ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে নয়দিনে পশ্চিমবঙ্গে চারবার জনসভা করেছেন। গতকাল শনিবার (৯ মার্চ) শিলিগুড়ির জনসভার পাশাপাশি রেল ও সড়ক পথের একগুচ্ছ সরকারি প্রকল্পের সূচনা করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বাংলার উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগ শুরু হয়ে গেছে। নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ঢাকা অবধি মিতালী এক্সপ্রেস চলছে। বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মিলে আমরা রাধিকাপুর স্টেশনের সঙ্গে কানেক্টিভিটি বাড়াচ্ছি।
আমাদের মধ্যে এ ধরনের নেটওয়ার্ক যত মজবুত হবে, যত যোগাযোগ বাড়বে, তত ভারত ও বাংলাদেশের অর্থ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। একসঙ্গে রাজ্যটির উত্তরবঙ্গের পর্যটন ক্ষেত্রও বিকশিত হবে।
এরপরই শিলিগুড়ির কাওয়াখালী মাঠের রাজনীতির মঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হন মোদি। তার আমলে উন্নতির ধারা তুলে বলেন, বিজেপি সরকার ১০ বছরে ২৫ কোটি গরিবের উন্নতি করেছে।
মোদি গরিবদের জন্য সুযোগ-সুবিধার জন্য কাজ করে চলেছে। গরিবদের চুলা যাতে বন্ধ না হয় তার জন্য গ্যাস সিলিন্ডারের দাম কমানো হয়েছে। পাশাপাশি বিনামূল্যে কেন্দ্রীয় সরকারের রেশন ব্যবস্থা চালু আছে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের সেই রেশন প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে ঢুকতে দেয় না।
তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের রেশনের পাশাপাশি সাধারণের জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থা (আয়ুষ্মান প্রকল্প) বিনামূল্যে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখানে ভ্রষ্ট তৃণমূল তা চালু করতে দেয় না। মোদি দিল্লি থেকে বাংলার গরিবদের জন্য টাকা পাঠায়। কিন্তু তৃণমূল সরকার ভুয়া জব কার্ড বানিয়ে সেসব টাকা তুলে নিয়েছে। টিএমসি আপনাদের কষ্টের কোনো মূল্য দেয় না।
রাজ্যে নারীদের প্রতি অত্যাচার আর গরিবের অর্থ লুটে নেওয়া এটাই তৃণমূলের তোলাবাজদের কাজ।
কংগ্রেস ও তৃণমূলের নাম না নিয়ে এদিন মোদি বলেন, গরিব ও সাধারণদের প্রকল্পগুলো ওই পরিবারতন্ত্ররা একদমই পছন্দ না। তাদের পরিবারের সদস্যদের কীভাবে আয়-উন্নতি করা যায় এটাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। তৃণমূলের চিন্তা তাদের ভাতিজাকে (মমতার ভাতিজা অভিষেক) নিয়ে। আর কংগ্রেসের চিন্তা তাদের শাহী পরিবারের ছেলে মেয়েদের নিয়ে। আর বামদলগুলো নিজেদের ফায়দার জন্য এ দুই পরিবারগুলোকে মদত দিচ্ছে। ফলে এরা কেও গরিবের কথা ভাবে না।
মোদি বলেন, প্রতিনিয়ত উত্তরপ্রদেশে উন্নতি হচ্ছে। কাশ্মীরে আর্টিকেল ৩৭০ রধ করার পর উন্নতি হচ্ছে। ভারতের সব জায়গার উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু বাংলায় হতে দিচ্ছে না। আমরা জানি বাংলা বিকশিত হলে ভারত বিকশিত হবে। কিন্তু এরা বাংলাকে বিকশিত হতে দিচ্ছে না।
উত্তরবঙ্গের মানুষদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নর্থবেঙ্গলে টিএমসি, কংগ্রেস আর বামরা এতদিন ধরে সব ধরনের উন্নতি থেকে বঞ্চিত রেখেছে। অথচ উত্তরবঙ্গ বিকশিত করার জন্য বিজেপির কাছে স্পষ্ট রোলমণ্ডল আছে। ট্যুরিজম, টি ও টিম্বারস-এ তিন দিকের উন্নয়নের জন্য আমাদের কাছে রূপরেখা আছে। ছোট জমিতে কীভাবে চা চাষ বাড়ানো যায় তার প্রকল্প আমাদের কাছে রেডি আছে। কিন্তু আমরা ইমপ্লিমেন্ট করতে পারছি না। উত্তরবঙ্গে ট্রেনের গতি আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা পেয়েছে। এটা কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে তাই রেলে উন্নতি এসেছে। বিজেপির উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আপনাদের সহযোগিতা চাইছি। না হলে আমরা আগামী দিনে উত্তরবঙ্গে উন্নয়ন আনতে পারবো না। এরা হতে দেবে না। তাই নর্থবেঙ্গলের প্রতিটা আসন, প্রতিটা কেন্দ্রে বিজেপিকে জয়ী করুন।
এদিন সকালেই প্রথমে অরুণাচল প্রদেশ হয়ে আসামের কাজিরাঙ্গা, তারপর শিলিগুড়িতে আসেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। এখান থেকেই জনসভার উদ্দেশে উত্তরপ্রদেশের কাশি যাবেন তিনি। অপরদিকে সম্প্রতি হাইকোর্টের বিচারপতির আসন ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় গুরুত্ব পাচ্ছেন মোদির দলে। যে কারণে তিনিও মঞ্চ ভাগ করে নিলেন মোদির সঙ্গে। বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর এটাই ছিল তার প্রথম রাজনৈতিক বক্তব্য। তিনি মমতা আমলের চাকরি হারা মানুষদের জন্য সরব হন। দুর্বৃত্তদের গদিচ্যুত করার ডাক দিলেন তিনিও। তবে রাজনীতির ময়দানে অভিজিত একবারে অনভিজ্ঞ। ফলে তার বাচনভঙ্গি এখনও জোরালো হয়নি।