• সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:৫৩ অপরাহ্ন

আর্সেনিকের মারাত্মক ঝুঁকির মুখে চট্টগ্রাম বিভাগ

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

দেশে পানিদূষণের সমস্যা ক্রমশই বাড়িয়া চলিয়াছে। সাধারণভাবে জীবাণুদূষিত পানির বিপত্তি তো আমাদের সবসময়ই ছিল। উহার সহিত আর্সেনিক সমস্যা যুক্ত হইয়া পরিস্থিতিকে আরো বিপজ্জনক করিয়া তুলিয়াছে। দেশের একটি বড় অংশের মানুষ বিষবত্ এই খনিজ উপাদানের মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতির কারণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মুখে রহিয়াছে। জানা যায়, দেশে আর্সেনিক আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেকই রহিয়াছে চট্টগ্রাম বিভাগে। উপরন্তু বিভাগটির বিভিন্ন জেলায় আর্সেনিক আক্রান্তের হারও ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হইতেছে। তবে কুমিল্লা জেলাতেই আর্সেনিকের প্রকোপ অধিকহারে বৃদ্ধি পাইতেছে। কুমিল্লা সিভিল সার্জন অফিসসূত্রে জানা যায়,  জেলার মুরাদনগর, লাকসাম, চান্দিনা, বরুড়া ও মনোহরগঞ্জ উপজেলায় সবচাইতে বেশি মানুষ আর্সেনিক ঝুঁকিতে রহিয়াছে। ২০০৩ সালে কুমিল্লায় সুপেয় পানি গ্রহণের সূচক শতকরা ৯৭ ভাগে উন্নীত হইলেও আর্সেনিকের মাত্রা বাড়িতে থাকায় তাহা বর্তমানে ৬৭ শতাংশে নামিয়া আসিয়াছে।

 

দেশে ভূগর্ভস্থ পানিতে প্রথমবারের মতো ক্ষতিকর মাত্রায় আর্সেনিক ধরা পড়ে ১৯৯৩ সালে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সেই বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার চামাগ্রামের নলকূপের পানিতে আর্সেনিক শনাক্ত করে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রথম শনাক্ত হইলেও দুই দশক পার হইতেই চট্টগ্রামে আর্সেনিক সংক্রমণের ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি দেখা যাইতেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে আর্সেনিক আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর ৪৮ শতাংশ রহিয়াছে চট্টগ্রাম বিভাগে। অন্যদিকে সর্বাগ্রে আর্সেনিকের উপস্থিতি জানান দেওয়া রাজশাহী বিভাগে রহিয়াছে আক্রান্ত জনগোষ্ঠীর ৯ শতাংশ। সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় আর্সেনিকের প্রকোপ অন্যান্য অঞ্চলের চাইতে কম হইবার কথা থাকিলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে হইয়াছে তাহার বিপরীত। ভূতাত্ত্বিক গঠনের পাশাপাশি অপরিকল্পিত নগরায়ন, শিল্পায়ন, ভূগর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, জলাবদ্ধতা ও বদ্ধ জলাশয়ের কারণে ভূপৃষ্ঠের উপরিতলে আর্সেনিক জমাটবদ্ধ হইতেছে বলিয়া বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। ফলে অগভীর নলকূপ ও জলাশয়ের পানি ব্যবহারের কারণে প্রায়শ সাধারণ মানুষ আর্সেনিকে আক্রান্ত হইতেছে।

 

মাত্রাতিরিক্ত লবণ, আর্সেনিক কিংবা লোহা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর্সেনিক হইতে আর্সেনোকোসিস রোগ ছাড়াও ক্যান্সার সংক্রমিত হইবার আশঙ্কা থাকে। তাহা ছাড়া পানিতে মিশ্রিত এই অবাঞ্ছিত পদার্থগুলি কিডনি, লিভার এবং হার্টের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সম্মিলিতভাবে এই দূষণ রোধ করা জরুরি। বৃষ্টির পানিতে ক্ষতিকারক মাত্রায় আর্সেনিক না থাকিলেও উহা ধারণ করিয়া ব্যবহার উপযোগী রাখা নিঃসন্দেহে একটি ঝামেলাপূর্ণ বিষয়। এই জন্য অধিকাংশ মানুষই ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভর করেন। অগভীর নলকূপের তুলনায় গভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের প্রকোপ সীমিত। তাহা ছাড়া নদী-নালা-পুকুরের পানি কাজে লাগাইয়াও আমরা আর্সেনিক দূষণ হইতে প্রতিকার লাভ করিতে পারি। এই জন্য ভূগর্ভের উপরিভাগের পানিকে যথাযথভাবে বিশুদ্ধ করিবার উপায় আয়ত্ত করিতে হইবে। অন্য আরো একটি সমাধান হইল চার চেম্বারের আর্সেনিক নিরোধক ফিল্টার। বর্তমানে এই ফিল্টারগুলি অল্প কিছু মানুষই ব্যবহার করিয়া থাকে। কিন্তু আর্সেনিকের ব্যাপকতার বিবেচনায় ইহা সর্বসাধারণের জন্য সহজলভ্য করিতে হইবে। পাশাপাশি আর্সেনিক পরীক্ষার কিটও সহজলভ্য করা প্রয়োজন। ফিল্টারের মধ্য দিয়া পানি আর্সেনিকমুক্ত হইল কিনা, তাহাও পরীক্ষা করিয়া দেখিবার প্রয়োজন রহিয়াছে।
Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ