তুমুল বৃষ্টির কারণে যমুনা নদীর পানি বেড়ে সৃষ্ট বন্যায় দিল্লির অসংখ্য সড়ক ভেসে যাওয়ার কারণে নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে ভারতের এ রাজধানী শহর। দিল্লি পেরিয়ে পানি আগ্রাতেও প্রবেশ করেছে। ৪৫ বছরে এই প্রথম যমুনা নদীর পানি পৌঁছে গেল তাজমহলের গোড়ায়। তাজমহল চত্বরের চারপাশে জমে আছে পানি।
বিগত ৪৫ বছরের মধ্যে এমন চিত্র কখনো দেখা যায়নি। যমুনা নদীর পানিতে প্লাবিত হয়েছে তাজমহলের পিছনদিকের বাগান।
শুধু তাজমহল নয়, ভেসে গিয়েছে দশেরা ঘাটও। এ ছাড়াও ইদমাত-উদ-দউলার সমাধিস্থলও পানিতে ভাসছে।
রামবাগ, মেহতাববাগ, জোহরাবাগ, কলা গুমবাদ এবং চিনি কা রউজার মতো সৌধগুলি আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে যমুনা নদীর পানি ঢুকে এই সৌধগুলো নষ্ট করতে পারে। তাজমহল চত্বর বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় চিন্তায় পড়েছেন ইতিহাসবিদরা। ইতিমধ্যে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রতিনিধিরা।
তবে তারা বলছেন, এখনই দুশ্চিন্তার কিছু নেই। কারণ, তাজমহলের বেসমেন্ট এখনো পানি প্রবেশ করেনি। তবে পানি বাড়তে থাকলে বিপদ।
এদিকে তাজমহলের দেওয়াল স্পর্শ করে ফেলেছে যমুনার পানি। তবে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ারসহ সংরক্ষক প্রিন্স বাজপেয়ী বলেন, ‘তাজমহল এমনভাবেই তৈরি করা হয়েছিল যাতে, যমুনায় বন্যা দেখা গেলেও মূল সমাধিস্থলে পানি কোনওভাবেই পৌঁছবে না।
১৯৭৮ সালে বন্যাতেও তাজমহলের পিছনের দেওয়াল পর্যন্ত পানি উঠে গিয়েছিল। এরপর পানি নেমে যাওয়ায় পিছনের দিকে একটি বড় ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়েছিল। সেখানেই পরবর্তীকালে বাগান তৈরি করা হয়।’
১৯৭৮ সালেও যমুনা নদীর পানির স্তর বেড়ে হয়েছিল ৫০৮ ফুট। তখন তাজমহলের বাসাই ঘাট বুর্জ পানিতে ডুবে গিয়েছিল। পাশাপাশি এই সৌধের বেসমেন্টের মোট ২২টি ঘরে পানি ঢুকে গিয়েছিল। এরপর কাঠের দরজা সরিয়ে বাসাই এবং দশেরা ঘাটের মাঝে একটি দরজা তৈরি করে দেয়।
দিল্লির পাশাপাশি এবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আগ্রা ও মথুরাও। আগ্রা এবং মথুরার মোট ৫০০ বিঘা চাষের জমি ডুবে গেছে পানিতে। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় ৬টি জেলায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও বেসরকারি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন অফিস-আদালতের কথা চিন্তা করে দিল্লির কয়েকটি প্লাবিত রাস্তা পরিষ্কার করে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ। তবে যমুনা নদীর পানি বাড়ার ফলে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এখনো জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে। সেখানকার অগণিত ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে, হাজার হাজার মানুষকে আশ্রয় নিতে হয়েছে দিল্লির একাধিক অংশে সরকারের বানানো অস্থায়ী আশ্রয় শিবিরগুলোতে।