• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:২১ অপরাহ্ন

দামবৃদ্ধির আগে গ্যাস চুরি বন্ধ করতে হবে: গণশুণানিতে বিশেষজ্ঞরা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : মঙ্গলবার, ১২ জুন, ২০১৮

চুরি ও অপচয় বন্ধ না করে গ্যাসের দাম বাড়নো যৌক্তিক নয়। দেশে প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হয়। পুরোনো সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও শিল্পে দৈনিক ১০ থেকে ২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস অপচয় হয়। এই চুরি ও অপচয় বন্ধ করলে গ্যাস আমদানির প্রয়োজন পড়বে না। তাই চুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত গ্যাসের দামবৃদ্ধির কার্যক্রম স্থগিত রাখা উচিত।
মঙ্গলবার তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির গ্যাসের দাম বৃদ্ধির আবেদনের ওপর শুনানিতে উপস্থিত ভোক্তা প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা এই মতামত ব্যক্ত করেন। কাওরান বাজারের টিসিবি মিলনায়তনে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি চলাকালে টিসিবি ভবনের সামনে গণমোর্চা ও সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে।
এবার দাম বৃদ্ধির আওতায় থাকছে না গৃহস্থালি এবং বাণিজ্যিক গ্রাহকরা। দাম বাড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন, ক্যাপটিভ পাওয়ার (শিল্পের নিজস্ব বিদ্যুৎ), সার কারখানা, শিল্প উৎপাদন ও সিএনজি গ্রাহকদের। শুনানিতে কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য রহমান মুর্শেদ, মাহমুদুউল হক ভুঁইয়া, মো. আব্দুল আজিজ খান এবং মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। শুনানিতে জানানো হয় তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে গ্যাসের দাম ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির আবেদন করেছে। কোম্পানিটি তাদের বিতরণ মার্জিন প্রতি ঘনমিটারে ২২.৬৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮৯.৮৭ পয়সা করার প্রস্তাব দেয়। রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্যাসের দাম ১৪৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে। কারিগরি কমিটি গ্যাসের দামের সঙ্গে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল, জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল, সঞ্চালন ব্যয়, বিতরণ ব্যয় ধরে বৃদ্ধির হার হিসেব করেছে।
মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির তালিকায় থাকা নির্দিষ্ট শ্রেণির গ্রাহকরা বর্তমানে গড়ে তিন টাকা ৪৫ পয়সায় প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনে থাকে। এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর সব ধরনের তহবিল এবং চার্জ ধরে এই গ্যাসের দাম ঘনমিটার প্রতি ১১ টাকা ৭৫ পয়সা বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে তিতাস। কারিগরি কমিটি মনে করছে এই দর আট টাকা ৪১ পয়সা হওয়া যৌক্তিক। এতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তিতাসের কোন লোকসান হবে না।
শুনানিতে বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, জ্বালানি খাতের আয় ব্যয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। উৎপাদন পর্যায়ে গ্যাসের দাম নিয়ন্ত্রণে বিইআরসির ভূমিকা নেই। এই বিষয়ে সংস্কার দরকার। উৎপাদন, সরবরাহ সব ক্ষেত্রেই কমিশনের নিয়ন্ত্রণ জরুরী। গ্যাস দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের জন্য পৃথক তহবিল গঠনের পরামর্শ দেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গত ১০ থেকে ১৫ বছর ধরে একটি সংকট তৈরি করা হয়েছে। আর এখন সেই সংকটের মাসুল দিতে হচ্ছে পুরো জাতিকে। তিনি বলেন, গড়ে প্রতি বছর একটি কূপও খনন করা হয়নি। অনুসন্ধানে খুব একটা কাজ না হওয়াতে এখন এলএনজি আনতে হচ্ছে। যা দেশের মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে।
শুনানিতে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন-ক্যাবের উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, তিতাস প্রতি বছর লাভ হোক না হোক ২৫০ কোটি টাকা সরকার এবং শেয়ার মালিকদের দিচ্ছে। এজন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ তুলতে হচ্ছে। তিনি বলেন, জ্বালানি সচিব তার অধীনের কোম্পানিগুলোর বোর্ড প্রধান। ফলে এই কোম্পানিগুলো অনেক অনৈতিক চাপ মেনে নিতে বাধ্য হয়।
তিনি জানান,  দৈনিক ৩০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চুরি হচ্ছে। পুরাতন কারখানাগুলোতে ১০-১৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস অপচয় হচ্ছে। এসব দিকে নজর না দিয়ে সরকারের ঝোঁক এলএনজি আমদানির দিকে। প্রিপেইড মিটার স্থাপন করলেই করকারখানা ও গৃহস্থালিতে চুরি বন্ধ করা সম্ভব। কিন্তু এখনো এ খাতে অগ্রগতি খুব অল্প।
তিনি বলেন, জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি গ্যাসের সংযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। এই কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন শামসুল আলম। গণসংহতি আন্দোলনের জুনায়েদ সাকী বলেন, বিদ্যুৎ ঘাটতিকে পুঁজি করে কুইক রেন্টালের বোঝা যেভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্যাস সংকট জিইয়ে রেখে এলএনজি আমদানির পথ সুগম করা হয়েছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক শাহিদ আলম বলেন, এই খাতে আমাদের টিকে থাকতে হচ্ছে ভারত ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সাথে প্রতিযোগিতা করে। ভারত নিজেরাই তুলা উৎপাদন করে এবং যন্ত্রাংশ তৈরি করে। কিন্তু আমাদের সব কিছুই আমদানি নির্ভর। এরপরেও আমরা যে টিকে আছি যেটা সম্ভব হয়েছে জ্বালানির কারনে। কিন্তু ১০ বছরের ব্যবধানে যদি গ্যাসের দাম ৪০০ শতাংশ বাড়ানো হয়। তখন শিল্প কারখানা বন্ধ করা ছাড়া ব্যবসায়ীদের বিকল্প উপায় থাকবে না। তিনি নতুন করে গ্যাসের দাম না বাড়ানোর জন্য কমিশনের কাছে দাবি জানান।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page