এস.এম সহিদুল ইসলাম লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল(ডিগ্রী) মাদরাসায় প্রতিষ্ঠান প্রধান নোটিশ করার পর ও প্রাইভেট বন্ধ করা হচ্ছেনা। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রনালয় কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট পড়ানো, নোট বই, গাইড নিষিদ্ধের খসরা গ্রহন করা হলেও এ মাদরাসায় এর কোন প্রভাব পড়েনি। নানা কৌশলে তাদের এই ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ওই মাদরাসায় জমজমাট হয়ে উঠেছে প্রাইভেট বাণিজ্য। শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করছেন শিক্ষকরা। সরকারের সব সুযোগ সুবিধা ভোগ করার পর ও শিক্ষকরা নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে যত্নবান না থেকে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করাচ্ছেন নিজেদের পরিচালিত প্রাইভেটে। সরকারের প্রদত্ত নিয়ম ভঙ্গ করে যাচ্ছেন পদে পদে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেওয়ার চেয়ে অর্থ উপার্জনকেই প্রাধান্য দিচ্ছে। শিক্ষকদের সীমাহীন লোভের কারণে প্রাইভেট ব্যবসার লাগামহীন প্রসার ঘটেছে । শিক্ষকরূপী এসব প্রাইভেট ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি সব শ্রেণী-পেশার শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। নীতিমালা অনুসারে কোন শিক্ষক তাঁর নিজ প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেননা। প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানের একসাথে সর্বোচ্চ ১০ জন শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট পড়াতে পারবেন। অভিভাবকদের অনুরোধে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের ভিতরেই অল্প ফিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানের অনুমতিক্রমে অতিরিক্ত ক্লাস করানো যাবে।এই নীতিমালা না মানলে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা আছে। যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও স্থগিত বা বাতিল, সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে সাময়িক বা স্থায়ী বরখাস্ত, পেশাগত অসদাচরণের কারণে শৃঙ্খলা আপীল বিধি অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া,বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি ও পাঠদান অনুমতি বাতিল
ইত্যাদি। কিন্তু এসব আইন বা নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অত্র মাদরাসার কিছু সংখ্যক শিক্ষক ক্লাসে দায়সারাভাবে পড়িয়ে ছুটছেন প্রাইভেট পড়াতে।
২৫ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে চলবলা দলগ্রাম একরামিয়া ফাজিল(ডিগ্রী)মাদরাসা গিয়ে দেখা যায়,ওই মাদরাসার ৪ জন শিক্ষক সকাল ৮ টা হইতে সকাল ১০টা পযন্ত ওই মাদরাসা কক্ষে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। এ মাদরাসায় শিক্ষকের সংখ্যা ২১ জন গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপস্থিত ছিল ১৩ জন। নৈমিত্তিক ছুটিতে ছিল ৫ জন। বাকী ৩ জন ছুটি ছাড়াই অনুপস্থিত ছিলেন। ২০১৭ সালে দাখিল পরীক্ষার্থী ছিলেন ২৫ জন পাশ করেছে ১৩ জন, ফেল করেছে ১২ জন। ২০১৬ সালে জেডিসি পরীক্ষার্থী ছিল ৫২ জন, পাশ করেছে ৪২ জন,ফেল করেছে ১০ জন।
পরীক্ষায় অধিক নাম্বার বা পাশ করানোর আশা দেয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাদরাসা শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট করতে বাধ্য হচ্ছে বলে জানা গেছে। শিক্ষকরা মাসের মধ্যে দশ দিন পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৫শত টাকা করে জনপ্রতি আদায় করে নিচ্ছেন বলে এক ছাত্র জানায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক জানান,কোচিং বা প্রাইভেট এর কারণে ছাত্রছাত্রীদের বাড়িতে লেখাপড়ার কোন সময়ই পায়না। সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রাইভেটে,তারপর মাদরাসা।
এ বিষয় অত্র প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা মইনুল হাসান ক্বারীম বলেন, প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট বন্ধের জন্য আমি নোটিশ করেছিলাম। সামনে পরীক্ষা তাই শিক্ষকরা একটু পড়াচ্ছেন।
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা: আফরোজা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই, তবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট বন্ধের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছিল।