মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের হত্যা-নির্যাতনের মুখে দেশছাড়া করার পর তাদের বাড়িঘরে রাখাইনসহ অন্য বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার।
জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জমি দখল করতে মিয়ানমারের আগুনে পুড়ে যাওয়ার আইন ব্যবহারের ঘোষণা দিয়েছেন সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আই।
এই ঘোষণা থেকে স্পষ্ট যে, গত ২৫ আগস্ট সংঘাত শুরু হওয়ার পর কেন রোহিঙ্গাদের গ্রামের পর গ্রামে আগুন দেয়া হয়েছে।
হংকংভিত্তিক এশিয়া টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে বর্তমানে ৭০ ব্যাটালিয়নেরও বেশি মিয়ানমার সেনা অভিযান চালাচ্ছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের ধারণা, রাখাইনে সব মিলিয়ে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার সেনা অবস্থান করছে।
যদিও রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দমন করার জন্য সেনা অভিযান চালানোর দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু রাখাইনের মুসলিমপ্রধান তিনটি টাউনশিপ (জেলা) জনমিতি বদলে দেয়ার জন্য এত বিপুলসংখ্যক সেনাকে মোতায়েন করা হয়েছে।
ইয়াংগুনের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এসব টাউনশিপে ৬০ ভাগ রোহিঙ্গা মুসলিম ও ৪০ ভাগ বৌদ্ধ রাখাইন বসবাস করত। কিন্তু মিয়ানমার সেনা এখন বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার রাখাইন ও অন্য বৌদ্ধদের এনে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে পুনর্বাসন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
সেনাবাহিনীর এই পরিকল্পনার বিষয়টি সমাজকল্যাণ, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী উইন মিয়াত আইয়ের বক্তব্যে উঠে এসেছে।
বুধবার রাখাইনের রাজধানী সিট্টুয়েতে আয়োজিত এক বৈঠকে তিনি রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো সরকারের দখলে নেয়ার ঘোষণা দেন।
‘গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ নামের পত্রিকার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।
উইন আই জানান, দেশের আইনানুযায়ী পুড়ে যাওয়া জমি সরকারের দখলে যায়। সরকার চাইলে সেগুলোতে আবার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাবে।
গত ২৫ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী পুলিশের সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে অভিযান চালাচ্ছে দেশটির সেনাবাহিনী।
অভিযানকালে, রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা। একইসঙ্গে রোহিঙ্গাদের ধর্ষণ, গণহত্যা ও নির্যাতন করা হয়। এ হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে এরই মধ্যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে চার লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে—এমন একাধিক স্যাটেলাইট ছবি কয়েকবার প্রকাশ করে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও একাধিক ছবি প্রকাশ করে। যেখানে দেখানো হয় রাখাইনের উত্তরে অন্তত ৪০০ গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।
বুধবার রয়টার্সে বেশ কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়। ছবিগুলোতে দেখা যায়, রাখাইনের মংডুতে একাধিক ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে ঘরের কোনো চিহ্ন নেই। শুধু পুড়ে যাওয়া গাছ দাঁড়িয়ে আছে। একাধিক স্থানে একই অবস্থা।