ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধের জেরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনার মধ্যেই ইসরায়েল এবার ইরানে হামলা চালিয়েছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
শুক্রবার ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ এর প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়।
ইরানের সামরিক বাহিনীর এলিট শাখা ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কর্পস বা আইআরজিসি সংশ্লিষ্ট সামরিক কৌশলবিদ এবং দুই পশ্চিমা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহে ইরানের দুটি বড় গ্যাস পাইপলাইনে ইসরায়েল হামলা চালিয়েছে। ওই দুটি পাইপলাইন দিয়ে ইরানের দক্ষিণাঞ্চল থেকে রাজধানী শহর তেহরান ও অন্যান্য প্রধান শহরগুলোতে গ্যাস সরবরাহ করা হয়। পাইপ দুটির একাধিক স্থানে হামলা চালায় ইসরায়েল।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে বলেছে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “ওই হামলার জেরে ‘ইরানের দৈনিক প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনের প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।”
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্যাস পাইপলাইনে হামলার ফলে ইরানের ফারস এবং চাহার মহল বখতিয়ারি-সহ বেশ কয়েকটি প্রদেশে লাখ লাখ মানুষের তাপ ও রান্নার গ্যাসের সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে।
ইসরায়েল এর আগেও ইরানের পারমাণবিক এবং একাধিক সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে বসবাসকারী ইরানি কমান্ডার এবং বিজ্ঞানীদের হত্যারও অভিযোগও রয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে।
ইরানের স্থাপনায় ইসরায়েলের এই হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই হামলাকে দুই দেশের মধ্যে একটি ‘ছায়া যুদ্ধ’ হিসেবে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে সাইবার আক্রমণ, স্থল, আকাশ বা সমুদ্রের বিভিন্ন ফ্রন্টে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে পারে।
কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি এই হামলায় ইরানের জ্বালানি অবকাঠামোর সেই অংশকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়, যার উপর দেশটির ‘শিল্প, কারখানা এবং লাখ লাখ বেসামরিক মানুষ নির্ভরশীল’।
ইরানের তেলমন্ত্রী স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইরানের বিভিন্ন প্রদেশ ও শহরে গ্যাস প্রবাহ ব্যাহত করার পরিকল্পনা থেকেই এই হামলা করা হয়েছে। তবে তিনি এই হামলার জন্য প্রকাশ্যে ইসরায়েল বা অন্য কাউকে দায়ী করেননি।
পশ্চিমা কর্মকর্তারা এবং আইআরজিসি কৌশলবিদ বলেছেন, ইসরায়েল ইরানের গ্যাস পাইপলাইনে যেভাবে করেছে তাতে ইহুদি রাষ্ট্রটিকে ইরানের অবকাঠামো সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। একই সঙ্গে দুটি পাইপলাইন আঘাত করার ক্ষেত্রে অবশ্যই ইসরায়েলকে চরম সমন্বয়ের সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে।
জানা গেছে, হামলায় বেসামরিক লোকদের সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে দুই পশ্চিমা কর্মকর্তার একজন বলেছেন, ইরান সহজেই ক্ষতি মেরামত করতে পারবে।
তারা বলেছেন, এই হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল হয়তো ইরানকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছে যে, তারা চাইলে এ ধরনের ক্ষতি করতে সক্ষম।
এদিকে, পাইপলাইনে হামলার প্রতিবেদনের একদিন আগে বুধবার ইসরায়েল ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে একটি রাসায়নিক কারখানার ভিতরে বিস্ফোরণ ঘটায় বলে পশ্চিমা কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস, জেরুজালেম পোস্ট, হারেৎজ