আন্তর্জাতিক | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 263 বার

মিয়ানমারের রাখাইনের রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশমুখী স্রোত আরও তীব্র হচ্ছে। জাতিসংঘ বলছে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। ফলে ২৫ আগস্ট থেকে নতুন করে সংকট তৈরির পর এ পর্যন্ত প্রায় সোয়া লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানায় বিবিসি
অন্যান্য সূত্রে জানা গেছে, এ সংখ্যা প্রায় দুই লাখ। প্রতি মুহূর্তেই এ সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে দুর্গম পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। তারা ভয়াবহ খাদ্য সংকটে ভুগছে। রাখাইনের সবচেয়ে সংঘাতময় এলাকা মংডুকে সামরিক ‘অভিযান এলাকা’ ঘোষণা করেছে মিয়ানমার সরকার। রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ইন্দোনেশিয়া ৪ যোগ ১ ফর্মুলা মিয়ানমারের কাছে পেশ করেছে। পোপ ফ্রান্সিস বলেছেন, শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে।
নদীপথে বাংলাদেশে আসার সময় নৌকাডুবিতে অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গার নির্মম মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় ভূমধ্যসাগর থেকে ৪০ হাজারেরও বেশি শরণার্থীকে উদ্ধারের দাবি করা একটি সংগঠন তাদের কার্যক্রম মিয়ানমারে সরিয়ে নেয়ার কথা জানিয়েছে। রাখাইনে সহিংসতার পর যে রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে অন্য কোথাও আশ্রয় খুঁজছে তাদের নিতে উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠানোরও পরিকল্পনা করছে তারা। দ্য মাইগ্রেন্ট অফশোর এইড স্টেশন (মোয়াস) ২০১৪ সাল থেকে ভূমধ্যসাগরে ইউরোপগামী শরণার্থীদের উদ্ধারকাজ চালিয়ে আসছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এবার তারা মাল্টা থেকে তাদের কার্যক্রম সরিয়ে মিয়ানমারের জলসীমায় নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছে। তাদের উদ্ধারকারী জাহাজ ফিনিক্স তিন সপ্তাহের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটিই তিন বছর ভূমধ্যসাগরে কাজ করেছে।
মোয়াস বলছে, ফিনিক্সের মাধ্যমে রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে যতদূর সম্ভব মানবিক সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সাহায্য দেয়ার পাশাপাশি ওই অঞ্চলে স্বচ্ছতা, সমর্থন ও জবাবদিহিতার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরিতেও ভূমিকা রাখতে চায় তারা।
দুর্গম পাহাড়ে আটকা ৩০ হাজার রোহিঙ্গা : সেনাবাহিনীর চরম নির্যাতন-হামলা আর ধর্ষণের মুখে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা কোথাও জায়গা না পেয়ে মিয়ানমারের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে আটকা পড়েছে। খাদ্য, পানি, বাসস্থান ও চিকিৎসার অভাবে এসব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা মূলত নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চেয়েছিল। কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বাধায় তারা প্রবেশ করতে না পেরে ফিরে যায়। তারা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ভয়ে নিজেদের গ্রামে বা বাড়িতেও ফিরতে পারছে না। তাদেরই একটি অংশ রাখাইন রাজ্যের মংডু ও রাথেডং শহরের কাছাকাছি পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক কিউ উইন বলেন, ‘এখানে যারা আটকে আছে, তারা ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে। মানবিক কারণেই যত দ্রুত সম্ভব তাদের উদ্ধার করা উচিত।’
মংডুকে সামরিক ‘অভিযান এলাকা’ ঘোষণা : উত্তর রাখাইনের সবচেয়ে সংঘাতময় এলাকা মংডুকে সামরিক ‘অভিযান এলাকা’ ঘোষণা করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে মিয়ানমার সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সোমবার দেশটির প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র উ জ হটে নিশ্চিত করেছেন। পুরো মংডু জেলাই এখন সামরিক বাহিনীর অভিযানের আওতায়। এর মানে হচ্ছে বুথিয়াডং, মংডু, রাথেডং, টংপাইওলেটি ও মাইনলুট এলাকায় সামরিক বাহিনী কারও অনুমতি ছাড়াই অভিযান চালাতে পারবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কথিত ক্লিয়ারেন্স অভিযানের আওতায় চলে এসেছে ওই এলাকাগুলো।
ইন্দোনেশিয়ার ৪+১ ফর্মুলা : ইন্দোনেশিয়া রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে ৪ যোগ ১ ফর্মুলা মিয়ানমারের কাছে পেশ করেছে। মিয়ানমারের রাজধানীতে দেশটির স্টেট কনস্যুলার অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠকের সময় এটি পেশ করেন ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেনটো মারসুদি। মারসুদি বলেন, মানবিক এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতি সংকটের যেন অবনতি না হয় সেজন্য এ প্রস্তাবের প্রথম চারটি শর্ত অবিলম্বে বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব শর্ত হল- নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা, সর্বোচ্চ ধৈর্য প্রদর্শন এবং অহিংস আচরণ, রাখাইন প্রদেশে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষ সব নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং অবিলম্বে মানবিক সহযোগিতা শুরু করা। এছাড়া জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা প্যানেলের প্রতিবেদনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন হল ফর্মুলার সর্বশেষ শর্ত।
মুসলমান হওয়ার কারণেই নিপীড়ন-পোপ : রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেছেন, ‘তারা (রোহিঙ্গারা) ভালো মানুষ। তারা শান্তিপ্রিয়। খ্রিস্টান না হলেও তারা আমাদের ভাই। যুগ যুগ ধরে তারা নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে।’ ভ্যাটিকান রেডিওকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু। সাক্ষাৎকারে পোপ বলেন, শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে আজ রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে তাদের।
রাখাইনে ৪১৭ স্কুল বন্ধ : রাখাইন রাজ্যে ৪১৭টি স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সশস্ত্র সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যদের ভয়ে এসব স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় সিনহুয়া। এর মধ্যে সংঘাতময় মংডুতে ১৮৩টি, বুথিয়াডংয়ে ২১২টি এবং ইয়াথেডংয়ে ২৩টি স্কুল।
Leave a Reply