আন্তর্জাতিক | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 268 বার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান রোহিঙ্গা নিধন অভিযানের মধ্যেই প্রতিবেশী দেশটি সফরে গেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে মোদির বহুল আলোচিত এ সফর। সফরকালে তিনি মিয়ানমারের তিনটি স্থান পরিদর্শন করবেন। এদিকে রোহিঙ্গা নিধনে মিয়ানমারের সুচি সরকার আন্তর্জাতিক মহলের মতের কোনো তোয়াক্কা করছে না। ফলে মোদির এ সফর অনেকটা আশার ক্ষেত্র তৈরি করেছে। তাছাড়া মিয়ানমারকে ‘কাছের বন্ধু’ এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন মোদি। ফলে সফরকালে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে মোদির আলোচনা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্সের।
মোদির সফরের দ্বিতীয় দিনে ইয়াঙ্গুনে থুওয়ান্না ইনডোর স্টেডিয়ামে ভারতীয় কমিউনিটির এক অনুষ্ঠানের আয়োজন রয়েছে। কিন্তু সফর উপলক্ষে মিয়ানমারের ভারতীয় ওই কমিউনিটিকে পাঠানো মোদির এক ই-মেইল বার্তায় মিয়ানমারকে চাপে রাখার প্রত্যাশা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। তাদের উদ্দেশে মোদি ই-মেইল বার্তায় লিখেছেন, আনন্দ ও উদ্যমের সঙ্গে তার মিয়ানমার সফর শুরু হতে যাচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী ও ভারতের অন্যতম কাছের বন্ধু দেশ মিয়ানমারে এটিই তার প্রথম দ্বি-পাক্ষিক সফর। বার্মিজ ভারতীয়রা গত একদশকে দুই দেশকে অনেক কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।
সফরকালে মোদি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট ছাড়াও অং সান সুচির সঙ্গে বৈঠক করবেন। তাছাড়া সুচির দেয়া এক মধ্যাহ্নভোজেও অংশ নেবেন মোদি। রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের পাশাপাশি শত শত হিন্দুদের ওপরও নির্যাতন-হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দেশটির সেনাবাহিনী সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে অপর সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপরও হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে অনেক হিন্দুই আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে। কেউ অবস্থান করছেন বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্ট থেকে এক সপ্তাহে রাখাইন রাজ্যের ফকিরাবাজারের ৭৫টি হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ৮৬ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে মিয়ানমারের নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সুচির সঙ্গে আলোচনা করতে দেশটিতে তিন দিনের সফরে যাচ্ছেন মোদি।
এদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে রোহিঙ্গাবিরোধী অবস্থান নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে মোদি সরকার। ভারতে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের পরিচয়পত্র পেয়েছেন ১৬ হাজার ৫০০ জন। প্রায় পাঁচশ’ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের দায়ে দেশটির বিভিন্ন জেলে রয়েছেন। সম্প্রতি ভারত ঘোষণা দিয়েছে, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। বিবিসি জানায়, ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার তিনদিন আগে ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু এ ঘোষণা দেন। দেশটির এ ঘোষণার পর আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ভারতের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানান।
ভারতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দাবি, এরকম সহিংসতা বন্ধে নরেন্দ্র মোদি জোরালোভাবে মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের সমর্থনে এগিয়ে আসুন এটাই তারা চান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা শ্রীপ্রিয় রঙ্গানাথান জানান, রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যে সংকট চলছে, সেটি কীভাবে সমাধান করা যায়, মিয়ানমারের নেত্রীর সঙ্গে সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারই তৈরি করেছে। সমাধানও তাদের হাতে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এসব নিয়ে আমাদের যথেষ্ট উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ রয়েছে। রাখাইনের সহিংসতা স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক মহলের নজরে রয়েছে। তাই প্রতিবেশী দেশ হিসেবে এবং মিয়ানমারের বন্ধু রাষ্ট্র হওয়ার কারণে এ বিষয়ে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তবে শরণার্থী আশ্রয় দেয়ার ব্যাপারে ভারতের একটা সোনালি ঐতিহ্য ছিল রোহিঙ্গাদের বেলায় এসে ভারতের সেই ঐতিহ্য শেষ হয়ে যাচ্ছে। এনডিটিভিতে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে কলামিস্ট মনিশঙ্কর আয়ার বলেছে, ‘গত ৭০ বছর ধরে স্বাধীন ভারত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শরণার্থীর জন্যই নিজেদের দরজা সর্বদায় খোলা রেখেছে। তিব্বতের বৌদ্ধ, আফগানিস্তানের মুসলিম, শ্রীলংকার হিন্দু ও খ্রিস্টান এবং এমনকি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পূর্ব-পাকিস্তানের (বাংলাদেশ) প্রায় ১ কোটি হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে দেশটি। ২০১৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত এত এত মানুষকে আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম পরিচয়কে কখনোই বড় করে দেখা হয়নি। নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে যারাই আশ্রয় চেয়েছে, মানবতার খাতিরেই তাদের আশ্রয় দেয়া হয়েছে। কিন্তু হায়, সেইদিন এখন বদলে গেছে। মোদি সরকার ভারতের সেই সোনালি ঐতিহ্য শেষ করে দিচ্ছে।’
Leave a Reply