লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে প্রতিদ্বন্দ্বী আধা সামরিক দুই বাহিনীর সংঘর্ষে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত হয়েছেন।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) এই সংঘর্ষ হয় বলে সেখানকার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এই সংঘর্ষের কারণে সেখানকার বাসিন্দারা ঘর থেকে বের হতে পারেনি।
ত্রিপোলির এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছরে ত্রিপোলিতে এটিই সবচেয়ে মারাত্মক সংঘর্ষ হয়েছে। কেঁপে উঠেছে ত্রিপোলি। সেখানে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। তবে তারা ওই দুই বাহিনীর সদস্য নাকি বেসামরিক লোক তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, সোমবার গভীর রাতে ৪৪৪ ব্রিগেড এবং স্পেশাল ডিটারেন্স ফোর্সের মিলিশিয়াদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। মঙ্গলবার সকালে ৪৪৪ ব্রিগেডের একজন সিনিয়র কমান্ডার মাহমুদ হামজাকে ত্রিপোলির একটি বিমানবন্দরে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের সস্যরা আটক করার পর থেকে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বুধবার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানায়, এই সংঘর্ষে ১০০ জনেরও বেশি লোক আহত হয়েছে। জরুরি সেবা দিতে লিবিয়ার ইমার্জেন্সি মেডিসিন অ্যান্ড সাপোর্ট সেন্টার চালু করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে কতজন আধাসামরিক দুই বাহিনীর সদস্য আর কতজন বেসামরিক লোক তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্টের সাথে যোগাযোগ করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের সময় অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি সেবাদানকারীদের প্রাথমিকভাবে শহরের দক্ষিণে এবং যেসব এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে সেসব এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দিতে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।একই সাথে কাছের হাসপাতালগুলোতে রক্ত পৌঁছে দেয়ার জন্য অনুরোধও জানায়।
এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রির একটি সংগঠন ওপিএসজিগ্রুপ জানায়, সংঘর্ষের কারণে সোমবার গভীর রাতে ত্রিপোলি থেকে বিপুল সংখ্যক উড়োজাহাজ বিমানবন্দর ছেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলো নিকটবর্তী শহর মিসরাতাতে অবতরণ করেছে।
লিবিয়ায় প্রায় এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর কয়েক মাস তুলনামূলক শান্তির পর এই সংঘর্ষ হলো। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী শসস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক অচলাবস্থার সৃষ্টি করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ত্রিপোলিতে সহিংসতার বেশ কয়েকটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে দীর্ঘস্থায়ী এ বিভাজন। যদিও বেশিরভাগই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শেষ হয়ে গেছে।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে লিবিয়ায় জাতিসঙ্ঘের মিশন বলেছে, তারা নিরাপত্তা লঙ্ঘন ও সাময়িক প্রশমনের ঘটনা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে এবং চলমান সংঘর্ষের অবিলম্বে সমাপ্তির আহ্বানও জানিয়েছে।
মঙ্গলবার পৃথক বিবৃতিতে লিবিয়ার উভয় পক্ষ সংঘর্ষের নিন্দা জানায়। পূর্বাঞ্চলীয় শহর বেনগাজিতে অবস্থিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভস সহিংসতার জন্য তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ত্রিপোলি-ভিত্তিক সরকারকে দায়ী করেছে।
লিবিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ও ব্রিটিশ দূতাবাস সহিংসতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি প্রকাশ করেছে। লিবিয়ায় সাম্প্রতিক স্থিতিশীলতা এবং নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে তাদের অর্জন ধরে রাখতে সম্ভাব্য সংঘর্ষ এড়াতে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তেল সমৃদ্ধ দেশটি ২০১৪ সাল থেকে পূর্ব ও পশ্চিমে প্রশাসনিকভাবে বিভক্ত হয়েছে। প্রতিটি অংশে সুসংগঠিত শসস্ত্র বাহিনী রয়েছে এবং বিভিন্ন বিদেশী সরকার তাদের সমর্থন করেছে। সূত্র : ইউএনবি