সম্পাদকীয় | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 514 বার

কোরবানির পশুর চামড়া কেনাবেচায় বিভিন্ন পর্যায়ে কারসাজির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। কারণ এর ফলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ এ রফতানি শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। উল্লেখ্য, কোরবানির পশুর চামড়া বাসাবাড়ি থেকে আড়ত হয়ে ট্যানারি মালিকদের কাছে পৌঁছাতে অন্তত পাঁচবার হাতবদল হয়। অভিযোগ উঠেছে, এ হাতবদলের বিভিন্ন পর্যায়ে কারসাজির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। চামড়া ব্যবসায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবেই এমনটি ঘটেছে। প্রতি বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রাজধানীর পোস্তার আড়তদাররা কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেন। কিন্তু এ বছর কম চামড়া আসছে বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। এর একটি কারণ, এ বছর কোরবানি হয়েছে কম। অপর কারণ, কোরবানির দিনই ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে মাঠ পর্যায়ের বেশিরভাগ চামড়া কম দামে কিনে নিয়েছেন। এ সিন্ডিকেটে যোগ দিয়েছেন বিভিন্ন ট্যানারি মালিকও। তারা দালাল-ফড়িয়ার মাধ্যমে চামড়া কিনে লবণজাত ও প্রক্রিয়াজাতকরণের উদ্দেশ্যে তা সরাসরি নিয়ে গেছেন সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে। এ অবস্থায় আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার কোরবানির চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৩০ শতাংশ কমে যেতে পারে।
এ বছর চামড়া শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার আরও কারণ তৈরি হয়েছে। সারা দেশ থেকে সংগৃহীত চামড়া মজুদদার ও পাচারকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশে ভাঙাচোরা সড়ক ও অতিবৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে এবার পচন ঠেকাতে চামড়াবাহী যানবাহনের অবাধ চলাচলের সুযোগ ছিল। এ সুযোগই কাজে লাগিয়েছে সিন্ডিকেট। সন্দেহ করা হচ্ছে, তারা তাদের সংগৃহীত চামড়া অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে মজুদ করে রেখেছে পাচারের উদ্দেশ্যে। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশের বাজারে চামড়ার মূল্য বাংলাদেশের চেয়ে বেশি। সেখানে বাংলাদেশের চামড়ার চাহিদাও বেশি। ফলে সংগৃহীত চামড়ার একটি বড় অংশ সেখানে পাচার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। আর এ আশঙ্কা সত্য হলে দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের যে অবদান, তাতে ঘাটতি পড়বে নিঃসন্দেহে। উপরন্তু বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার আয় থেকে বঞ্চিত হবে দেশ। চামড়ার আন্তর্জাতিক বাজারও হারাতে হতে পারে আমাদের।
চামড়া নিয়ে অনৈতিক ব্যবসা ফেঁদেছেন যারা, তারা কি কখনও ভেবে দেখেছেন, এর ফলে গোটা চামড়া শিল্পটাই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে? আমরা একটা বিষয় লক্ষ করে এসেছি, দেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলো নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা ষড়যন্ত্র হয়েছে। গার্মেন্ট খাত নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কথা জানি আমরা। চামড়া এ দেশের একটি বড় রফতানি খাত। এ খাতটিও যেন ষড়যন্ত্রের শিকার না হয়। এটা ঠিক, দেশের চামড়া শিল্পে নানা সমস্যা বিরাজ করছে। এ শিল্প সাভারে স্থানান্তরের পর মালিকরা কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। ব্যাংকঋণ পেতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী। মূলধন সংকটের পাশাপাশি বেড়েছে লবণসহ প্রক্রিয়াজাতকরণের উপকরণের দাম। সরকারকে এসব দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। চামড়া শিল্প দেশের অন্যতম রফতানি খাত। এ খাতে কোনো অনিয়ম যেন না ঘটে, লক্ষ রাখতে হবে সেদিকেও।
Leave a Reply