• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ন

মূল উৎস রেমিটেন্স গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ছে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সরকারি-বেসরকারি বহুমুখী উদ্যোগে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। ফলে ছোট ছোট উদ্যোক্তাও। প্রতিদিনই গড়ে উঠছে ছোট ছোট নতুন প্রকল্প। এ সব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মাছের ঘের, হাঁস-মুরগি ও গরুর ফার্ম এবং বিভিন্ন ফলের বাগান। এ সব কাজ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থায়ন করছে প্রবাসীরা। ওই পরিবার যেমন স্বালম্বী হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে নতুন কর্মসংস্থান। সামগ্রিকভাবে এর প্রভাব পড়ছে দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে। তবে উদ্যোক্তারা বলছেন, তাদের বড় সমস্যা হল আইনশৃংখলা পরিস্থিতি। মাঝে মাঝে তাদের প্রকল্প থেকে উৎপাদিত পণ্য চুরি হয়ে যায়। আর সরকার সহযোগিতা করলে স্বনির্ভর হয়ে দাঁড়াবে দেশের অর্থনীতি। এ সব উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন দেশের অর্থনীতিবিদরা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আবু আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে গ্রামের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়াও রেমিটেন্সের কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। তিনি বলেন, দেশের জনশক্তির বড় একটি অংশই কর্মক্ষম। এরা কম-বেশি কাজ করে। ফলে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারলে দেশের অর্থনীতি এমনিতে শক্তিশালী হবে।

জানা গেছে, দেশের জাতীয় আয়ের অন্যতম খাত হল রেমিটেন্স (প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ)। প্রায় ১ কোটি বাংলাদেশি মানুষ বিদেশে আছে। এরা প্রতিবছর দেশে ১৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠায়। আর ঈদে এই প্রবণতা বাড়ে। বাড়তি খরচের জন্য প্রবাসীরা তাদের স্বজনদের কাছে অতিরিক্ত অর্থ পাঠায়। এর বড় অংশই যাচ্ছে গ্রামে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে গত মাসে প্রায় ১৩০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছে। আগস্টে তা আরও বাড়বে। এ সব রেমিটেন্সের বড় একটি অংশ গ্রামে জমি ও বিভিন্ন বিনিয়োগে ব্যয় হয়। ফলে সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে এর প্রভাব পড়ছে।

চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা ও দারিদ্র্য বিমোচন খাতে বরাদ্দ প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। এ সব অর্থ ব্যয় হচ্ছে, ভিক্ষাবৃত্তির অবসান, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বয়স্ক ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বিধবা ভাতা, এতিম শিশুদের জন্য বরাদ্দ, উপবৃত্তি, একটি বাড়ি একটি খামার, অতি দরিদ্রদের কর্মসংস্থান, ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখা ইত্যাদি খাতে। এর সুবিধাভোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এই টাকার বড় অংশই ব্যয় হয় গ্রামে। ফলে রমজান এবং ঈদে গ্রামে এর প্রভাব পড়ে। এ ছাড়া চলতি অর্থবছরে সরকারের কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ১৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এই ঋণের প্রায় পুরোটাই গ্রামে বিতরণ করা হবে। এফবিসিসিআইর হিসাবে প্রতিবছর জাকাত ও কোরবানির গরুর চামড়া বড় অংশই গ্রামে চলে যায়। এ ছাড়া গ্রামের দরিদ্র মানুষের সহায়তায় শহরের লোকজন সাধ্য অনুযায়ী অর্থের যোগান দিচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ৫ লাখ মেট্রিক টন। এ ছাড়াও লিচু, কাঁঠাল, জাম, আনারস এবং জামরুলসহ সব মৌসুমী ফল বিক্রির টাকাও গ্রামে যাচ্ছে। এতে করে ওই সব অঞ্চলের অর্থনীতি এখন চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ব্যাংকগুলো বর্তমানে এসএমই খাতে বেশি ঋণ দিচ্ছে। এর কল্যাণে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে পণ্য উৎপাদন করছে। আঞ্চলিক পণ্যগুলোও ভালোভাবে উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ির, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের লুঙ্গি ও তাঁতের কাপড়, মুন্সিগঞ্জের রুহিতপুরী তাঁতের কাপড়, গাজীপুরের কালীগঞ্জের টাওয়াল, রূপগঞ্জের জামদানি শাড়ি। এ সব মিলে গ্রামীণ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পগুলোও এখন বেশ জমে উঠেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে দেশের ৫৭টি ব্যাংকের সারা দেশে ৮ হাজার ৮৪৯টি শাখা রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামীণ শাখা ৫ হাজার ৪৯টি। যা মোট শাখার ৫৭ দশমিক ১১ শতাংশ। অর্থাৎ ব্যাংকিং খাতে শহুরে শাখার চেয়ে গ্রামীণ শাখাই বেশি। ব্যাংকগুলোতে গ্রামের আমানতের পরিমাণ ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোর গ্রামীণ শাখায় মুদ্রার সরবরাহ বেড়েছে। এ ছাড়া এনজিও ও গ্রামীণ ব্যাংক থেকেও টাকার প্রবাহ বেড়েছে।

এদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। কোমল পানীয়, চা, চিনিসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য, বিড়ি, সিগারেট এবং প্রিন্টিং আইটেমের চাহিদা বেড়েছে। ফোন কল ও এসএমএসের (খুদে বার্তা) কারণে বাড়ছে মোবাইল কোম্পানিগুলোর ব্যবসাও। ভোটারদের কাছে টানতে নগদ টাকা ও বস্ত্র বিতরণ করছে প্রার্থীরা। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র বলছে, অন্যান্য সময়ের চেয়ে ব্যাংকগুলোর গ্রামের শাখায় মুদ্রা চাহিদা বেড়েছে। সবকিছু মিলে চাঙ্গা হয়ে উঠছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিভিন্ন কারণে গ্রামে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। এর মধ্যে নির্বাচন এলেই বণ্টন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। নির্বাচনী এলাকাগুলোতে একজনের হাত থেকে বিভিন্ন জনের হাতে চলে যায় টাকা। এতে টাকার প্রবাহ বেড়ে যায়। আর মূল্যস্ফীতিতেও এর প্রভাব পড়ে। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ করে প্রিন্টিং ব্যবসার পোয়াবারো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনের ইঙ্গিত পাওয়ার পরই আগ্রহী প্রার্থীরা শুভেচ্ছা এবং নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে পোস্টার ও বিলবোর্ড ছাপিয়েছেন। এরপর নির্বাচন কমিশন থেকে চূড়ান্ত ঘোষণা এবং পরবর্তীকালে প্রতীক বরাদ্দের পর দুই দফায় পোস্টার ও লিফলেটসহ অন্যান্য প্রচারপত্র ছাপিয়েছেন প্রার্থীরা। এভাবে কয়েক দফার প্রিন্টিংয়ে ছাপাখানাগুলো বেশ জমিয়ে উঠেছে।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ

You cannot copy content of this page

You cannot copy content of this page