নারীদের গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাদশাহ সালমানের ঘোষণার পর সৌদি আরবে উল্লাস শুরু হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে- সৌদি নারীদের যাতায়াতের জন্য যে লাখ লাখ অভিবাসী চালক সৌদি আরবে চাকরি করছেন, তাদের কি হবে?
এমন চালকের সংখ্যা আট লাখ, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই বাংলাদেশি।
সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার পর এসব চালকের কর্মসংস্থান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সঠিক হিসাব পাওয়া না গেলেও ঢাকায় শীর্ষ জনসম্পদ রফতানিকারক আলী হায়দার চৌধুরী বিবিসিকে বলেন, গৃহকর্মে কাজের জন্য নতুন করে লোক নিয়োগের ভিসা দেয়া শুরুর পর গত দেড় বছরে বাংলাদেশ থেকে অন্তত ৫০ হাজার লোক গাড়িচালকের চাকরি নিয়ে সৌদি আরব গেছেন।
জেদ্দায় রেন্ট-এ-কারের ব্যবসার সঙ্গে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাজ করছেন বাহার বকুল। তিনি বিবিসিকে বলেন, প্রচুর বাংলাদেশিকে তিনি চেনেন, যারা বিভিন্ন সৌদি পরিবারে গাড়িচালকের কাজ করেন।
তিনি বলেন, অনেক বাড়িতেই কয়েকজন ড্রাইভার কাজ করেন। মনে করেন, তিনটি বাচ্চা তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে যায়, তাদের তিনজনের জন্যই হয়তো তিনজন ড্রাইভার। অধিকাংশই বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান বা শ্রীলংকার।
নারীরা গাড়ি চালানো শুরু করলে তাদের চাকরি কি হুমকিতে পড়তে পারে? বাহার বকুল বলেন, এখনই চট করে বলা মুশকিল। একজন ড্রাইভারের বেতন কম করে ১৫০০ রিয়াল। মহিলারা গাড়ি চালাতে পারলে হয়তো অনেক পরিবার পয়সা বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারেন।
বকুল বলেন, সৌদি আরবে বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন কাজে মহিলাদের দেখা যাচ্ছে, যেটি আগে দেখাই যেত না। সুপারমার্কেটগুলোতেও এখন মেয়েরা কাজ করছেন। গাড়ি চালাতেও দেখব হয়তো কিছু দিন পর।
২২ বছর সৌদি আরবে ছিলেন জনসম্পদ রফতানিকারক আলী হায়দার চৌধুরী। তিনি মনে করছেন, গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও অদূর ভবিষ্যতে খুব কম সৌদি নারীই হয়তো গাড়ি চালাবেন।
তিনি বলেন, আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সৌদি সমাজ এতটাই রক্ষণশীল যে, তাদের কতজন গাড়ি চালাবেন, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। পশ্চিমা দেশে গিয়ে পড়াশোনা করে আসা কিছু হয়তো গাড়ি চালাবেন, কিন্তু সেই সংখ্যা খুব বেশি নয়।
উদাহরণ হিসেবে কাতার ও কুয়েতের কথা উল্লেখ করে আলী হায়দার বলেন, কুয়েত-কাতারেও মেয়েরা গাড়ি চালাতে পারে। কিন্তু তারপরও ওই দুই দেশে অনেকেই বাসাবাড়িতে ড্রাইভারের কাজ নিয়ে যাচ্ছে।
তার মতে, কত সৌদি নারী চালকের পয়সা বাঁচাতে গাড়ি চালাবেন, তা অনেকটাই নির্ভর করবে সৌদি অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির ওপর।
উল্লেখ্য, সৌদি আরবে পশ্চিমা শিক্ষিত নারীরা অনেক দিন ধরেই গাড়ি চালানোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার দাবি করে আসছিলেন। পশ্চিমা মানবাধিকার সংগঠনগুলোও তাদের এ দাবি নিয়ে সোচ্চার ছিল।
অবশেষে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয়ার বিষয়ে ডিক্রি জারি করেন সৌদি বাদশাহ সালমান।
মানাল আল শরিফ নামে যে সৌদি নারী আইন ভেঙে গাড়ি চালানোর জন্য কারাগারে গিয়েছিলেন, তিনি টুইট করেছেন- সৌদি আরব চিরদিনের জন্য বদলে গেছে।