• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০২:১৭ অপরাহ্ন

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে চলছে গ্রাহক হয়রানী ॥ নিজস্ব নিয়ম চালানোর চেষ্টা

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৪ জুলাই, ২০১৮

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিসে সেবার নামে চলছে চরম গ্রাহক হয়রানী। নিজস্ব নিয়ম দিয়ে অফিস চালিয়ে গ্রাহক হয়রানী সৃষ্টির অভিযোগ গ্রাহকদের। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই নিজেদের নিয়মেই চলতে বাধ্য করা হচ্ছে গ্রাহকদের। আর নিজেদের নিয়মের বেড়াজালে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছেন অতিরিক্ত অর্থ বলেও অভিযোগ। এমনই ঘটনা ঘটেছে সম্প্রতি চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কানসাটস্থ শিবগঞ্জ জোনাল অফিসে। সরকারী নিয়ম মোতাবেক এবং সরকারী ছুটির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শুক্রবার ও শনিবার ব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছুটি থাকে। এই দু’দিন ব্যাংকে কোন লেনদেন হয়না, এটা সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে জ্ঞানী, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সবার জানা। কিন্তু চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস সেটিকে না মেনে নিজস্ব নিয়মে অফিস চালানোর চেষ্টার কারণে হয়রানীর শিকার হচ্ছে প্রায় ২ লক্ষাধিক সাধারণ গ্রাহক। এছাড়া পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারি অসৌজন্য আচরণ, অতিরিক্ত বিল, অফিসে বসেই মিটার রিডিং লেখাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজস্ব নিয়মে অফিস চালানোর চেষ্টার কারণে প্রায় ২ লক্ষাধিক সাধারণ গ্রাহক নির্ধারিত তারিখের মধ্যে বিল দিলেও, সাথে জরিমানাও গুনতে হয়েছে। যা নিয়ম বর্হিভূত।
জানা গেছে, শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের অধিন কানসাটসহ বিভিন্ন এলাকার গত জুন/২০১৮ মাসের বিল (বিলম্ব মাশুল ছাড়া) পরিশোধের শেষ তারিখ নির্ধারণ করে ২৯ জুন শুক্রবার। কিন্তু জেনে শুনে কেনই বা শুক্রবার ছুটির দিন বিল পরিশোধের শেষ দিন ধার্য করা হয়েছে সেটি গ্রাহকদের বোধগম্য নয়। গ্রাহকরা বর্তমানে সমিতির নিয়ম মোতাবেক সমিতির নির্ধারিত ব্যাংক বা জোনাল অফিসে বিল পরিশোধ করেন। অফিস নিয়ম মোতাবেক কোন কারণে বিল পরিশোধের শেষ দিন ছুটির দিন হলে পরবর্তী অফিস খোলার দিন বিল পরিশোধ করতে হয়, এটাই জেনে আসছে। কিন্তু ২৯জুন শুক্রবার ও ৩০ জুন শনিবার অফিস ছুটি থাকার কথা মাথায় নিয়েই গ্রাহকরা রবিবার বিল পরিশোধের জন্য গেলে সেখানে কর্তব্যরত কর্মকর্তা বিলম্ব মাশুলসহ বিল পরিশোধের জন্য গ্রাহককে বলেন। বিল পরিশোধ না করলে আবার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার ভয় রয়েছে। একান্ত বাধ্য হয়েই বিলম্ব মাশুলসহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন গ্রাহক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা গ্রহনও করেন। বিল পরিশোধকারী গ্রাহক এর গত ১জুলাই চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের সীল-স্বাক্ষরে পরিশোধীত বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫১৩৩, হিসাব নং-০২-৪৩৮-৬৯৫৫, বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০৯৩, হিসাব নং-০২-৪৩৮-১৭২০, বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০৪৭, হিসাব নং-০২-৪৩৮-১৭০০, বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০২৩, হিসাব নং-০২-৪৩৮-১৭৪০, বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০৩৯, হিসাব নং-০২-৪৩৮-৫৭৫০, বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০৪০, হিসাব নং-০২-৪৩৮-৫৮০০ ও বিল নং-১৯১-১৮০৬-৪৫০২২, হিসাব নং-০২-৪৩৮-১৭৩৫ নং বিলের কপিতে। এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিস নিজেদের মনগড়া মাইকিং করে শনিবার বিল পরিশোধের জন্য। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকরা ক’জনই বা মাইকিং খেয়াল বা নজর রাখবে। সমিতির সাধারণ নিয়মের কথায় গ্রাহকদের জানার কথা। কিন্তু মাইকিং কতদূর বা কতজন গ্রাহকের এলাকায় করা হয়েছে, সেদিকে কর্তৃপক্ষের জানা নেই। মাইকিং করতে হয়, তাই নামকাওয়াস্তে করলেই হলো, যেন বলতে পারা যায়, আমরা মাইকিং করেছি তো?। ক’জন গ্রাহক জানতে পারলো সেটা বিষয় নয়। তাহলে এমনটিই তো দাঁড়ায় নিজেদের পছন্দমত নিয়ম করেই অফিস চালানোর বিষয়টি। গ্রাহকদের স্বার্থ না দেখে অফিসের স্বার্থটিই বড়। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকদের নিয়েই তো সমিতি। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মাধ্যমে গ্রাহকদের আরও অনেক হয়রানীর অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু সাধারণ গ্রাহকরা মুখ বুজে সব সহ্য করছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কর্তৃপক্ষের নানা অত্যাচারে জর্জরিত সাধারণ গ্রাহক। হয়তো কিছু বিষয় সমিতির উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কর্তৃপক্ষের নেতৃবৃন্দ জানতেই পারেন না বা জানার চেষ্টাও করেন নি সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোনদিন। বিষয়গুলোর সঠিক তদন্ত করে গ্রাহকদের হয়রানীর হাত থেকে রক্ষা করে সঠিকভাবে সেবা দেয়ার আহবান জানিয়েছেন সাধারণ গ্রাহকরা। এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মাইনুদ্দিন আহমেদ (মাইনু) বলেন, আমরা বিল তৈরি করি মাসে ৭ তারিখ থেকে। যেন গ্রাহকরা সময়ের মধ্যে তাদের বিল পরিশোধ করতে পারেন। যদি কোন কারণে সরকারি ছুটি হয় কিংবা বিল তৈরি করে গিয়ে যদি শুক্রবার ও শনিবার বিল পরিশোধের শেষ তারিখ হয়ে যায়, তাহলে গ্রাহক ব্যাংক ও অফিস চালাকালিন সময় বিলম্ব মাশুল ছাড়াই বিল পরিশোধ করতে পারবে। কিন্ত ছুটি থাকা সত্যেও বিলম্ব মাশুলসহ বিল কেনো নেয়া হলো, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুক্রবার ছুটি ছিল ঠিক কিন্তু শনিবার আমাদের অফিস খোলা ছিল। শনিবার অফিস খোলা থাকার কারণে বিলম্ব মাশুলসহ বিল কেনো নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, গ্রাহকদের স্বার্থে আমরা মাইক প্রচার করে জানিয়েছি, শনিবার অফিস খোলা ও বিল পরিশোধ করতে হবে। যদি গ্রাহকরা প্রচারকৃত মাইকিং শুনে না আসে তাহলে তা বিলম্ব মাশুলসহ বিল পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য প্রায় ২ লক্ষাধিক সাধারণ গ্রাহক হয়রানীর শিকার হচ্ছে বিভিন্নভাবে। কিন্তু পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির শিবগঞ্জ জোনাল অফিসের এই কর্মকর্তা বিষয়টি মানতে না রাজ। যেনো তার নিজের নিময়ে অফিস চলবে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page