হাসপাতালের বারান্দায় ঢুকলেই চোখে পড়ে এ যেন হাসপাতাল নয় ছাগলের খামার! ডাক্তারের কক্ষে ফাঁকা পড়ে আছে চেয়ার-টেবিল। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও মানুষ কাক্সিক্ষত সেবা পায়নি। প্রায় বিনা চিকিৎসায় শত শত দরিদ্র রোগী প্রতিদিন বাড়ি ফিরছে। নির্ধারিত সময়েও আসেন না ডাক্তার। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কক্ষে শিশুদের সেবা দিচ্ছেন সিনিয়র স্টাফ নার্স। কোমলমতি শিশুদের পুষ্টিকণার সেবা কার্যক্রমও বন্ধ। ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আগত রোগীদের সঙ্গে চলছে এমন প্রতারণা। মঙ্গলবার হাসপাতালের ৩ নম্বর কক্ষের দীর্ঘলাইন অতিক্রম করে দেখা যায় দন্ত বিভাগের টেকনিশিয়ান দেলোয়ার হোসেন চিকিৎসা দিচ্ছেন। জ্বর, সর্দি আর কাশিতে আক্রান্ত বাসু মিয়া, জ্বরে আক্রান্ত ষোলগাই গ্রামের নাইম মিয়া, কানের সমস্যা নিয়ে আসা আবদুল জলিল, পেটে ব্যাথা-প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত মো. জালাল উদ্দিন, বিসকা গ্রামের আবদুল জলিল কানে সমস্যা, আল-মামুন সর্দি-জ্বর, চুরালি গ্রামের নাইম গলায় টনসিল, গাভীশিমুল গ্রামের এবাদুল্লাহ গ্যাস্ট্রিক রোগীকে চিকিৎসা প্রদানে ব্যস্ত তিনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বাঁচাতে ডাক্তারশূন্য এ হাসপাতালে দন্ত বিভাগের টেকনিশয়ান দেলোয়ার হোসেন সব রোগীকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
১২ নম্বর কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সব রোগের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রফিকুজ্জামান। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরিবর্তে আপনি কেনো চিকিৎসা দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি মুহূর্তেই ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, চিকিৎসাসেবায় হাসপাতাল ও বাইরে আমার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আইএমসিআই (সমন্বিত রোগ ব্যবস্থাপনা) বিষয়ে ১১ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আর উপরের নির্দেশেই আমি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। রোববার কেউ ছিল না, সব রোগীকে একা চিকিৎসা দিয়েছি। ৪ নম্বর কক্ষে ছিল মহিলা রোগীদের দীর্ঘ লাইন। সেখানে চিকিৎসা দেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার একেএম মাহফুজুল হক। তিনি জানান, টিকিট কাউন্টার থেকে যাদের পাঠানো হচ্ছে তাদের সেবা দিচ্ছি। টিকিট কাউন্টারের হার্বাল সহকারী রফিকুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার চিকিৎসাসেবা নিতে এসেছে শিশু ৫৪ জন, মহিলা ১২১ জন ও পুরুষ ৭৬ জন। সোমবার চিকিৎসা নিতে আসে শিশু ৫৬ জন, মহিলা ১৬৭ জন ও পুরুষ ৫৮ জন। ৭ নম্বর কক্ষে কিছুক্ষণের জন্য আসেন মেডিকেল অফিসার (ইউনানী) ডা. সুরাইয়া রহমান সুমী। তিনিও কয়েকজন রোগী দেখে চলে যান। চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত বোকাইনগর ইউনিয়নের নয়াপাড়া গ্রামের আবদুল কদ্দুছ বলেন, ডাক্তার নেই, তাহলে তালা মেরে দিলেইতো ভালো। হাসপাতাল কমপ্লেক্সের ভেতরে গরু চড়ানোও চলছে। ভেতরে কুকুরের উপদ্রবও রয়েছে। তবে সবাইকে অবাক করেছে হাসপাতালের নতুন ভবনের বারান্দায় একই সঙ্গে পাঁচটি ছাগল শুয়ে আছে। দেখলে মনে হবে, এটি ছাগলের খামার! উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রবিউল ইসলাম জানান, জরুরি বিভাগে ডাক্তার আছেন, আমি ছুটিতে আছি। বুধবার এসে বিষয়টি সমাধান করব।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার এ হাসপাতালটিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তারসহ পদসংখ্যা ২০টি। যার মধ্যে সাতটি পদ শূন্য। এ ছাড়াও প্রেষণে ডা. সৈয়দ আলী ইমাম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ডা. ইশতিয়াক মোশারফ কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত। অভিযোগ রয়েছে, অধিকাংশ ডাক্তারই হাসপাতালে নিয়মিত আসেন না। বেতনও নিজেরা উত্তোলন করতে আসেন না। এ বিষয়ে উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মেঘলাল মণ্ডল জানান, হাসপাতালের ডাক্তারদের বেতন উত্তোলন করেন হাসপাতালের হাসমত আলী। হাসপাতালের হিসাব রক্ষক হাসমত আলী জানান, এটি আমার দায়িত্ব। যারা প্রেষণে আছেন, তারা মাসে একবার এসে বেতন নিয়ে যান।