• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৫০ অপরাহ্ন

ধাপে ধাপে ১২ বছরে ২০ কোটি টাকা ব্যয় তানোরে সেতু যন্ত্রণা !

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শুক্রবার, ২৯ জুন, ২০১৮

তানোর প্রতিনিধি॥
রাজশাহীর তানোরে শিব নদীর (বিলকুমারি বিল) ওপর নির্মিত সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফের ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর কর্মকর্তার নেপথ্যে সহযোগীতায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দীর্ঘ সূত্রতার সৃষ্টি হয়েছে।জানা গেছে, প্রায় এক দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রথমে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি ব্যয় ধরা হলেও দ্বিতীয়বার প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে এবং তৃতীয় বারে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। এভাবে প্রায় ১২ বছরে ধাপে ধাপে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হলেও সেতুর সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজ এখানো সম্পন্ন হয়নি, আবার যতটুকু হয়েছিল সেটি ভেঙ্গে পড়েছে ফলে সেতু যন্ত্রণা কাটছেই না। এদিকে একের পর এক সংযোগ নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি করা হলেও কাজের মাণের কোনো উন্নতি হয়নি। ফলে ব্যয় বাড়ানোয় একদিকে সরকারের অর্থ গচ্চা যাচ্ছে, অন্যদিকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পকেটভারী হচ্ছে। আর এসব অর্থের মধ্যে থেকে একটি অংশ ঢুকছে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একশ্রেণীর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার পকেটে। যে কারণে তারা বিষয়টি দেখেও না দেখার অভিনয় করে এড়িয়ে যাচ্ছে ও বার বার বরাদ্দ বৃদ্ধি করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্দেশ অমান্য করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংযোগ সড়ক নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে অনিয়মের মাধ্যমে রাঁতের আঁধারে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণের অভিযোগে রাজশাহী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মো¯তফা নির্মাণ কাজ বন্ধ করে এসব নিম্নমাণের কাদামাটি সরিয়ে নিয়ে ভালো ও শক্ত মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। কিšত্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওই নির্দেশ অমান্য রাঁতের আধাঁরে কাদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ কাজ করেছে ফলে এবারো সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে। সংযোগ সড়ক সরেজমিন পরিদর্শন করলেই এসব অনিয়মের সত্যতা পাওয়া যাবে। তানোরের গোল্লাাপাড়া গ্রামের আশরাফুল আলম, এমদাদুল হক, জয়দেব ভাদুড়ি, ও সোহেল রানা ডন অভিযোগ করে বলেন ঠিকাদার নিয়ম লঙ্ঘন করে রা¯তার পাশের ও পুকুরের নরম কাদামাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করছেন যে কারণে এবছরেও বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই সংযোগ সড়ক ভেঙ্গে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর তানোর ও মোহনপুর উপজেলার গ্রামীণ জনগোষ্ঠির মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে বিগত ২০০৫-০৬ অর্থবছরে শিব নদীর ওপর ২১৫ দশমিক ৮ মিটার দীর্ঘ এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় সেতু নির্মাণে প্রায় ৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। এদিকে কয়েক দফায় নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধি করে ২০১২ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। বিগত ২০১৩ সালে প্রায় এক দশমিক ৪৫০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরে টেন্ডার আহবান করা হয়। ঠিকাদারী কার্যাদেশ পায় মেসার্স ফরিদ কন্ট্রাকশন। তাদের কাছে থেকে কাজটি কিনে নেয় রাজশাহী শহরের মেসার্স ডন এন্টারপ্রাইজ। তারা কাজটি কেনার পরে দ্বিতীয় দফায় নির্মাণ ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি টাকা ও তৃতীয় দফায় ব্যয় বাড়িয়ে ৭ কোটি টাকা করা হয়। ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে বলা হয়। কিšত্ত এখানো নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতু নির্মাণে ১২ বছরে ধাপে ধাপে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিšত্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই সংযোগ সড়ক নির্মাণে নিম্নমাণের সামগ্রী ও কাঁদামাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় সেটি বার বার ভেঙ্গে পড়ছে। যে কারণে দীর্ঘ ১২ বছরেও সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়নি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী এলজিইডি’র (তৎকালীন) নির্বাহী প্রকৌশলী (এক্সচেঞ্জ) গোলাম মো¯তফা বলেন, ওই সময়ে কাঁদামাটি দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করায় ঠিকাদারকে এসব মাটি সরিয়ে ফেলে শক্ত ও ভালো মাটি দিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে বলা হয়েছে। এব্যাপারে তানোর এলজিইডির (তৎকালীন) সহকারী প্রকৌশলী রেজাউন নবী নির্মাণে নিম্নমাণের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কথা শিকার করে বলেন, তাদের আসলে কিছু করনীয় নাই। ঠিকাদার অনেক বড় মাপের মানুষ তারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে এভাবে কাজ করছে তারা আমাদের কোনো নির্দেশনা মানছেন না। তিনি বলেন, আমাদের আপত্তি সত্বেও ইতিমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বরাদ্দের সিংহভাগ উত্তোলন করে নিয়েছেন। এব্যাপারে তানোর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) আব্দুল্লাহ আল-মামুন কোনো মন্তব্য না করে সরাসরি তার কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলতে বলেছেন। এবাপারে মেসার্স ডন এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী হারুন অর রশিদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও মুঠোফোন রিসিভ না করায় তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এব্যাপারে সংযোগ সড়ক নির্মাণের দেখভালের দায়িত্বরত ম্যানেজার মুকুল বলেন, এক ঠিকাদারের কাছে থেকে কাজ নিয়ে কাজ করলে একটু এদিক-ওদিক হবে এটাকে অনিয়ম বলা উচিৎ নয়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ম-অনিয়ম বুঝিনা মালিক আমাকে যেভাবে নির্দেশ দিবেন আমি সেইভাবে কাজ করবো।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page