখেছিলেন। হিমাগার থেকে আলু বের করার পর লোকসান গুণেছেন। তার অবস্থা দেখে অন্য কৃষক হিমাগার থেকে আলু বের করেনি। লোকসান গোনা কৃষকরা আগুর আলু আবাদ শুরু করেছে। মোকামতলার এক হিমাগার মালিক জানালেন, হিমাগারে রাখা অর্ধেক আলু কৃষক উত্তোলন করেনি।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত মৌসুমে বগুড়ায় টার্গেটের চেয়ে বেশি জমিতে আলু আবাদ করে ১৪ লাখ মে.টন উৎপাদিত হয়। বিক্রির পর কৃষক পরবর্তী মৌসুমের আগে বাজারে আলু ছাড়ার জন্য ৩৬টি হিমাগারে প্রায় সাড়ে তিন লাখ টন আলু সংরক্ষণ করে। এক সূত্র জানায়, এই আলুর অর্ধেক দাম ফেরত পায়নি কৃষক। লাভের আশায় মৌসুমের আগে আগুর আলু আবাদ শুরু করেছে। কৃষি বিভাগ জানায় চলতি মৌসুমে বগুড়া জেলায় আলু আবাদের টার্গেট করা হয়েছ প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর জমি। উৎপাদন আশা করা হয়েছে ১৩ লাখ মে.টন। এর সঙ্গে আগাম আলুর আবাদ শুরু হয়েছে অন্তত ১২ হাজার হেক্টরে।
বগুড়ার কৃষক আলতাফ আলী জানালেন যদিও এবার বীজের দাম বেশি। তারপরও তারা আলু আবাদকে ধরে রখেছে। মৌসুমেও আবাদ করবে। সূত্র জানায় বগুড়া অঞ্চলের চার জেলার ৬০টি হিমাগারে বীজ আলু সংরক্ষিত আছে প্রায় দেড় লাখ মে.টন। এর বাইরে বাজারে বীজ পাওয়া যাবে। আলু আবাদ সবচেয়ে বেশি হয় বগুড়া জয়পুরহাট ও দিনাজপুর জেলায়। সবচেয়ে কম হয় পাবনায়। উত্তরাঞ্চলে আলুর আবাদ বেড়েছে।