সারাদেশ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ৯, ২০১৭ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 268 বার

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি॥
ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে প্রতিপক্ষরা সভাপতি প্রার্থীসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছয়জনকে পিটিয়ে জখম করেছে। পরে হামলাকারিরা স্থানীয় একটি সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের চারটি মুর্তি ভাঙচুর করে। এক যুবলীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্যের নেতৃত্বে বুধবার রাতভর সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কুল্যা ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে এ তাবের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ওই এলাকার ৫০ ঘর হিন্দু পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। পুলিশ বৃহষ্পতিবার সকালে আহতদের উদ্ধার করে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
হামলায় আহতরা হলেন, কচুয়া গ্রামের কচুয়া সার্বজনীন দুর্গা পুজা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি উজ্জল ঘোষ (২৪), তার বাবা বাবুলাল ঘোষ (৫৮), একই গ্রামের কালিপদ ঘোষ (৫৫) ও তার ছেলে পলাশ ঘোষ (৩৫), সুকুমার ঘোষ (৫৮) ও তার ছেলে সুমন ঘোষ (২৬) ও মৃত কানাই ঘোষের ছেলে কালিপদ ঘোষ (৫৫)।
আটককৃতরা হলেন, কচুয়া গ্রামের সালাম সরদারের ছেলে শাহারিয়ার হোসেন (২৫) ও একই গ্রামের আব্দুল আলীমের ছেলে চঞ্চল হোসেন (২৪)।
সার্বজনীন দুর্গা পুজা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি উজ্জল ঘোষ জানান, আগামি রোববার কুল্যা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কাউন্সিল অধিবেশন হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি ওই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রার্থী ও ভালুকা চাঁদপুর ডিগ্রী কলেজের মানবিক বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্র। একইভাবে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক ও জেলা পরিষদের ১৩ নং ওয়ার্ড সদস্য কচুয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র দরগাহপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম শুভ তার প্রতিপক্ষ সভাপতি প্রার্থী। সভাপতি প্রার্থী হওয়ায় তাকে (উজ্জ্বল) কিছুদিন ধরে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছিল।
উজ্জল ঘোষ জানান, যশোর থেকে গাড়িতে এসে বুধবার রাত ১২টার দিকে তিনি কচুয়া বাজার এলাকা থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। পথিমধ্যে শিশুতলা নামকস্থানে পৌঁছালে যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের ব্যবহৃত প্রাইভেটকারটি তার সামনে আড় করে দেওয়া হয়। গাড়িতে বসে থাকা দেলোয়ার হোসেন ও তার ভাগ্নে খায়রুল ইসলাম শুভ, শাওনসহ কয়েকজন নেমে এসে তাকে জীবননাশের হুমকি দেয়। ভোট করার সাধ মিটিয়ে দেব, দেখি তোকে কে বাঁচায়, ভারতে যাওয়ার সময় পাবি না ইত্যাদি বলে হুমকি দেওয়ার একপর্যায়ে তার বাবা বাবুলাল ঘোষ ঘটনাস্থলে চলে এলে হুমকিদাতারা চলে যায়। এরপর তিনি বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলে কচুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কচুয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের মোড়ে তাকে চারটি মোটর সাইকেলে গতিরোধ করে দেলোয়ার হোসেন, শুভ, শাওন, চঞ্চল হোসেন, শাহারিয়ার, মাগফুর, গনি, আছাফুরসহ কয়েকজন তাকে লোহার রড, হকি স্টিক দিয়ে পিটাতে শুরু করে। তার চিৎকার শুনে পুজা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গা প্রতিমা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা পলাশ ঘোষ, সুমন ঘোষ, কালিপদ ঘোষ, তার সঙ্গে থাকা বাবা বাবুলাল ঘোষ ও সুকুমার ঘোষ ছুটে এলে তাদেরকেও একইভাবে পিটিয়ে জখম করা হয়। কেড়ে নেওয়া হয় তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা। কিছুক্ষণের মধ্যে ২৫/৩০ টি মোটর সাইকেলের বহরে থাকা প্রায় ৫০ জন সন্ত্রাসী তাদের ঘোষপাড়া ঘিরে ফেলে। হামলাকারিরা তাদেরকে বাড়ি থেকে বের হতে দেয়নি। এমনকি তারা চিকিৎসা নিতেও পারেননি। খবর পেয়ে আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ অধিকারী ছুঁটে আসেন। রাত তিনটার দিকে তিনি চলে যাওয়ার পর ওই হামলাকারিরা কচুয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির সংলগ্ন টিনের চালের নীচে নির্মানাধীন লক্ষ¥ী-নারায়ন, ব্রহ্মা, গৌড় পাখি ও নাগ মুর্তি ভাঙচুর করে ত্রাসসৃষ্টি করে উল্লাস করতে করতে চলে যায়।
উজ্জল ঘোষ আরো জানান, পুলিশ চলে যাওয়ার পরপরই খায়রুল ইসলাম শুভ ও দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মোটর সাইকেলে আবারো তাদের পাড়ায় বাড়ি বাড়ি টহল দিতে শুর করে। তারা বাড়ি বাড়ি যেয়ে কাউকে বের হতে মানা করে। একপর্যায়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে তিনি ও তার বাবা বাগানে আশ্রয় নেন। রাত সাড়ে তিনটার থেকে ভোর চারটার মধ্যে হামলাকারিরা কচুয়া সার্বজনীন দুর্গা পুজা সংলগ্ন টিনের চালের তলায় নির্মাণাধীন শয্যায় শায়িত লক্ষ¥ী নারায়ন, ব্রহ্মা, গৌড় পাখি ও নাগ মুর্তি ভাঙচুর করে ত্রাসসৃষ্টি করে। হামলাকারিদের হুমকির মুখে রাতভর জিম্মি হয়ে পড়ে কচুয়া ঘোষপাড়া এলাকার ৫০ ঘর হিন্দু পরিবার। তারা ভয়ে মুখ খুলতে পারছে না। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে বৃহষ্পতিবার সকালে আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
আশাশুনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য হীরুলাল মন্ডল বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়াহিয়া ও সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ঢালীসহ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে আসে। তারা উজ্জল ঘোষসহ নির্যাতিতদের কাছে হামলার বর্ণনা শোনেন। এমনকি রাতে হামলাকারিরা যে বিভীষিকা তৈরি করেছে তার বর্ণনা শুনে হতবাক হয়ে যান। বর্তমান সরকারের সময়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর এ ধরণের হামলা ও মুর্তি ভাঙচুরের প্রতিবাদ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের রিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তিনি।
এব্যাপারে আশাশুনি উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহবায়ক দেলোয়ার হোসেন জানান, এলাকায় আওয়ামী লীগের তিন চার টি গ্রুপ রয়েছে। তার ভাগ্নে শুভ এর বিরুদ্ধে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি প্রাথী উজ্জল ঘোষ। জামায়াত শিবিরকে নিয়ে উজ্জ্বল এলাকায় নিজেদের অধিকার কায়েম করতে চায়। বুধবার রাত ১২টার দিকে তিনি তার দলীয় কিছু লোকজনকে নিয়ে একটি দাওয়াতী অনুষ্ঠান থেকে ফিরে গুনাকার কাটি বাজারে উত্তমের সেলুনে বসে চুল কাটাচ্ছিলেন। মহাজনপুর থেকে দু’ আসামীকে ধরে নিয়ে ফেরার সময় তিনি কচুয়ায় একটি বিরোধ হয়েছে মর্মে উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ অধিকারী ও প্রদীপ মুলকে অবহিত করেন। বিশ্বজিৎ অধিকারী থানা থেকে আবার ফিরে আসার পর তারাও পুলিশের সঙ্গে কচুয়ায় জান। মুর্তি ভাঙচুরের ঘটনাটি সাজানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি মামলা করার জন্য নাটক করা হয়েছে। তার ভাগ্নে শুভ’র সঙ্গে উজ্জ্বলের হাতাহাতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। তবে শুভ’র মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহীদুল ইসলাম শাহীন জানান, ছাত্রলীগের কাউন্সিলকে ঘিরে যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ও খায়রুল ইসলাম শুভ এর নেতৃত্বে বুধবার রাতে প্রতিপক্ষ প্রার্থী ও কচুয়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি উজ্জ্বলসহ ছয়জনের উপর হামলা ও নির্যাতন চালানোা হয়েছে। পরে ওই হামলাকারিরা মন্দিরের চারটি মুর্তি ভাঙচুর করেছে। এ ঘটনায় বাবুলাল ঘোষ বাদি হয়ে যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান আসামী করে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজুহাতনামা ৩০/৩৫ জনের বিরুদ্ধে বৃহষ্পতিবার বিকেলে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে শাহারিয়ার ও চঞ্চল হোসেন নামের দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Leave a Reply