• শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

ইতিহাস গড়লো ক্ষুদে নারী ফুটবলাররা

আপডেটঃ : সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭

কমলাপুর স্টেডিয়ামের গেটের সামনে শত শত মানুষের ভিড়। স্টেডিয়াম থেকে মাত্র বেরিয়ে এসেছেন সাফ অনূর্ধ্ব—১৫ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল উপভোগ করে। শামসুন নাহারের একমাত্র গোলে বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলা শেষ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে। আনন্দের রেশ তখনও টগবগ করে ফুটছে দর্শক শরীরে। হূদয়ে তখনও ফুটবলের নাচন। যারা পুরুষ ফুটবলে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা নারী ফুটবলে শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছেন। যা প্রত্যাশা করেননি তার চেয়েও বেশি কিছু পেয়ে ফুটবল দর্শক নারী ফুটবলের আগামীদিনের তারকাদের বাহবা দিতে কার্পণ্য করেননি। গোলকিপার মাহমুদা, আনাই মগিনি, শামসুন নাহার, নাজমা, নিলা, তহুরা, মারজিয়ারা টিম বাসে উঠে গেছেন। বাইরে পুলিশের বাঁশির শব্দে এলাকা সজাগ হয়ে উঠেছে। তারপরও উত্সুক দর্শকের ভীড় যেন থামানো যাচ্ছে না। ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলন শেষে অধিনায়ক মারিয়া মান্ডা যখন ট্রফি হাতে অন্যদের নিয়ে বাসে উঠতে গেলেন তখন দর্শক তুমুল করতালী দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন। নিরাপত্তা নিয়ে বাস ছুটল চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়দের বুকে আগলে।

কমলাপুর স্টেডিয়াম দেশের ফুটবলের জন্য স্মৃতি হয়ে থাকল। এই মাঠে মেয়েদের অনূর্ধ্ব—১৫ সাফের প্রথম আসরেই বাজিমাত করে দিল বাংলার মেয়েরা। ইতিহাসে নিজেদের নাম খোদাই করে নিল।

ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের যে কোনো পর্যায়ের ফুটবল ম্যাচ মানেই অলিখিত ফাইনাল। আর ফাইনাল ম্যাচ বা ট্রফি জয়ের লড়াই হলে তো কথাই নেই। গত বৃহস্পতিবার সাফে লিগের নিয়ম রক্ষার ম্যাচের অলিখিত ফাইনালে বাংলাদেশ ৩-০ গোলে হারিয়েছিল ভারতকে। তিন দিনের দিন ফাইনালে বাংলাদেশ আবার সেই ভারতকে হারিয়ে সোনালী রংয়ের ট্রফি উঁচিয়ে ধরল বাংলার মেয়েরা।

বয়সভিত্তিক ফুটবলে বাংলাদেশ টানা চার বার ভারতকে হারিয়ে নতুন একটির রেকর্ড গড়ে রাখল।

ফাইনালে উত্তজনা ছড়াবে। ৩-০ গোলের ব্যবধান আর হবে না। ভারত দেখিয়ে দেবে বাংলার নারী ফুটবলে জাগরণ উঠেনি। সেই শপথ নিয়ে খেলতে নামা ভারতকে নিজের সামর্থ্য মেলে ধরতে দেয়নি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল দল।

কমলাপুর স্টেডিয়ামে আসার কয়েক হাজার দর্শক ক্ষুদে নারী ফুটবলারদের খেলা দেখে অবাক হয়েছেন। কি অসাধারণ তাদের পায়ের কাজ। ফুটবল শৈলী দর্শক মুগ্ধতা ছড়িয়েছে। ইনসাইড আউট সাইড ডজগুলো চোখে লেগে আছে। প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের ফাঁকি দিয়ে বল নিয়ে বিপদ সীমায় ঢোকার যে কৌশল তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। বাম পায়ে বল রিসিভ করে ডান পায়ে টোকা দিয়ে ঢুকে পড়ে রানিং বলের পেছনে ছুটে যাওয়ার অসাধারণ দৃশ্যগুলো ছবির মতো মনে হয়েছে। ফ্রেমে রাখার মতো মনে হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করার ক্ষমতা তাদের।

ক্লাব ফুটবলে খেলে ৫০ লাখ ৬০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক পাওয়া জাতীয় দলের সিনিয়র খেলোয়াড়দের হাতে পড়ে দেশের ফুটবল যেভাবে রক্তাক্ত হয়েছে তা দেখে দর্শক মহলে তাদের দেশ প্রেম নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠেছিল। আর সুবিধা বঞ্চিত মেয়েরা নিজেদের দুঃখ-কষ্টের কথা মাটি চাপা দিয়ে দেশের ফুটবলের জন্য লড়াই করেছেন। দেশকে বুকে ধারণ করে কিভাবে ফুটবল যুদ্ধ করতে হয় তার জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ দিয়েছেন এই ক্ষুদে প্রতিভাবান মারজিয়া, তহুরা, নিলা, শামসুন নাহার, মানিকা, মারিয়া, নাজমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, দিপা, লাবণী, সাজোদারা।   ফুটবলাররা।

ভারতের মতো দলকে ফাইনালে তারা পাত্তাই দেয়নি। ১-০ গোলে জিতলেও আরো বড় ব্যবধানে জেতার সুযোগ নষ্ট করেছেন মেয়েরা নিজেরাই। সাফের টপ ফেভারিটের তকমা লাগিয়ে আসা ভারত ১-০ গোলে হারিয়েছিল নেপালকে। সেই ভারত ফাইনালে বাংলার মেয়েদের কাছে নাকানি চুবানি খেয়েছে। বাংলার মেয়েরা ভারতকে কোনো সুযোগই তৈরি করতে দেয়নি। প্রথম ৫৫ সেকেন্ডে তহুরা গোল করে ফেলেছিলেন। কিন্তু ভুটানের রেফারীর চোকি ওম ফাউলের দোহাই দিয়ে বাতিল করেন। তারপরও বাংলার মেয়েরা যেন রকেট গতিতে ফুটবল খেলল। হাফ ডজন কর্নার এবং একের পর এক সুযোগ তৈরি করে নিজেদের ভুলে ব্যর্থ হলেও কাঙ্ক্ষিত গোল পায় ৪১ মিনিটে। তহুরা হয়ে বলটা অধিনায়ক আনুচিং মগিনি শট করলেও বল ভারতের গোলকিপার মনিকা দেবীর উরুতে লেগে ফিরে আসলে শামুন নাহার বাতাসে ভাসিয়ে গোল করেন ১-০। ব্যস। এই একটি মহামূল্যবান গোল শোধ করা তো দূরের কথা ভারতকে একটি বারও বাংলার সীমানায় আতঙ্ক ছড়াতে দেয়নি আনাই, নাজমা, আঁখি, নিলারা। তহুরা গোলকিপারকে একা পেয়েও ব্যর্থ হয়েছেন। আনাইর হেড যায় বাইরে। শামসুন নাহার বল পেয়েও পা লাগাতে পারেননি। জয়ের ব্যবধানটাও বাড়েনি। তারপরও দর্শক খুশি ফুটবলে ক্ষুদে নারী ফুটবলাররা একটা সাফল্য এনে দিয়েছেন। এমন সান্ত্বনা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন দর্শক।

বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব—১৫

মাহমুদা আক্তার, আনাই মগিনি, শামসুন নাহার, নাজমা, আঁখি খাতুন, নিলা, মনিকা, মারিয়া মান্ডা, আনুচিং (শামসুন নাহার), তহুরা, মারজিয়া (ঋতুপর্ণা চাকমা)। অন্যরা হলেন— সাজেদা, খাতুন, দিপা, মুন্নি আক্তার, রুনা, সুলতানা পারভিন, সোহাগী, রুমি, রুপনা, সাগরিকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ