• রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ পূর্বাহ্ন

নতুন গভর্নিং বডি গঠনের আহ্বান

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারি করার দাবি

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ (ফাইল ছবি)

অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ায় শিক্ষার মান ধরে রাখা যাচ্ছে না। আর গভর্নিং বডির দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির ধারা অব্যাহত রাখতে নির্বাচনের ব্যবস্থা না করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয় মাঝে মধ্যেই। সারা দেশের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসি) সুপারিশে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলেও রাজধানীর মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দেওয়া হয় নন-এমপিও শিক্ষক। এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি করার দাবি জানিয়েছেন।

অভিভাবকদের অভিযোগ, গভর্নিং বডিই দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করছেন এবং গভর্নিং ও প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ সরাসরি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। কোটি কোটি টাকা পাবলিক মানি তছরূপ হচ্ছে অথচ দোষীদের শাস্তি দেওয়া যাচ্ছে না।

সম্প্রতি পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি, অধ্যক্ষের দুর্নীতি চিত্র উঠে আসে। কয়েক কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। চার শতাধিক শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অবৈধভাবে। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও বিধিবহির্ভূতভাবে অর্থ উত্তোলন করেছেন। অনেক শিক্ষকের সনদ জাল ধরা পড়েছে ডিআইএ এর পরিদর্শন প্রতিবেদনে। অধ্যক্ষ নিজে প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বসবাস করে বাড়িভাড়া নিয়েছেন। অন্যদিকে এমপিওভুক্ত শিক্ষক হওয়ার কারণে সরকারি বাড়িভাড়াও নিয়েছেন। দায়িত্বভাতার নামে লুটপাট করেছেন কোটি টাকা। অর্থ লুটপাটে বিভিন্ন খাত উপখাত তৈরি করে অধ্যক্ষকে অর্থ আত্মসাতের পথ তৈরি করে দিয়েছে গভর্নিং বডি। আর গভর্নিং বডির সভাপতিসহ অন্য সদস্যরা লুটপাটে অংশ নিয়েছেন।

গভর্নিং বডির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে নতুন গভর্নিং বডি গঠনেরও সুপারিশ করা হয়। বর্তমান গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর। শিক্ষার মানোন্নয়নে গভর্নিং বডি কী পদক্ষেপ নিয়েছে তা পরিলক্ষিত হয়নি। বরং পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমে বিভিন্ন বেআইনি বিধিবহির্ভূত, অনৈতিক এবং আর্থিক অনিয়মের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৪ সালে দুই দফায় ছয় মাস করে এক বছর ছিল অ্যাডহক কমিটি। এরপর ২০১৫ সাল পর্যন্ত দুই বছর চালিয়েছে বিশেষ কমিটি।

এরপর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা দিয়ে ছয় মাস করে পর পর দুই বার অ্যাডহক কমিটি চালায় প্রতিষ্ঠানটি। ২০১৭ সালে দুই বছরের নিয়মিত কমিটিতে আনা হয় প্রশাসন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা (সচিব)। একই সভাপতি দিয়ে আবারও দুই বছরের নিয়মিত কমিটি গঠন করা হয় এবং ২০১৯ সালের ১০ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা হয়। ২০২১ সালে প্রশাসন ক্যাডারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাকে সভাপতি করে অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয় ছয় মাসের। এরপর ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে দুই বছরের নিয়মিত কমিটি প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে। আগামী ১৯ নভেম্বর এই কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

অভিভাবকরা বলেন, ২০১৬ সালের ৩০ আগস্ট থেকে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সভাপতি করে বর্তমান মেয়াদ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হলেও দুর্নীতি দিন দিন বেড়েছে, কমেনি। বরং সম্প্রতি গভর্নিং বডির সভাপতি ও সদস্যরা টিউশন ফির টাকা দিয়ে নিজেরা ব্লেজার কিনেছেন। ডিআইইয়ের প্রতিবেদনে ব্লেজার কেনার তথ্য উঠে এসেছে।

ডিআইএ এর প্রতিবেদন দেখা গেছে, গভর্নিং বডির সভায় সদস্যদের সিটিং অ্যালাউন্স (সম্মানী) দেওয়া হয়। বিরাট অঙ্কের আপ্যায়ন গ্রহণ, কন্টিজেন্সি, গভর্নিং বডির সদস্যদের ব্লেজার গ্রহণ ও সম্মানী গ্রহণ করা হয়েছে। গভর্নিং বডির সদস্যরা প্রতিটি শাখা, প্রতিটি ব্রাঞ্চ থেকে এ ধরনের খরচ নিয়েছেন, যা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ব্যয় বৃদ্ধি করেছে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বেড়েছে। ব্লেজার কেনার জন্য সভাপতি ও সদস্যরা সম্মানী নিয়েছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৮২ টাকা। শিক্ষার্থীরা ভালো ফল করলেও সম্মানী নিয়েছে গভর্নিং বডি। গভর্নিং বডির দুর্নীতির কারণে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ ও তছরুপ হয়েছে প্রতিষ্ঠানের। আর এইসব টাকার যোগান এসেছে টিউশন ফি বাড়িয়ে দিয়ে।

এসব কারণে আত্মসাৎ করা অর্থ প্রতিষ্ঠান ও সরকারি কোষাগারে ফেরাতে নতুন গভর্নিং বডি গঠনের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির অভিভাবকরা। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন গভর্নিং বডি গঠন ও শিক্ষা বাণিজ্য বন্ধ করাতে সরকারি করারও দাবি জানানো হয়।

বুধবার (২৫ অক্টেবর) অভিভাবক ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল কবির দুলু বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতি ও শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্য ঠেকাতে নতুন গভর্নিং বডি গঠন করতে হবে। কমিটির মেয়াদ শেষে সে কারণে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা দরকার। কিন্তু নতুন গভর্নিং বডি গঠনের কোনও উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

দুর্নীতি ঠেকাতে ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিকে সরকারি করারও দাবি করেন তিনি। আরও বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে লেখাপড়ার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। কিন্তু বিগত ২০১১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে কারণে দ্রুত প্রতিষ্ঠানকে সরকারিভাবে পুর্ণাঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করতে জাতীয়করণ করা দরকার।

এদিকে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ বনশ্রী শাখার অভিভাবক ফোরামের সভায় আত্মসাৎ করা টাকা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনার দাবি জানানো হয়। ফেরামের সভাপতি আহসান উল্লা মানিক সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনা করেন ফোরামের বনশ্রী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. শাহ আলম শিকদার জয়। এছাড়া সভায় বক্তব্য রাখেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিম দেওয়ান।

সভায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের দুর্নীতি সংক্রান্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ আগামী ১ মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। আত্মসাৎ করা সমুদয় টাকা স্কুল ও সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ারও দাবি জানানো হয়। একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।

সভায় নতুন গর্ভনিং বডি গঠন ও নির্বাচনের দাবির পাশপাশি শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, পরীদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) সম্প্রতি প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডি, অধ্যক্ষের দুর্নীতি চিত্র উঠে আসে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিটি ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। শিক্ষক নিয়োগেও দুর্নীতি ধরা পড়ে ওই প্রতিবেদনে। গভর্নিং বডির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে নতুন গভর্নিং বডি গঠনেরও সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বর্তমান গভর্নিং বডির মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৯ নভেম্বর। শিক্ষার মানোন্নয়নে গভর্নিং বডি কী পদক্ষেপ নিয়েছেন তা পরিলক্ষিত হয়নি। বরং পরিচালনা কমিটির কার্যক্রমে বিভিন্ন বেআইনি বিধিবহির্ভূত, অনৈতিক এবং আর্থিক অনিয়মের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।

অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, কমিটির মেয়াদ প্রায় শেষ, কিন্তু গভর্নিং বডি গঠনের কোনও উদ্যোগ নেননি বর্তমান সভাপতি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ