বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ নিয়ে সঠিক কোনো আগাম সতর্কতা দিতে পারেনি কক্সবাজারস্থ আবহাওয়া অফিস। ফলে ঘূর্ণিঝড়টি নিকটতম দূরত্বে এগিয়ে এলেও তথ্য বিভ্রাটের কারণে কোনো প্রকার প্রস্তুতি নিতে পারেননি জেলাবাসী। আর এর মধ্যে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়টি আছড়ে পড়েছে কক্সবাজার উপকূলে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, কক্সবাজার এলাকা ছিল ৬নং বিপদ সঙ্কেতের আওতায় আর ঘূর্ণিঝড় অতিক্রম করার পূর্বাভাস ছিল চট্টগ্রামসহ অন্যান্য জেলার উপর দিয়ে। কিন্তু আগাম সতর্কবার্তা ছাড়াই মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পরপর কক্সবাজার উপকূল অতিক্রম শুরু করে ঘূণিঝড় হামুন। কিন্তু বাতাসের গতিবেগ ছিল ১০নং মহাবিপদ সঙ্কেতের মত। এতে প্রবল বাতাসের তাণ্ডবে বড় বড় গাছ উপড়ে পড়ে জেলা শহরের বিভিন্ন সড়কে যান ও জন চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
একই সময় প্রবল ঝড়ো হাওয়া আঘাত হানে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায়। ঘূর্ণিঝড়ের সময় ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে। তাদের মধ্যে একজন পৌরসভা এলাকায়, একজন মহেশখালী ও একজন চকরিয়ায় মারা গেছেন।
এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ায় দেয়াল ও গাছ চাপা পড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ঝড়ে মঙ্গলবার রাতে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়তলী এলাকায় আধা পাকা ঘরের দেয়াল চাপা পড়ে আবদুল খালেক (৪০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তিনি পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।
মহেশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, বড় মহেশখালী ইউনিয়নে রাতে ঘরের সামনের গাছ চাপা পড়ে হারাধন দে (৪৫) নামে একজন মারা গেছেন। তিনি মাথায় আঘাত পান, হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়।
জানা গেছে, চকরিয়াতেও গাছ চাপায় একজনের মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে লণ্ডভণ্ড হয়েছে কক্সবাজার শহরের ঘরবাড়ি ও গাছপালাসহ বহু স্থাপনা। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে হামুন উপকূল অতিক্রম শুরু করার পর প্রাথমিক আঘাতে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বিপুল সংখ্যক বাড়িঘর ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যায়।
পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা বশির আহমদ জানান, সন্ধ্যার পর থেকে বাতাসের গতি ছিল অনেক বেশি। সে সময়ে অনেক ঘরবাড়ি উড়ে গেছে। বড় বড় অনেক গাছও দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, ভেঙে উড়ে গেছে দোকানপাটও।
অচল কক্সবাজার রাডার স্টেশন
গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়সহ নানা দুর্যোগের আগাম বার্তা সংগ্রহে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা কক্সবাজারের রাডার স্টেশনটি অচল হয়ে পড়েছে। যান্ত্রিক ক্রটির কারণে এটি অচল থাকার কথা মঙ্গলবার দুপুরে স্বীকার করেছেন আবহাওয়া অধিদফতর কক্সবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি আবহাওয়াবিদ মো. ইমাম উদ্দিন।
তিনি জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার স্টেশনের রাডারটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অচল রয়েছে। যেটির মাধ্যমে কক্সবাজার স্টেশন থেকে চার শ’ কিলোমিটার দূরবর্তী সমুদ্র এলাকার আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি যান্ত্রিক ক্রটির কারণে এটি অচল থাকায় আবহাওয়ার সার্বিক তথ্যাদি যথাযথ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপর দেশের অন্য রাডার স্টেশনগুলো সচল থাকায় আবহাওয়ার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রকৃত তথ্যাদি পাওয়া যাচ্ছে। কক্সবাজারের রাডারটি সচল থাকলে আরো প্রকৃত তথ্যাদি সরবরাহ করা সম্ভব হতো।
জেলা প্রশাসক মোঃ শাহীন ইমরান বলেন, ঘূণিঝড়ের কারণে এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন।
দূর্যোগের কারণে অন্য ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করা সম্ভব হয়নি জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরো বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমান পরে জানানো হবে।