জুন মাসের ২৩-২৪ তারিখ, ভড়কে দেওয়ার মতো এক ঘটনা ঘটে রাশিয়ায়। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পোষা ওয়াগনার বাহিনীই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মস্কো অভিমুখে রওয়ানা হয়। আর এই বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন ‘পুতিনের বাবুর্চি’ তকমা পাওয়া ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এতে অনেক পশ্চিমা দেশই বলতে শুরু করে, ‘পুতিনের পোষা দৈত্যই এবার তাকে বেধড়ক পেটাচ্ছে।’
তবে ঠাণ্ডা মাথার নেতা হিসেবে পরিচিত পুতিন এবারও উতরে গেছেন। বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় তিনি ওয়াগনারদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছান এবং দিন না গড়াতেই বিদ্রোহ নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন। সাথে ওয়াগনারদের শর্ত জুড়ে দেন ‘হয় রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অধীনে থেকে যুদ্ধ করো না হয় বেলারুশে যাও।’
এই পুতিন-ওয়াগনার সমঝোতার পর, ইউক্রেন ও পোল্যান্ড খবর দিয়েছিল বেলারুশে যাচ্ছে ওয়াগনার বাহিনী। তারা সেখানে বেলারুশের সেনাদের প্রশিক্ষণ দেবে। পোল্যান্ড আত্মসুরক্ষার জন্য বেলারুশ সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনও করে, পাশাপাশি শক্তপোক্ত সীমানা প্রাচীরও তোলে ওয়ারশ।
এসব ঘটনার মাঝে এতোদিন চুপচাপই ছিলেন ওয়াগনার প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বিদ্রোহের শাস্তি হিসেবে হয়তো বিষ প্রয়োগে ওয়াগনার প্রধানকে হত্যা করেছে পুতিন প্রশাসন।
আর সেই গুঞ্জনের মাঝেই নতুন ভিডিও বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছেন প্রিগোজিন। তিনি বেলারুশে নিজ বাহিনীর সদস্যদের স্বাগত জানিয়েছেন। বলেছেন, তার বাহিনী আর ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেবে না। ওয়াগনার আফ্রিকায় নতুন যাত্রা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
টেলিগ্রামে বুধবার প্রকাশিত হওয়া ফুটেজে ওয়াগনার প্রধান আরো বলেছেন, ‘স্বাগতম ছেলেরা, বেলারুশের মাটিতে স্বাগতম।’ ‘আমরা সম্মানের সাথে লড়েছি।’ ‘রাশিয়ার জন্য তোমরা বড় কাজ করেছো। ‘
২০১৮ সাল থেকে লিবিয়া ও মালিসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে অভিযান পরিচালনা করছে ওয়াগনার। গত সোমবার মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, ওয়াগনার বাহিনী ৩০ জুলাই গণভোটের নিরাপত্তা দিতে এসেছে।
অন্যদিকে সিরিয়ায় থাকা ওয়াগনার বাহিনীকেও রাশিয়ার সেনাবাহিনীর অধীনে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ওয়াগনার বাহিনীকে ধীরে ধীরে করায়ত্ত করে চলেছে রাশিয়া। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আস্তে আস্তে ঝুঁকি তৈরি করা ওয়াগনারকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছেন চতুর পুতিন। তিনি এবার কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার পথেই হাঁটছেন।