একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে তাদের কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) প্রণয়ন ও প্রকাশ করেছে। এ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচনী বিধি-বিধানে সংস্কারসহ নির্বাচন কমিশনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ করণীয় রয়েছে। একই সঙ্গে করণীয় রয়েছে সরকার, রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজসহ নির্বাচন সংশিষ্ট সকলের।
সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচন মানেই সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। শুধু তাই নয়, নির্বাচন বলতে প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনও, যেখানে ভোটার অনেক প্রার্থীর মধ্য থেকে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বেছে নেবে। কারণ ‘নির্বাচন’ মানেই ‘চয়েস’ বা বিকল্পের মধ্য থেকে বেছে নেওয়ার সুযোগ। তাই প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কমিশনকে সকল প্রতিযোগীর জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশনের যা যা করণীয় সে সম্পর্কে সংক্ষেপে নিম্নে আলোকপাত করা হলো:
মনোনয়নের লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে প্যানেল তৈরির বিধানের প্রয়োগ: নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তৃণমূল পর্যায়ের দলীয় সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে প্রত্যেক সংসদীয় আসনের জন্য একটি প্যানেল তৈরি করার এবং সেটি থেকে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেওয়ার বিধান সংশোধিত আরপিও’তে অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে নবম সংসদে আরপিও অনুমোদনের সময়ে বিধানটিতে পরিবর্তন আনা হয়। সংশোধিত বিধান অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ডের এখন আর তৃণমূলে তৈরি প্যানেল থেকে মনোনয়ন প্রদানের বাধ্যবাধকতা নেই, বোর্ডকে শুধু তা বিবেচনায় নিতে হবে। এতে একদিকে যেমন তৃণমূলের মতামত উপেক্ষিত হচ্ছে, অন্যদিকে মনোনয়ন বাণিজ্যও দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমরা মনে করি, তৃণমূলের থেকে প্যানেল তৈরির এ আইনী বিধান পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে তা আরও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা আবশ্যক।
হলফনামা যাচাই/বাছাই ও ছকে পরিবর্তন: মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিলকৃত হলফনামায় অনেক প্রার্থীই অসত্য তথ্য দেন বা তথ্য গোপন করেন, যে কারণে তাদের মনোনয়নপত্র এবং নির্বাচিত হলে সেই নির্বাচন বাতিল হবার কথা। তাই আমরা মনে করি যে, হলফনামায় প্রদত্ত তথ্য কঠোরভাবে যাচাই-বাছাই করে অসমাপ্ত হলফনামা প্রদানকারী, তথ্য গোপনকারী ও ভুল তথ্য প্রদানকারীর প্রার্থিতা বাতিল কিংবা তাদের নির্বাচন বাতিল করা আবশ্যক। এ কাজটি করা হলে অনেক অবাঞ্ছিত ব্যক্তিকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখা এবং আমাদের রাজনীতি বহুলাংশে কলুষমুক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া হলফনামার ছকটিও অসম্পূর্ণ এবং এতে গুরুতর সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন, বর্তমানে অনেকে আয়ের উেসর বিস্তারিত বিবরণ দেন না। কারা প্রার্থীদের ওপর নির্ভরশীল সে তথ্যও হলফনামা থেকে পাওয়া যায় না। এছাড়া প্রার্থীর বয়স এবং তার বিদেশি নাগরিকত্ব সম্পর্কিত তথ্যও হলফনামায় অন্তর্ভুক্ত করা আবশ্যক।
দলের কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব: রাজনৈতিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখারও বিধান রয়েছে। আমাদের মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। তাই এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নজরদারি প্রয়োজন। পাশাপাশি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ কর্তৃক নির্দিষ্ট অনুপাতে নারী প্রার্থী মনোনয়নের জন্য বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করা প্রয়োজন বলেও আমরা মনে করি।
নির্বাচনী বিরোধ: সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে নির্বাচনী বিরোধের দ্রুত মীমাংসা হওয়া আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দেশে নির্বাচনী বিরোধ-সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির ব্যাপারে ব্যাপক দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে নির্বাচনী মামলা সংসদের মেয়াদ শেষ হবার আগেও নিষ্পত্তি হয় না। এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতা নির্বাচনী অপরাধকেই উত্সাহিত করে। নির্বাচনী বিরোধের দ্রুত মীমাংসার লক্ষ্যে শুধুমাত্র নির্বাচনী বিরোধ মীমাংসার জন্য একটি বিশেষ নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল ও একটি আপিল ট্রাইব্যুনাল গঠন করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন: আমরা মনে করি যে, সোশ্যাল মিডিয়ার জন্য আচরণবিধি প্রণয়ন জরুরি, যাতে ভুয়া এবং অসত্য সংবাদ প্রকাশ বন্ধ করা যায়। কারণ অসত্য সংবাদ প্রচারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত হতে পারে।
কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা: একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য কমিশনকে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট সকলের আস্থা অর্জন করতে হবে এবং নিরলসভাবে সচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনার মধ্য দিয়ে এই আস্থা টিকিয়ে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, সাংবিধানিকভাবে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরিভাবে কমিশনের জবাবদিহিতা করতে হয় না। তাই সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা চর্চার মাধ্যমেই কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন এবং তাদের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
রাজনৈতিক দলের করণীয়: সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন পেতে হলে নির্বাচন কমিশনের সহযোগী হয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে শুরু থেকেই রাজনৈতিক দলের সক্রিয়তা প্রয়োজন। এর প্রথম ধাপ হলো রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রার্থী নির্বাচন। দলের প্রার্থী নির্বাচনের ধরা-বাঁধা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতি বিভিন্ন দেশের আইন ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত থাকলেও, এটি নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের। সিংহভাগ দেশে এ পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া প্রতিটি দলের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই স্বীকৃত। তবে এক্ষেত্রে স্বীকৃত দুটি পদ্ধতি হচ্ছে—এক. দলের তৃণমূলে তৈরি তালিকা থেকে শীর্ষস্থানীয় মনোনয়ন বোর্ডের মাধ্যমে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করা; দুই. তৃণমূল পর্যায়ে গোপন ভোটের মাধ্যমে প্যানেল তৈরি করা। প্রসঙ্গত, প্রথম প্রক্রিয়াটি পুরোপুরিভাবে অনুসরণ না করার কারণে নির্বাচনে তথাকথিত ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’র জন্ম হয়, যার উদাহরণ আমরা আমাদের দেশে বিগত নির্বাচনসমূহে দেখতে পাই। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবশ্য একটি স্বীকৃত ধারায় প্রার্থী নির্বাচন করা উচিত, তা না হলে নতুন রাজনীতিকের যেমন উত্থান হবে না, তেমনি মেধাবী তরুণদের রাজনীতিতে আকৃষ্ট করা যাবে না।
রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থীদের ওপরই বহুলাংশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নির্ভর করে। কারণ রাজনৈতিক দল ও তাদের মনোনীত প্রার্থীরাই প্রায় সকল নির্বাচনী অপরাধের উত্স। তারাই মনোনয়ন বাণিজ্যে লিপ্ত হয়, নির্বাচনে টাকা দিয়ে ভোট কেনে, নির্বাচনে পেশি শক্তির ব্যবহার করে, প্রতিপক্ষকে হুমকি দেয়, ভোটারদেরকে ভোট কেন্দ্রে আসতে বিরত করে এবং ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ইত্যাদি ইত্যাদি। রাজনৈতিক দলগুলোই নির্বাচনকে টাকার খেলায় পরিণত করে, যা আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য আজ বিরাট হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর এবং তাদের প্রার্থীদের সদাচরণ ব্যতীত সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রায় অসম্ভব। বস্তুত দল ও প্রার্থীর সদাচরণ নিশ্চিত হলে নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথের অনেক বাধাই দূর হয়ে যাবে। আর এজন্য প্রয়োজন হবে রাজনৈতিক দলের সদিচ্ছা, দলের অভ্যন্তরে গণতন্ত্রের চর্চা ও শুদ্ধি অভিযান।
নির্বাচনকে একটি প্রতিযোগিতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে হবে। শুধু তাই নয়, যেকোনো মূল্যে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। নির্বাচন-সংশ্লিষ্টদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য কোনোভাবেই প্রভাবিত করা যাবে না। নির্বাচনী সকল নিয়ম-কানুন ও আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে একটি ঐকমত্য জরুরি।
গণমাধ্যমের করণীয়: নির্বাচনে ভোটাররাই ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। তাই ভোটারদের সচেতনতা এবং তাদের প্রার্থীদের সম্পর্কে তথ্যপ্রাপ্তি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য। গণমাধ্যম এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। গণমাধ্যম প্রার্থীদের সম্পর্কে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ এবং প্রার্থী কর্তৃক হলফনামায় প্রদত্ত তথ্যসমূহ ভোটারদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরতে পারে, যাতে ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে-শুনে-বুঝে ভোট দিতে পারেন। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে হতে হবে মিডিয়াবান্ধব এবং মিডিয়ার সহযোগিতা কমিশনকে গ্রহণ করতে হবে। মিডিয়াকে নির্বাচন কমিশনের চোখ-কান হিসেবে গণ্য করা আবশ্যক। কারণ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিসীম।
নাগরিক সমাজের করণীয়: অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকলেই যেন স্ব-স্ব অবস্থানে থেকে যথোপযুক্ত ভূমিকা পালন করেন, সে লক্ষ্যে নাগরিক সমাজ তথা সচেতন নাগরিকদের পাহারাদার (ওয়াচ ডগ) ও চাপ সৃষ্টিকারীর (প্রেসার গ্রুপ) ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে সত্, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের পক্ষে এমনভাবে আওয়াজ তুলতে হবে, যাতে তাদের নির্বাচিত হয়ে আসার মতো পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
ভোটারদের করণীয়: সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদেরও রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ভোটারদের ভোট প্রদানকে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক দায়িত্ব মনে করে সত্, যোগ্য ও জনকল্যাণে নিবেদিত প্রার্থীদের নির্বাচিত করতে হবে। অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে অথবা অন্ধ আবেগের বশবর্তী হয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। দুর্নীতিবাজ, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, যুদ্ধাপরাধী, নারী নির্যাতনকারী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, ঋণখেলাপি, বিলখেলাপি, ধর্ম ব্যবসায়ী, ভূমিদস্যু, কালো টাকার মালিক, অর্থাত্ কোনো অসত্, অযোগ্য ও গণবিরোধী ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া যাবে না। ভোটদানের পাশাপাশি ভোটের ফলাফল রক্ষার ব্যাপারেও তাদের সচেতন এবং প্রয়োজনে সংগঠিত ও সোচ্চার হতে হবে।
শেষকথা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো অনেক আগে থেকেই মাঠ গরম করা শুরু করেছে। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছে। কমিশন কর্তৃক আয়োজিত সংলাপগুলোতে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতকরণে বিভিন্ন মহল থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ আসছে। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে প্রাপ্ত পরামর্শের আলোকে নির্বাচন কমিশন কিছু পথনির্দেশনা পাবে, যা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে করণীয় নির্ধারণে কমিশনকে সহায়তা করবে। নির্বাচন কমিশন যৌক্তিক প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করে আন্তরিকভাবে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে, তা একাধারে যেমন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অর্থবহ নির্বাচন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে; তেমনি বাংলাদেশের নির্বাচনী সংস্কৃতিতেও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।