প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে আমরা আল্লাহতায়ালাকে সেজদা করি। কেননা তিনি আমাদের স্রষ্টা।
আর তার ইবাদতের জন্যই আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। কেবল তিনিই একমাত্র ইবাদতের উপযুক্ত। আল্লাহতায়ালাকে ছাড়া অন্য কাউকে সেজদা করা সম্পূর্ণ হারাম। সেটা কারো সম্মান, মর্যাদা আর যে অর্থেই হোক না কেন।
এ বিষয়ে ইমাম জাসসাস (রহ.) আহকামুল কোরআন গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন, পূর্ববর্তী নবীদের শরিয়তে বড়দের প্রতি সম্মানসূচক সেজদা করা বৈধ ছিল। শরিয়তে মুহাম্মদিতে তা রহিত হয়ে গেছে।
বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পদ্ধতি হিসেবে এখন শুধু সালাম ও মুসাফাহার অনুমতি রয়েছে। রুকু-সেজদা এবং নামাজের মতো করে হাত বেঁধে দাঁড়ানোকে সম্পূর্ণ হারাম করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা ছাড়া কাউকে সেজদা করা হারাম। এই সেজদা দুনিয়ার মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি আত্মসমর্পণের চূড়ান্ত নমুনা। নামাজে প্রতি রাকাতে দু’টি সেজদা আদায় করতে হয়; প্রথম সেজদা থেকে মাথা উঠানোর অর্থ হলো- আমরা মাটি থেকে উত্থিত হয়েছি এবং আবার পুনরায় সেজদাবনত হওয়ার অর্থ হচ্ছে- আমরা পুনরায় মাটিতে প্রবেশ করব। এটাই আমাদের শেষ পরিণতি।
সেজদায় ‘সুবহানা রাব্বিয়াল ওয়া’ পড়তে হয়। সুবহানাহা শব্দের অর্থ আল্লাহ পুতপবিত্র এবং আলা অর্থ আল্লাহ সব কিছুর উর্দ্ধে। অর্থাৎ তিনিই সব কিছুর অধিপতি ও পালনকর্তা।
সুতরাং নামাজের সেজদার রহস্য হচ্ছে, সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য প্রকাশ; কাজেই আমরা যখন সেজদার উপরোক্ত অর্থ ও ব্যাখ্যাকে স্মরণে রেখে নামাজের প্রতি রাকাতে সেজদাবনত হব, তখন হৃদয়-মনে আলাদা প্রশান্তি অনুভব করব। যে প্রশান্তির কারণে আল্লাহতায়ালা চূড়ান্ত আনুগত্যের পুনরাবৃত্তির ইচ্ছা মনে জাগবে বেশি বেশি।
ইবাদতের মূল যে নামাজ, তাতে চার রকমের কাজ রয়েছে। যথা দাঁড়ানো, বসা, রুকু ও সেজদা করা। তন্মধ্যে প্রথম দু’টি মানুষ অভ্যাসগতভাবে নিজস্ব প্রয়োজনেও করে। এবং নামাজে তা ইবাদত হিসেবেও করে। কিন্তু বাকি দু’টি কাজ এমন, যা ইবাদত ছাড়া কেউ করে না। আর এ দুটি কাজ এত মর্যাদাশীল যা আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে মেনে নেওয়ার এক প্রকার স্বীকৃতি। গোলাম হিসেবে মহান প্রভুর কাছে নিজেকে সমর্পণ করা বোঝায় এই রুকু, সেজদার মাধ্যমে। তাই এটা শুধু ইবাদত হিসেবেই গণ্য হবে, অন্য কোনো অর্থে নয়।