রংপুর অফিস॥
অল্প বৃষ্টিতেই নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত রাস্তায় পানি জমে থাকছে। ফলে চলাচলের রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া জলাবদ্ধার নিচের খাল-খন্দ ধারণা করতে না পারায় বিভিন্ন যানবাহন প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। এদিকে, জলাবদ্ধতার কারণে ভালো রাস্তায় খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়ে রাস্তাগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বর্ষার আগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করাসহ রাস্তাগুলো সংস্কার করা না হলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হবে নগরবাসীকে।
গতকাল রোববার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নগরীর জাহাজ কোম্পানী থেকে বেতপট্টি দেওয়ানবাড়ী রোড, পায়রা চত্বরের সাঈদ বেকারী সামনে, লালবাগ মোড়ের নূরানী হোটেলের সামনে, শাপলা থেকে টার্মিনাল, পিডিসির মোড় থেকে কেরানীপাড়া এবং ১৭ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু রাস্তাসহ নগরীর বিভিন্ন প্রধান প্রধান সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে গত শনিবার রাতের সামান্য বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। শুধু বৃষ্টির পানিই নয়, সড়কের আশে-পাশের নর্দমার নোংরা পানি সড়কে ছড়িয়ে পড়েছে। পানি নিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পরেও দিনের পর দিন থেকে যাচ্ছে সেই জলাবদ্ধতা। ফলে রাস্তাঘাটে চলাফেরা করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এদিকে, জলাবদ্ধতার কারণে রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় অনেক জায়গায় সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। কিছু কিছু জায়গায় আবার প্রায় হাটু পরিমান পানি জমেছে। সেখান দিয়ে অনেক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। অনেক জায়গায় জলাবদ্ধতার নিচের খানাখন্দ ধারণা করতে না পারায় রিক্সা ও ইজিবাইক উল্টে যাওয়াসহ নানা ধরণের দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া রাস্তার পাশের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় বেচা-কেনা বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এ রাস্তাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। টানা কয়েক দিন ধরে থাকে জলাবদ্ধতা। তখন এসকল রাস্তা দিয়ে চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। অপরদিকে, জলাবদ্ধতার কারণে অনেক ভালো রাস্তাও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জায়গায় আবার রাস্তার পিচ উঠে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও পানি নিষ্কাশন কিংবা রাস্তাগুলো সংস্কারে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তেমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। অথচ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিলো জলাবদ্ধতা নিরসন।
নগরীর দেওয়ানবাড়ী রোড সংলগ্ন একটি সিরামিক দোকানের স্বত্তাধিকারী জামাল হোসেন জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই এ রাস্তায় পানি জমে যায়। বৃষ্টি শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও দীর্ঘ সময় ধরে জমে থাকে পানি। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এখানে ড্রেনের কাজ চলছে। সেই ড্রেনের কাঁদা মাটি, নোংরা-আবর্জনা সব পানিতে মিশে গিয়ে একাকার অবস্থা হয়ে গেছে। ফলে দোকানে ক্রেতা আসতে পারে না। তিনি বলেন, এ বছর বৈশাখের আগ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সেই বৃষ্টির পানি এখনো রাস্তায় জমে আছে। বর্ষাকাল আসলে এ রাস্তার দশা আরো খারাপ হবে। তাই দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করার দাবি জানান তিনি।
ইজিবাইক চালক হাসান মিয়া জানান, জলাবদ্ধতার কারণে ইজিবাইক চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। গাড়ির ব্যাটারিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশে পানি ঢুকে যাওয়ায় নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এছাড়া অনেক জায়গায় পানির নিচে বড় বড় গর্ত থাকে। সেগুলো বুঝে ওঠতে না পারায় গাড়ি উল্টে যায়। ফলে ক’দিন পরপর গাড়ির ব্যাটারি, চাকাসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ মেরামত করতে হচ্ছে। এছাড়া রাস্তায় পানি জমে থাকার কারণে রাস্তা সরু হয়ে যাওয়ায় যানজটের দেখা দেয়।
স্টেশন এলাকার বাসিন্দা সোহেল মিয়া জানান, এমনিতে দীর্ঘদিন ধরে স্টেশন এলাকায় যোগাযোগের রাস্তাটির বেহাল দশা। সংস্কারের নামে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। তাই এই রাস্তায় কোনো যানবাহনেই আসতে চায় না। তার উপর স্থানে স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে রাস্তাটি চলাচলের জন্য একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দ্রুত রাস্তাটি সংস্কার করা না হলে বর্ষাকালে স্টেশনের সাথে নগরীর মানুষের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নগরীর রাস্তাগুলো পরিদর্শন করছি। যে সকল রাস্তায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় সেগুলো সংস্কারে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।