• শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪১ অপরাহ্ন

কখনোই আর বাড়ি ফেরা সম্ভব হবে না : মণিপুরে নিগৃহীত তরুণীর মা

নিউজ ডেস্ক
আপডেটঃ : শনিবার, ২২ জুলাই, ২০২৩

ভারতের মণিপুরে দুই তরুণীকে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিও থেকে নেওয়া
জাতিগত সহিংসতায় বিধ্বস্ত ভারতের মণিপুর রাজ্যে নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরানো দুই তরুণীর একজনের মা বলেন, তাদের (ভুক্তভোগী পরিবারটির) আর নিজ গ্রামে ফেরার কোনো সম্ভাবনা নেই। দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ জানান তিনি।

ওই তরুণীর মা মানসিকভাবে গভীর আঘাতপ্রাপ্ত, সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তিনি কয়েক মিনিটের বেশি কথা বলতে পারছিলেন না। তিনি অভিযোগ করেন, মণিপুর সরকার সহিংসতা বন্ধ করতে বা জনগণকে সুরক্ষা দিতে যথেষ্ট পদক্ষেপ নেয়নি।

ভুক্তভোগী ওই মা বলেন, গত ৪ মে তার স্বামী ও ছেলেকে সহিংসতা চলাকালে একদল দুর্বৃত্ত হত্যা করে এবং মেয়েকে ছিনিয়ে নেয়। এরপর মেয়েকে তারা নগ্ন করে রাস্তায় ঘোরায় এবং সেটি ক্যামেরায় ধারণ করে। রাজ্যের মেইতেই ও কুকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হওয়ার একদিন পরই এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এনডিটিভিকে ওই নারী বলেন, ‘আমি আমার ছোট ছেলেকে হারিয়েছি, যাকে ঘিরে ছিল আমার সম্পূর্ণ আশা। আমি আশা করছিলাম, সে একদিন দ্বাদশ শ্রেণি শেষ করবে। অনেক কষ্ট করে, আমি তাকে সঠিক শিক্ষার জন্য স্কুলে পাঠিয়েছিলাম। এখন তার বাবাও আর নেই। আমার বড় ছেলের চাকরি নেই। তাই, যখন আমি আমাদের পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি, তখন আমার মনে আর কোনো আশা নেই।’

‘আমি হতাশ ও অসহায় বোধ করছি, এ কথা বলা ছাড়া আমার মনে আর কিছুই নেই’, বলেন ওই নারী।

দুটি সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভেঙে যাওয়ার পরে সৃষ্ট বড় ধরনের সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১২০ জনেরও বেশি প্রাণ হারিয়েছেন। ওই ভুক্তভোগী মা বলেন, নিজ গ্রামে ফিরে যাওয়ার চিন্তাও তার মাথায় আসে না।

‘আমাদের গ্রামে ফিরে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সেই চিন্তাটাও আমার মাথায় আসে না… না, আমরা ফিরে যেতে পারব না। আমি ফিরে যেতে চাই না। আমাদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আমাদের ফসলের ক্ষেত ধ্বংস করা হয়েছে। আমি কী করে ফিরে যাব? আমার গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি জানি না, আমার ও আমার পরিবারের ভবিষ্যত কী? তবে, আমি ফিরে যেতে পারব না’, বলেন ওই নারী।

গত ৩ মে থেকে শুরু হওয়া সহিংসতাকে নিয়ন্ত্রণ না করার জন্য মণিপুর সরকারকে দোষারোপ করেছেন ওই ভুক্তভোগী নারী। তিনি বলেন, ‘আমি খুব ক্ষুব্ধ। তারা (তরুণীর) বাবা ও ভাইকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে, এমনকি তার সঙ্গেও মানহানিকর কাজ করেছে… আমি খুবই আহত। মণিপুর সরকার কিছুই করছে না।’

কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে ওই ভুক্তভোগী নারী বলেন, ‘ভারতের মা-বাবারা, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা একটি সম্প্রদায় হিসাবে কী করব, তা ভাবতে পারছি না। ঈশ্বরের কৃপায় শারীরিকভাবে আমি ঠিক আছি, কিন্তু দিনরাত চিন্তা করছি। আমি একজন ডাক্তারের সঙ্গেও কথা বলেছি, কারণ ইদানীং আমি খুব দুর্বল বোধ করছি।’

সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভুক্তভোগী তরুণীদের একজন অভিযোগ করেন, পুলিশই তাদেরকে জনতার হাতে ছেড়ে দিয়েছিল এবং পরে তাদের বিবস্ত্র করে রাস্তায় হাঁটানো হয়।

এ ঘটনায় ১৫ দিন আগে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল, কিন্তু চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয় গতকাল শুক্রবার। ভয়াবহ ওই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ