• বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৮ পূর্বাহ্ন

বিলুপ্তির পথে থাকা এশিয়ান প্রজাতির বন্যহাতির সংখ্যা বাড়ছে সীমান্তাঞ্চলে

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২৪

গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে দিনকে দিন বাড়ছে বন্যহাতির সংখ্যা। এবছরই প্রায় অর্ধশত হাতির শাবকের জন্ম হয়েছে বলে বন বিভাগ জানিয়েছ। ইতোপূর্বে গারো পাহাড়ে ১০০ থেকে ১২০টি বন্যহাতির বিচরণ লক্ষ্য করা গেলেও বর্তমানে বেড়ে ১৭০ টিতে দাঁড়িয়েছে বলে বন কর্মকর্তাদের ধারণা। বন কর্মকর্তাদের তথ্যানুযায়ী,গারো পাহাড়ে ক্রমাগত প্রজননে বন্যহাতির বংশ বিস্তার ঘটছে। এই বছরই প্রায় ৫০টি হাতির শাবকের জন্ম হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে এশিয়ান প্রজাতির বন্যহাতির সংখ্যা দিন দিন বিলুপ্তির পথে বলে হাতি গবেষকগণ উদ্বেগ জানালেও গারো পাহাড়ে আশার আলো দেখছেন বন কর্মকর্তাগণ। শেরপুর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, শেরপুরে হাতির সংখ্যা বাড়ছে। এটাই সঠিক তথ্য। হাতির প্রতি পালেই বিভিন্ন বয়সের হাতির বাচ্চা দেখা যাচ্ছে।

আমাদের ড্রোন ক্যামেরায় বনের ভিতর ৩৪ টি হাতির একটি পালে ৮ থেকে ১০টি বাচ্চা দেখা গেছে। অর্থাৎ ২৪টি হাতির সঙ্গে ১০ টি হাতির বাচ্চা। এটি খুবই আশার কথা। তিনি দাবী করেন, এই অঞ্চলে হাতির আবাসস্থল বৃদ্ধিও খাদ্য সংকট কমে আসায় দিনকে দিন হাতির সংখ্যা বাড়ছে। যদিও চার বছর পর পর হাতি শাবক প্রসব করে। তিনি বলেন, হাতি রক্ষায় ২০১৪ সাল থেকে শেরপুরের ৩টি রেঞ্জের ৫০০ হেক্টরে হাতির খাদ্য বান্ধব গাছ রোপণ করা হয়েছে।

 

শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জ অফিসার বলেন, সর্বশেষ ২২ নভেম্বর মধ্যরাতে বালিজুরি রেঞ্জ অফিসের পেছনের জঙ্গলে একটি হাতি শাবকের জন্ম হয়। তার ২-৩ মাস আগেও আরও কয়েকটি হাতি শাবকের জন্ম হয়। তিনি দাবী করেন, বালিজুরি রেঞ্জে বেশ কিছু গভীর বন থাকায় প্রায় ৩টি পালে বিভক্ত হয়ে হাতির পাল বিচরণ করে আসছে। ৩ পালে ৩০-৩৫টি করে হাতি রয়েছে। প্রতিটি পালে ৭-৮টি করে হাতি শাবক দেখা যায়। বালিজুরি রেঞ্জ অফিসের পাশেই জন্ম নেয়া হাতি শাবকটি সুস্থ রয়েছে। এ দিকে সীমান্তাঞ্চলের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার গারো পাহাড়াঞ্চলে প্রায়ই বন্যহাতির আক্রমণের শিকার হচ্ছে স্থানীয়রা। আক্রমণে মানুষ মারা যাওয়ার ঘটনা যেমন ঘটছে। তেমনই রয়েছে মানুষের হাতে বন্যহাতির মৃত্যুর ঘটনা। বন্যহাতির তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে খেতের ফসল।

 

তছনছ হচ্ছে ঘরবাড়ি ও গাছপালা। ২০১৪ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গারো পাহাড়ের ময়মনসিংহ অঞ্চলের বন্যহাতি সংরক্ষণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর ও জামালপুর জেলার গারো পাহাড় সীমান্তাঞ্চলে বন্য হাতির আক্রমণে মানুষ মারা গেছে ৪৩ জন। ময়মনসিংহ জেলায় ১০ জন, জামালপুর জেলায় ৩ জন, নেত্রকোনা জেলায় ৫ জন এবং শেরপুর জেলায়ই সর্বোচ্চ ২৫ জন। আর মানুষের হাতে হাতি মারা গেছে জামালপুর জেলায় ৩টি, নেত্রকোনা জেলায় ২টি এবং সর্বোচ্চ শেরপুর জেলায় ২৭ টি।

 

 

২০২১ সালের ১২ নভেম্বর শ্রীবরদী উপজেলায় এবং চলতি বছরের ১ নভেম্বর নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ট হাতি হত্যার অভিযোগে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়েছে। ‘রাংটিয়া রেঞ্জ অফিসার আব্দুল করিম বলেন, বন বিভাগ এবং স্থানীয় প্রশাসনের যৌথ সভায় হাতি রক্ষায় এবং জানমালের ক্ষতি রক্ষায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। সিদ্ধান্তের ফলে হাতির ওপর আক্রমণে বিরত থাকছেন সাধারণ মানুষ। তাদের খেতের ফসল বাঁচাতে হাতির ওপর হামলা না চালিয়ে বিভিন্ন কৌশলে হাতি তাড়ানোর জন্য বন বিভাগের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।’ ’শেরপুর পরিবেশবাদী যুব সংগঠন গ্রিন ভয়েসের সভাপতি কবি ও সাংবাদিক রফিক মজিদ বলেন, বিলুপ্তপ্রায় এশিয়ান প্রজাতির হাতির সংখ্যা বাড়ছে এটি খুবই আশার কথা। তবে আগামী দিনগুলোতে জানমালের রক্ষার পাশাপাশি হাতি রক্ষা করতে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের সুদৃষ্টি রাখা প্রয়োজন বলে মনে করি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ