• রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী শান্তি-নিরাপত্তায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল * রোহিঙ্গা প্রশ্নে সবাই একমত *

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও মহানুভবতা বিশ্বের প্রশংসা কুড়িয়েছে। শান্তি-নিরাপত্তায় বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে। স্থান ও সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এসব অসহায় মানুষকে আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের জনগণের ভূমিকা সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহযোগিতার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা) নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এতে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানসহ সফর নিয়ে তিনি ব্রিফ করেন।

বিএনপির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার কথা নাকচ করে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে না আসে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য করা যায় কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে অংশ নিয়ে আমি সাধারণ বিতর্ক পর্ব, ওআইসি কনট্যাক্ট গ্র“পের উচ্চপর্যায়ের সভাসহ সব দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরেছি। বাংলাদেশের মানুষের এ উদারতা ও মহানুভবতা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বলেন, এবারের জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এমন একটি সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন মিয়ানমারে জাতিগত নিধন অভিযানের ফলে হাজার হাজার নিরীহ রোহিঙ্গা প্রতিদিন প্রাণভয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। গত তিন সপ্তাহে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের বেশির ভাগই নারী, শিশু ও বয়স্ক। আগে থেকেই চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ফলে বর্তমানে আট লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমাদের দেশে অবস্থান করছে। তাদের খাদ্য, বাসস্থান ও জরুরি সহায়তা সংকুলান এবং তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসন নিয়ে আমরা জটিল সংকটের মুখোমুখি। এ অধিবেশনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গা সমস্যা তুলে ধরা ও এর সমাধানে বিশ্ববাসীর সহযোগিতা নিশ্চিত করা ছিল আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিনি জাতিসংঘের ৭২তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্ক পর্বে অংশ নিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যার কথা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন। তুরস্ক ও ইরানের রাষ্ট্রপতিসহ মুসলিম বিশ্বের বেশ কয়েকজন নেতা ওআইসি কনট্যাক্ট গ্র“পের সভায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করার বিষয়টি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এসব দেশ বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। সভায় আমি রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর চলমান নির্যাতন বন্ধে এবং মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে ওআইসির পক্ষ থেকে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানাই। এ সময় বিশ্বজুড়ে কেবল মুসলমানরাই কেন শরণার্থী হচ্ছেÑ তার কারণ অনুসন্ধান করতেও আমি ওআইসি নেতাদের অনুরোধ করি। ওই সভায় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে সব দেশের সম্মতিতে একটি ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট এলাকা পরিদর্শন করেছেন। রাষ্ট্রদূতরা রোহিঙ্গাদের অমানবিক কষ্ট প্রত্যক্ষ করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। এখন চীন কোনদিকে সমর্থন দেবে, সেটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এছাড়া সীমান্ত নিয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে ভারত, চীন, লাউস ও থাইল্যান্ডের ঝামেলা আছে। এ অবস্থায় তাদেরও তো নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি আছে। তিনি বলেন, কোন দেশ সমর্থন করল আর না করল তাতে আমার কিছু যায় আসে না। রোহিঙ্গাদের জন্য আমার যা কিছু করার তা করব। তবে বঙ্গবন্ধু যে আদর্শ আমাদের জন্য রেখে গেছেন সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়Ñ এই নীতিতে থাকতে চাই।

রোহিঙ্গা এখন একটি জাতীয় ইস্যু। এ অবস্থায় সব রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য করা যায় কিনা, প্রশ্ন করা হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভিক্ষুকের জাতি হতে চাই না। ভিক্ষুকের জাতির কোনো ইজ্জত থাকে না। বিএনপি এ জাতিকে ভিক্ষুকের জাতি করে রাখতে চায়। বিএনপির সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার কথা নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ভবিষ্যতে কেউ যেন এ ধরনের প্রস্তাব নিয়ে না আসে। শুক্রবার সকালে নিউইয়র্কে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, যারা সন্ত্রাস ও হত্যার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে ফিরে যেতে আগ্রহী নই। তাই বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব দেয়া কারও উচিত হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, যারা হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজনীতি, বঙ্গবন্ধুর বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড এবং দেশকে ধ্বংসে বিশ্বাসী তাদের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সমঝোতা হতে পারে না। তিনি বলেন, যারা আমার বাবা-মাকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে কখনও সমঝোতা হতে পারে না।

শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গাদের যা করার আওয়ামী লীগ করছে। প্রয়োজনে এক বেলা খেয়ে আরেক বেলার খাবার রোহিঙ্গাদের দেব। দেশের ১৬ কোটি মানুষ খেলে রোহিঙ্গারাও খাবে। তিনি বলেন, বিএনপির কী করার ক্ষমতা আছে। বিএনপি নেত্রী তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার ছেলে মারা যাওয়ার পর একজন মা হিসেবে আরেকজন মাকে আমি সমবেদনা জানাতে গেলাম। তিনি (খালেদা জিয়া) গেট-ই খোলেননি। আমি দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাদের এতবড় অডাসিটি। তাই বিএনপির সঙ্গে বসার কথা বলবেন না। বসার পরিবেশ তারাই নষ্ট করেছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, নিজেকে নিয়ে চিন্তা করি না। আমরা তো এমনিতেই খরচের খাতায়। জনগণের জন্য যদি কিছু করে যেতে পারি সেটাই আমার বড় পাওয়া।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের সফলতার সম্পর্কে তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী এবং জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ