• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৫:০৮ অপরাহ্ন

কিশোরের কেন এই ভয়ঙ্কর রূপ?

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পাড়া-মহল্লায় সংঘবদ্ধ কিশোররা ক্রমেই ভয়ঙ্কর হইয়া উঠিতেছে। জড়াইয়া পড়িতেছে খুন-অপহরণ-ছিনতাইসহ গুরুতর সকল অপরাধে। কেবল গত কয়েক মাসেই তাহাদের হাতে কয়েকটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়াছে। কিশোরদের অপরাধে জড়াইয়া পড়ার বিষয়টি একেবারে আকস্মিক না হইলেও সংঘবদ্ধ অপরাধের চিত্রটি প্রথম সকলের নজর কাড়ে চলতি বত্সরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর উত্তরায় কিশোর আদনান হত্যাকাণ্ডের পর। ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার মুখে তখন সকলেই একটু নড়িয়া-চড়িয়া বসিয়াছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে তেজগাঁওয়ের তেজকুনীপাড়া ও মিরপুরের রূপনগরে আরও দুইটি খুনের ঘটনা ঘটে একই কায়দায়। দুইমাসের ব্যবধানে শেওড়াপাড়া ও যাত্রাবাড়ীতে খুন হয় আরও দুই কিশোর। সর্বশেষ গত ২৪ আগস্ট দারুস সালামের লালকুঠি এলাকায় ১৬ বত্সর বয়সী এক কিশোর খুন হয় সমবয়সী কিশোরদের হাতে। ইহার দুইদিন আগে উত্তর পীরেরবাগেও অনুরূপ খুনের ঘটনা ঘটে। কিশোর অপরাধের লোমহর্ষক এই চিত্রটি রাজধানী ঢাকার। তবে সারা দেশের চিত্রও যে খুব একটা ভিন্ন নহে— তাহা সহজেই অনুমেয়।

 

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী—রাজধানীর উত্তরা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, আদাবর, পুরান ঢাকা, মতিঝিল, কাকরাইল ও মগবাজারসহ বিভিন্ন এলাকা দাপাইয়া বেড়াইতেছে সংঘবদ্ধ— ক্ষেত্রবিশেষে সশস্ত্র কিশোর ‘গ্যাং’। তন্মধ্যে উত্তরায় ৩০টি গ্রুপ,  তেজগাঁওয়ে ১২টি গ্রুপ, মোহাম্মদপুর ও আদাবরে ১০টি গ্রুপ, মিরপুরে ১০টি এবং রমনা এলাকায় ৭টি গ্রুপের সক্রিয়তার বিশদ বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হইয়াছে বিভিন্ন সময়ে। অত্যন্ত বেপরোয়া প্রকৃতির এই গ্রুপগুলির রহিয়াছে ভীতিকর সব নামও। তাহাদের বড় অংশই যে ইয়াবা ব্যবসার সহিত জড়িত, পুলিশই তাহা নিশ্চিত করিয়াছেন। তবে শুধু মাদক ব্যবসাই নহে, স্কুল-কলেজগামী মেয়েদের উত্ত্যক্ত করা হইতে শুরু করিয়া হেন অপরাধ নাই যাহার সহিত তাহাদের সম্পৃক্ততা খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না। নগরবাসী তাহাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন। সমাজের অভ্যন্তরেও তৈরি হইতেছে অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতার বোধ। কিন্তু ভয়ঙ্কর এইসব কিশোরের ভয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিকট অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাইতেছেন না ভুক্তভোগীরা।

 

অনুসন্ধানে দেখা গিয়াছে, পথভ্রষ্ট এইসব কিশোরের বয়স ১৩ হইতে ১৮ বত্সরের মধ্যে। তাহাদের অনেকেই সচ্ছল পরিবারের সন্তান। প্রশ্ন হইল, অল্প বয়সী এই কিশোরেরা কেন ভয়ঙ্কর পথে পা বাড়াইতেছে? জানা যায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাহাদের পিছনে স্থানীয় ‘বড় ভাই’দের রাজনৈতিক মদদ রহিয়াছে। আছে মাদক-বাণিজ্যের লোভনীয় ফাঁদ। সেই সাথে আছে পরিবার হইতে বিচ্ছিন্নতার বেশ কিছু উদাহরণও। আরও এক বা একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কারণ থাকিতেই পারে। সেইগুলি খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার একজন কর্মকর্তা অবশ্য দাবি করিয়াছেন যে উত্তরার আদনান হত্যার পর র্যাবের পক্ষ হইতে ‘ম্যাসিভ ড্রাইভ’ দেওয়া হইয়াছিল। ফলে কিশোর অপরাধ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ হইতে বলা হইয়াছে যে কিশোরদের নিয়ন্ত্রণের জন্য অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হইবে। সব কিছু পুলিশ দিয়া নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নহে। কথাটি নিঃসন্দেহে তাত্পর্যপূর্ণ। কিশোররাই আমাদের ভবিষ্যত্। তাহাদের অপরাধপ্রবণ হইয়া উঠিবার বিষয়টিকে হালকা করিয়া দেখিবার কোনো অবকাশ নাই। সরকারের পাশাপাশি সমাজ এবং পরিবারকেও অবশ্যই এইদিকে সতর্ক নজর রাখিতে হইবে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page