সম্পাদকীয় | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০১৭ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 531 বার

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সকল ছাত্রই স্বপ্ন দেখে একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার। আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে অনেক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও পছন্দের তালিকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোই আগে ঠাঁই পায়। কিন্তু লাখ লাখ ছাত্রের স্বপ্ন যেখানে ভর্তি হওয়া সেখানে সুযোগ করে নেওয়া কি এতই সহজ! আর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বা কিভাবে এত এত ছাত্রের মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার জনকে বেছে নেবে ভর্তির জন্য। তাই তো তারা ১ ঘণ্টার একটি পরীক্ষার মাধ্যমে কিছু ছাত্র বাছাই করে। আর এই প্রক্রিয়ার নামই হলো ভর্তি পরীক্ষা। ব্যাপারটা যত সহজে বর্ণনা করা গেল আদতে তার পেছনের কাহিনিটা ততটাই কঠিন। দীর্ঘ দু বছরের কঠিন পরিশ্রমের পর প্রায় দেড় মাস ধরে পরীক্ষা দিয়েও ছাত্রদের একটু অবসর মেলে না। তারা পড়ে এক নতুন ভাবনায়। পরীক্ষা না হয় ভালোই দিল কিন্তু এর পর ভর্তি হবে কোথায়। ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে তো আত্নীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীকে মুখ দেখানো যাবে না। বাবা-মায়ের মান-সম্মান বলতে কিছুই থাকবে না। তাই নিজের মুখ আর বাবা-মায়ের সম্মান রাখতে তারা ভর্তি হয় কোচিং সেন্টারে। ৩-৪ মাসের এই কোচিং করতে তাদের খরচ হয় ৪০-৫০ হাজার টাকা। যা অনেক বাবা-মায়ের পক্ষেই বহন করা সম্ভব হয় না। তাই এই খরচ জোগানো যাদের পক্ষে অসম্ভব তারা ঐ পথে পা না বাড়িয়ে বাড়ির কাছের কোনো কলেজেই ভর্তি হয়ে যায়। আর অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব বানিয়ে যারা কোচিংয়ে ভর্তি হয়েও যায় তারা মুখোমুখি হয় এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার। কারণ এখানে আলাদা আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয়। আবার আলাদা আলাদা বিষয়ের ওপরও আলাদা করে পরীক্ষা দিতে হয় কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে করে ছাত্ররা পড়ে যায় এক বিড়ম্বনায়। ঠিক কত টাকা আর সময়ের যে অপচয় হয় তার হিসাব মনে হয় কেউ রাখেও না। কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে একই দিনে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। দেখা যায় এক জায়গায় পরীক্ষা দেওয়ার পর পরের পরীক্ষাটা এত দূরে গিয়ে দিতে হয় যে অনেকের পক্ষেই তাতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। আর এই সম্ভব না হওয়ার মধ্যে দিয়ে মৃত্যু ঘটে কিছু সম্ভাবনার। এই সমস্যা সমাধানকল্পে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়েছে যে কথাটি তা হলো সমন্বিত ভর্তিব্যবস্থা। এর কিছু সুবিধা আছে আবার কিছু অসুবিধাও আছে।
অনেকেই বলে থাকেন এতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একসঙ্গে নেওয়া সম্ভব না। কেন সম্ভব না তার পক্ষে তারা অনেক যুক্তিও দেখিয়েছেন। কিন্তু যে সমস্যাটি ছাত্রদের বছরের পর বছর ভুগিয়ে চলেছে তার একটি স্থায়ী সমাধানের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সাধারণ ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়—এই চার ভাগে ভাগ করে নিতে পারি। এর পর মেডিক্যাল কলেজগুলোর মতো এই চার ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা আলাদা একটি রাঙ্কিং করে দিতে পারি। এক্ষেত্রে যেসব ছাত্র প্রকৌশলে পড়তে ইচ্ছুক তারা শুধু একটি পরীক্ষা দিয়েই ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারলে তার পছন্দ ও রাঙ্কিংয়ের সমন্বয় করে যে কোনো একটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। সে কোন বিষয়ে পড়বে এটা তার মেধা তালিকা এবং পছন্দের ক্রম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দেবে। এতে করে একদিকে যেমন ছাত্রদের টাকা ও সময় দুই-ই বাঁচবে তেমনি কোচিং সেন্টারগুলোর দৌরাত্ন্যও কমবে। তাই সাধারণ ছাত্রদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে অভিভাবকগণ একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর সিদ্ধান্তে আসবে বলেই মনে করি। আমরা যে দুর্ভোগগুলোর সম্মুখীন হয়েছি তা আর তাদের ক্ষেত্রে ঘটবে না বলেই দৃঢ় বিশ্বাস।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply