আমার কাছে মনে হয় ঈদের দিনটি যেহেতু বিশেষ, তাই দর্শক-শ্রোতাদের বিশেষ প্রত্যাশা থাকে সবসময়ই। আগের মতো এখন ক্যাসেটের যুগ নেই। তাই উৎসব করে গান প্রকাশের অনুভূতিটাও মনে হয় হারিয়ে গেছে। তারপরও বিশেষ দিবসগুলোতে বাড়তি একরকম আয়োজন করতে হয়। সারা বছর সবাই অনেক গান প্রকাশ করেন ঠিকই কিন্তু গানগুলো মানুষের মন পর্যন্ত যেতে পারে না। সবার প্রথম যে বিষয়টি খেয়াল রাখা উচিত সেটি হচ্ছে শ্রোতারা কি শুনতে চান তা আগে বুঝতে হবে। কোন বিষয়টি নিয়ে গান লিখলে তা মানুষের বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা থাকবে সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সব সময় একটি কথা মানতেই হবে। ওল্ড ইজ গোল্ড। আমাদের সময় যেসব গান হয়েছে তা আর কখনও হবে না। এখনকার সবাই তারকা। তারা আকাশে থাকে। শ্রোতাদের মনে জায়গা করতে হবে এমন ভাবনা নেই। কিন্তু এই ভাবনা থাকা দরকার। তাহলে তারা ভালো গান উপহার দিতে পারবে। সে জন্য বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া এখন তো বছরজুড়েই গান প্রকাশ পায়। বরং আমাদের সময়ে বিশেষ দিবসে গান প্রকাশের জন্য মুখিয়ে থাকতে হতো। এখন সে সময়ে অনেক বেশি গান তৈরি হচ্ছে। গানও আছে। আগে আয়োজন করে বসে গান শুনতেন সবাই। এখন হাঁটতে গিয়ে গান শোনেন। সবকিছুর মধ্যে একটা অস্থিরতা। তাই ঈদে গানের সে রকম আমেজ পাওয়া যায় না। তাছাড়া গান মেশিননির্ভর হয়ে এতটাই একঘেয়ে হয়ে গেছে, যে গান শুনি তা একই মনে হয়। মোটকথা, যারা গান তৈরি করেন আর যারা শোনেন দু’দিক থেকেই ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। গান হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ভালো কিছু করার চেষ্টা আছে কিন্তু সব কিছুই রোবোটিক। কানে লাগার মতো বা মনে ধারণ করার মতো কিছু হচ্ছে না। চর্চা ছাড়া কিছু হয় না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও এটি সত্যি, আমাদের সময় রেওয়াজের যে বিষয় ছিল এখনকার ছেলেমেয়ের মধ্যে তা দেখি না বললেই চলে। গান সাধনার বিষয়। মনে প্রাণে সাধনা করে চর্চা করতে হয়। খ্যাতির পেছনে না দৌড়ে সাধনা এবং চর্চা করলেই একজন মানুষ সত্যিকারের শিল্পী হতে পারেন।