• রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ১১:১৭ পূর্বাহ্ন

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান প্রতিফলিত হয়েছে

আল ইসলাম কায়েদ
আপডেটঃ : শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ সময় শুক্রবার ভোরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে তার নির্ধারিত ভাষণ দিয়েছেন। মাতৃভাষা বাংলায় দেয়া ভাষণটি ছিল আবেগঘন এবং একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকটসহ বিশ্বব্যাপী অভিবাসন ও শরণার্থী সমস্যা মোকাবেলার প্রশ্নে দিকনির্দেশনামূলক।

প্রতীক্ষিত এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বর্তমান রোহিঙ্গা সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিশ্ব-নেতৃত্ব তথা বিশ্ববিবেকের কাছে সুনির্দিষ্ট পাঁচটি প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। তার প্রস্তাবগুলো হল- অবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারে সহিংসতা ও ‘জাতিগত নিধন’ নিঃশর্তে বন্ধ করা, অবিলম্বে মিয়ানমারে জাতিসংঘ মহাসচিবের নিজস্ব একটি অনুসন্ধানী দল প্রেরণ করা, জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা, রাখাইন রাজ্য থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত সব রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে তাদের নিজ ঘরবাড়িতে প্রত্যাবর্তন ও তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করা এবং কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার নিঃশর্ত, পূর্ণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে আরও বলেছেন, আমরা যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই; মানবধ্বংস চাই না, অর্থনৈতিক উন্নতি ও মানবকল্যাণ চাই।

সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রীর এ ভাষণ নিঃসন্দেহে মানবিক এবং একই সঙ্গে বর্তমান সংকট থেকে মুক্তির বাস্তবসম্মত সুপারিশ। লক্ষণীয়, তার দফা পাঁচটি পরস্পর সম্পর্কযুক্ত এবং সম্মিলিত প্রয়াসই এগুলো বাস্তবায়ন করে ঘটাতে পারে রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান। রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন-নিপীড়ন-হত্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয় হলেও তা থেকে উদ্ভূত এক জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্রেফ মানবিক কারণে আশ্রয় দিতে বাধ্য হয়েছে বাংলাদেশ। ’৭১-এ প্রায় একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয়ে ১ কোটি বাঙালিকে আশ্রয় নিতে হয়েছিল ভারতে এবং সে কারণে শরণার্থীদের দুঃখ-বেদনার অনুভূতি কেমন তা বাংলাদেশবাসীর জানা। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে এবং বিশ্বমানবতার তাগিদেই আমাদের বহন করতে হচ্ছে অপ্রত্যাশিত ও অনাকাক্সিক্ষত বর্তমান বোঝা। কিন্তু অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনায় এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীকে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস নির্বাহ করা আমাদের জন্য এক কঠিন ও দুরূহ কাজ। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এ দাবি উত্থাপন করা খুবই সঙ্গত যে, সমস্যাটিকে সমষ্টিগতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আর তাই প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ ও এর সদস্য দেশগুলোর প্রতি ওপরের পাঁচ দফা পেশ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি একই সঙ্গে যেসব দেশ শরণার্থী সংকটে রয়েছে, তাদের এবং শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মী হয়ে সব ধরনের শরণার্থী সংকট সমাধানে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মানবিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। বস্তুত শরণার্থী সমস্যাটি এখন এক বড় আন্তর্জাতিক ইস্যু। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান বিশ্বের সব অঞ্চলের সব শরণার্থীর নিজ দেশে স্বাভাবিক জীবনের নিশ্চয়তা বিধানের ক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখবে বলা যায়।

কফি আনান কমিশনের সুপারিশমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বস্তুত এটাই রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভবও হয় যদি, সেটা হবে আশু সমাধান। কিন্তু এ জাতিগোষ্ঠীর প্রতি মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে আবারও দেখা দিতে পারে একই পরিস্থিতি। বস্তুত কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত রয়েছে রাখাইন রাজ্যের স্থায়ী শান্তি।

Share Button


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ