শিক্ষকতা শুধু পেশা নয়, মহান ব্রত। এ ব্রত পালনে শিক্ষককে হতে হয় নৈতিক আদর্শে উজ্জ্বল। যিনি শিক্ষার্থীর হূদয়ে জ্ঞান তৃষ্ণা জাগিয়ে, মনের সুকুমার বৃত্তিগুলোর পরিচর্চা করে শিক্ষার্থীকে আদর্শ মানুষে পরিণত করেন তিনিই শিক্ষক। আমাদের দেশে আদর্শ শিক্ষকের বড় অভাব। সততা, নৈতিকতা, উদারতা, আধুনিকতা, ব্যক্তিত্ব তথা সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষকই আদর্শ শিক্ষক। কেবল শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাই শিক্ষকের দায়িত্ব নয়; তিনি শিক্ষায় নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম ও আদর্শ মূল্যবোধ শিক্ষার্থীর মাঝে ছড়িয়ে দিবেন।

 

 শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। তাঁকে মনে রাখতে হবে দেশের নেতা বা রাষ্ট্রপ্রধান তথা রাষ্ট্রের  ক্ষমতাধর ব্যক্তিবর্গ সকলেই কোনো না কোনো শিক্ষকেরই ছাত্র ছিলেন। পৃথিবীতে পরাজয় কথাটা কষ্টের ও লজ্জার। অথচ এই ‘পরাজয়’ কথাটি তখনই হয় আনন্দ ও গর্বের যদি সেটা হয় ছাত্রের কাছে শিক্ষকের পরাজয়, পুত্রের কাছে পিতার পরাজয়।

 

শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি বর্তমান সময়ের অন্যতম দাবি। এটি অর্জনের অন্যতম কারিগর হচ্ছেন শিক্ষক। শিক্ষক সম্পর্কে উইলিয়াম আর্থার ওয়ার্ডের বিশ্লেষণ সত্যিই যথার্থ। তিনি বলেন- ‘একজন সাধারণ শিক্ষক-বক্তৃতা করেন/ একজন ভালো শিক্ষক-বিশ্লেষণ করেন/ একজন উত্তম শিক্ষক-প্রদর্শন করেন/ একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-অনুপ্রাণিত করেন।’

 

শিক্ষক প্রদীপের মতো নিজেকে জ্বালিয়ে অন্যকে আলো দান করেন, অর্থাত্ শিক্ষক অমর তিনি বেঁচে থাকেন ছাত্রের আদর্শের মাধ্যমে। প্রত্যেক শিক্ষকের উদ্দেশ্য থাকা উচিত আদর্শ শিক্ষা প্রদান। একটি ব্যাপক প্রক্রিয়া ও দক্ষ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়নের পূর্বশর্ত, যা পালন করেন প্রতিষ্ঠান প্রধান। প্রতিষ্ঠান প্রধান শুধু অধ্যক্ষই নন তিনি একজন শিক্ষকও। অধ্যক্ষকে কেবল ছাত্রদেরই শিখাতে হয় না, তাঁকে শিখাতে হয় প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। দক্ষতার সঙ্গে সমন্বয় ঘটাতে হয় প্রশাসনিক কার্যক্রম ও একাডেমিক সুপারভিশনের এবং ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি করতে হয় আত্মিক মেলবন্ধন। তবে তার বড় পরিচয় তিনি একজন শিক্ষক।

 

একজন প্রকৃত শিক্ষকই ধারাবাহিকভাবে একজন ছাত্রকে সহজ থেকে কঠিনের দিকে, জানা থেকে অজানার দিকে, জ্ঞানের বিন্দু থেকে নিয়ে যান জ্ঞানসমুদ্রের দিকে।

 

প্রত্যেক শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শিক্ষার প্রতি অনুরাগ জাগ্রত করা। শিক্ষার্থীদের অন্ধকার হতে আলোর পথে নিয়ে যাওয়া এবং বাস্তব ও সত্য অনুসন্ধানে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা। শিক্ষকের আরেকটি পবিত্র দায়িত্ব হচ্ছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা। আর এই দায়িত্ব পালন করতে হলে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে। তাঁকে মনে রাখতে হবে সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন সর্বোচ্চ বিচারক। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যথার্থ মূল্যায়নে ব্যর্থ হলে বা ভুল করলে ধ্বংস হয়ে যাবে একটি প্রজন্ম, একটি জাতি তথা একটি দেশ। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে শিক্ষককে হতে হবে আরো বেশি সত্ ও আন্তরিক। তাঁকে মনে রাখতে হবে তাঁর সামান্য ভুলের কারণে একটি জাতি নিক্ষিপ্ত হতে পারে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।

 

প্রত্যেক শিক্ষকের মূল উদ্দেশ্য এবং শিক্ষকতা পেশার মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় হিসেবে শিক্ষার্থীর হূদয়ে স্থান করে নেওয়া। তাহলেই আপনার (শিক্ষকের) স্থান হবে সমাজে, দেশে এবং ইতিহাসের সোনালি পাতায়।
Share Button